ইসলামপুরে জয়ের আশা আ. লীগ বিএনপির পূর্নঃদ্ধার

S M Ashraful Azom
0
ইসলামপুরে জয়ের আশা আ. লীগ বিএনপির পূর্নঃদ্ধার
লিয়াকত হোসাইন লায়ন,ইসলামপুর প্রতিনিধি ॥ জামালপুর-২ (ইসলামপুর) আসনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন। গণসংযোগ ও জনগণের দ্বারে দ্বারে প্রার্থীরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। বিভিন্ন স্থানে ডিজিটাল ব্যানার, সাইনবোর্ড ও পোস্টার লাগিয়ে ভোটারদের নজর কাড়ার চেষ্টায় রয়েছে। সাংগঠনিকভাবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির অবস্থানোর মধ্যে দিয়ে জাতীয় পার্টির সম্ভাব্য প্রার্থী নিয়ে আলোচনা রয়েছে।

স্বাধীনতার পর সংসদ নির্বাচনে এ আসনে সবচেয়ে বেশি আওয়ামী লীগের প্রার্থী আট বার, বিএনপির একবার এবং জাতীয় পার্টি (এরশাদ) একবার বিজয়ী হয়েছেন। যার কারণে এ আসনে এখনো আওয়ামীলীগের আধিপত্যই বেশি বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকমহল।

জানা গেছে, আওয়ামী লীগ জাতীয় সংসদের ১৩৯ নম্বর নির্বাচনী এলাকায় বর্তমান সংসদ সদস্য ইসলামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফরিদুল হক খান দুলাল। এ ছাড়া এখানে আছেন সংরক্ষিত আসনের মহিলা সংসদ সদস্য মাহজাবিন খালেদ বেবী। তিনি মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল খালেদ মোশারফের মেয়ে।

এ আসনে একাদশ সংসদ নির্বাচনে দুই সংসদ সদস্যই আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী। এ ছাড়া ঢাকা বিমানবন্দর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জামালপুর জেলা শাখার উপদেষ্টা শাহজাহান আলী মন্ডল, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সাবেক পৌর মেয়র জিয়াউল হক জিয়া,কৃর্ষিবিদ মঞ্জুরুল মোর্শেদ হ্যাপী দলের মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে।

বর্তমান সংসদ সদস্য ফরিদুল হক খান দুলাল তিনি এই উপজেলায় একবার উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে জনসেবার কাজে নিয়োজিত ছিলেন। তারপর থেকে ভয়াল যমুনানদীর গ্রাস থেকে ইসলামপুর বাসীকে রক্ষা করতে নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধ কমিটি গঠন করেন। সে সময় ২১ এপ্রিল ২০০৮ইং তারিখে উপজেলা নির্বাহী কমকর্তার মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা নিকট যমুনা ভাঙ্গন থেকে ইসলামপুর ও দেওয়ানগঞ্জ উপজেলাকে রক্ষার লক্ষে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য আবেদন করেন। সে থেকে তিনি আর বসে থাকেননি। ইসলামপুরকে আধুনিক ইসলামপুর গড়ার স্বপ্নে তিনি বিভোর ছিলেন। প্রতি মুহুর্তে অসহায় মানুষের পাশে ছুটে গিয়ে পাশে দাড়িয়েছেন। সেই থেকে তিনি আর পিছু হটেননি। ১৩৯ নম্বর নির্বাচনী এলাকায় দুইবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই ইসলামপুর আনাচে কানাচে উন্নয়নের জোয়ার বইয়ে দিয়েছেন।

ইসলামপুর উপজেলা ফুটানি বাজার থেকে উপজেলার নোয়ারপাড়া ইউনিয়নের কাঠমা পর্যন্ত নদী শাসন করতে সক্ষম হয়েছেন। এতে যমুনা নদীভাঙন রোধে ৪৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ে যমুনার পূর্ব তীর সংরক্ষণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করায় ইসলামপুরের পশ্চিমাঞ্চলের ভাঙনকবলিত লক্ষাধিক মানুষের কান্না থেমেছে।

এই আসনে তিনি দুইবারের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে রাস্তা, ব্রহ্মপুত্র নদের উপর বৃহত্তম দুইটি ব্রীজ, তৈরি করে চরকে পূর্বাঞ্চলে পরিনত করেছে। এতে চরাঞ্চলবাসীর জীবন যাত্রার মান পরিবর্তন সহ সকল সেবা মানুষের দৌড়গোড়ায় গিয়ে পৌছেছে। এছাড়াও তিনি উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন ও পৌরসভায় রাস্তা ,ড্রেন,কালভার্ট,স্কুল,কলেজ,মসজিদ,মন্দির,বেকার ভাতা সহ বিভিন্ন ভাতা প্রদান সহ ইনিষ্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি স্থাপন করে কর্মবীর হিসেবে খ্যাত হয়েছেন।

