সেবা ডেস্ক: রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট এই তিনটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের আগামী ৩০ জুলাই ভোট গ্রহণের দিন নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন। স্থানীয় নির্বাচন হলেও দলীয় প্রতীকে সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ফলে সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রার্থিতা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নানা হিসাব-নিকাশ ও সমীকরণ চলছে।
তিন সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি উভয় দলের পক্ষ থেকেই একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন প্রাপ্তির জন্য চেষ্টা তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে দলের একাধিক প্রার্থীর মনোনয়ন পাওয়ার দাবির পাশাপাশি জামায়াত ইসলাম কে নিয়ে বিপাকে পড়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি।
নির্বাচন কমিশনে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল হওয়ায় দলীয় প্রতীক নিয়ে তারা নির্বাচন করতে পারবে না। এ অবস্থায় সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির ওপর চাপ প্রয়োগ করে বিএনপির দলীয় প্রতীক ধানের শীষ নিয়েই নির্বাচন করতে চায় জামায়াত। গাজীপুর এবং খুলনাতে জামায়াত বিএনপিকে ছাড় দিলেও উক্ত তিন সিটিতে নিজেদের প্রার্থীকে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচনে দেখতে চায় বলে জামায়াত ইসলামের একধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। এই তিন সিটিতে অলিখিতভাবে জামায়াতের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে মূলত আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলাদেশের রাজনীতিতে নিজেদের অস্তিত্বের জানান দিতে চায় জামায়াত।
সিলেটে বিএনপির একাধিক প্রার্থী থাকলেও শেষ পর্যন্ত বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীই দলের মনোনয়ন পাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। দলের বিদ্রোহী সমস্যা কাটলেও জোটের সম্পর্ক নিয়ে সমস্যায় রয়েছে দলটি। কারণ ২০ দলীয় জোটের শরিক দল জামায়াত সিলেটে মেয়র পদে নিজেদের প্রার্থী দিতে চায়। এরই মধ্যে জামায়াত সিলেট মহানগর শাখার আমির এহসানুল মাহবুব জুবায়ের নির্বাচনী প্রচার শুরু করেছেন।
নিজেদের প্রার্থী নিশ্চিত করতে শীর্ষপর্যায়ে আলোচনা করা হচ্ছে বলেও জানা গেছে। মহানগর জামায়াতের আমির এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন জায়গায় বিএনপিকে ছাড় দিয়েছি। এখন সিলেটে মেয়র পদে তাদের সমর্থন চাচ্ছি। আশা করছি আগামী নির্বাচনে জোট থেকে জামায়াতের প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া হবে।’
জামায়াতে ইসলামী ইতোমধ্যেই বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তাদের মেয়র প্রার্থী ঘোষণা করেছে। জামায়াতের প্রার্থী হচ্ছেন মহানগর জামায়াতের আমির মুয়াযযম হোসাইন হেলাল। তিনি বরিশাল সহ সারা দেশে বিএনপির আন্দোলনে জামায়াতের অবদানের কথা বলতে গিয়ে বলেন, ‘২০ দলীয় জোট শুধু সরকার বিরোধী কর্মসূচি দিয়েছে। সেই কর্মসূচি মাঠপর্যায়ে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা বাস্তবায়ন করেছে। সেই কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে সারা দেশের মতো বরিশালের নেতাকর্মীরা পুলিশের নির্যাতনের শিকার হয়েছে। সরকার বিরোধী আন্দোলনে নেতাকর্মীদের এত ত্যাগ, এখন তারা পছন্দের প্রতিনিধি পাবে না, সেটা কি হয়? এসব বিবেচনায় আমরা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরিশালের তিনটি আসনে এবং ৩০ জুলাইয়ের সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চাই। সেভাবেই আমরা প্রস্তুত।’
এদিকে বিএনপির মনোনয়ন পেতে চেষ্টা তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন বর্তমান মেয়র আহসান হাবিব কামাল, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিন, বরিশাল (দক্ষিণ) জেলা বিএনপির সভাপতি এবায়েদুল হক। এমন পরিস্থিতিতে নিজেদের একাধিক প্রার্থী সহ জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী নিয়ে জটিলতায় পড়েছে বিএনপি।
রাজশাহীতে বর্তমান মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল ছাড়াও দল থেকে মনোনয়ন পেতে চান সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনু।
এদিকে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন হারানো জামায়াত এরই মধ্যে প্রার্থিতা ঘোষণা করেছে। জামায়াতের মহানগর সেক্রেটারি সিদ্দিক হোসেন স্বতন্ত্র হিসেবে লড়বেন বলে ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন। রাজশাহীতে জামায়াতের ভোট আছে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক।
দলীয় সূত্র মতে, ২০১৬ সালের ২৬ ডিসেম্বর ১২ সদস্যের রাজশাহী মহানগর বিএনপি কমিটি ঘোষণা হওয়ার পর সভাপতি বুলবুলকে নিয়ে প্রথমে আপত্তি তোলে মিনুর সমর্থকরা। ওই কমিটি গঠনের পর মহানগর বিএনপি অফিসে ভাঙচুর, তালা দেওয়াসহ নানা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। তখন থেকে চলমান বিরোধ মেটেনি এখনো। গত কয়েক দিন আগে খালেদা জিয়ার মুক্তি কামনায় অনুষ্ঠিত মানববন্ধনের মঞ্চেও মাইক ছোড়াছুড়ির ঘটনা ঘটে। বিএনপির ভেতর মিনুর সঙ্গে বুলবুলের দ্বন্দ্ব এবং জামায়াতের প্রার্থী ঘোষণা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে বিএনপির শীর্ষ নেতারা।
তিন সিটিতে দলের ভেতর নিজেদের প্রার্থীদের দ্বন্দ্বের পাশাপাশি জামায়াতকে নিয়ে চূড়ান্ত বিপাকে পড়েছে বিএনপি। এদিকে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারামুক্তি না হওয়া পর্যন্ত কোনো সুনির্দিষ্ট কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারছেন না কেন্দ্রীয় নেতারা।
এখন দেখার অপেক্ষা তিন সিটির নির্বাচনে জামায়াতকে কিভাবে সামাল দেয় বিএনপি।