তিনি বলেন ‘ইসলামপুরের অসহায় মানুষের কল্যাণ করার চিন্তা নিয়েই রাজনীতির মাঠে নেমেছি। ইসলামপুরের প্রতিটি রাস্তা পাকাকরন করেছি। শিক্ষাখাত,ঘরেঘরে বিদ্যৎ পৌছে দিয়েছে। উপজেলাবাসীর জন্য প্রতিনিয়ন চিন্তা রয়েছে,তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন না করে ঘরে ফেরার কোনো অভিলাষ আমার নেই।

নির্বাচনী এলাকায় অবকাঠামো ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নানা উন্নয়ন কর্মকান্ডের চিত্র তুলে ধরে তিনি আরো বলেন, ‘বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইসলামপুরবাসীকে দেওয়া প্রতিশ্রুত শতভাগ পূরণের চেষ্টা করেছি।

সংরক্ষিত মহিলা সংসদ সদস্য মাহজাবিন খালেদ, ‘তার পরিবারের সদস্যরা বহু আগে থেকেই ইসলামপুরবাসীর কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছেন। তার পিতা বিগ্রেডিয়ার খালেদ মোশাররফ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্থানী হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। সেক্টর কমান্ডার হিসেবে যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়ে দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধ করে বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছেন।

তার ‘আমার চাচা সাবেক ভূমি প্রতিমন্ত্রী প্রয়াত জননেতা রাশেদ মোশারফ এই আসন থেকে ছয়বার এমপি নির্বাচিত হয়ে একাধারে ৩০ বছর ইসলামপুরবাসীর কল্যাণে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন।

সেই সুবাদে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা তাকে সংরক্ষিত আসনের এমপি বানিয়ে জামালপুর তথা ইসলামপুরবাসীর কল্যাণে কাজ করার সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছেন।

তিনি পিতা খালেদ মোশাররফ এবং চাচা রাশেদ মোশারফের যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে আগামী নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত করতে গ্রামঞ্চল গুরে উঠান বৈঠক করে জননেত্রী শেখ হাসিনার সালাম পৌঁছে দিয়ে বর্তমান সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ড তুলে ধরে ভোটারদের নিকট দোয়া প্রার্থনা করছেন।

এছাড়াও জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামন্ডলী সদস্য শাহজাহান আলী মন্ডল দীর্ঘদিন ধরে ইসলামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রবীণ, ত্যাগী, বঞ্চিত নেতাকর্মীসহ যমুনা নদীভাঙনের শিকার অসংখ্য অসহায় মানুষের নানা সমস্যায় সহায়তা করে আসছেন।

এ জন্য তিনি ইসলামপুরের বেশির ভাগ আওয়ামী লীগ সমর্থক পরিবারে দলের একজন নিবেদিত মানুষ হিসেবে গড়ে উঠেছেন। আগামী সংসদ নির্বাচনে শাহজাহান আলী মন্ডল ইসলামপুর আসনে নৌকা প্রতীকের মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন।

এ আসনে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য আরেক প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি জিয়াউল হক জিয়া, তিনি ‘ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে প্রবেশ করে কলেজ ছাত্রসংসদের সহসভাপতি (ভিপি) ছিলাম এবং দীর্ঘদিন উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছি। এ ছাড়া পাঁচ বছর ইসলামপুর পৌর মেয়র এবং দীর্ঘদিন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতির দায়িত্ব ছিলেন।

মঞ্জুরুল মোর্শেদ হ্যাপী নৌকা প্রতিক প্রত্যাশি হয়ে তিনিও উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে ব্যানার ফেষ্টুন লাগিয়েছেন। প্রতিটি এলাকায় চা চক্র করে যাচ্ছেন বলে জানাগেছে।

এদিকে বিএনপি প্রার্থীর সাবেক সংসদ সদস্য ও উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি সুলতান মাহমুদ বাবু,সাবেক মন্ত্রী পরিষদ সচিব ও বিএনপি’র উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য এএসএম আঃ হালিম। সাবেক এমপি সুলতান মাহমুদ বাবু দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় রয়েছেন তিনি বিএনপির দুর্দিনেও দলীয় নেতাকর্মীদের পাশে থেকে দলকে সুসংগঠিত রেখেছেন। এতে বিএনপির বেশির ভাগ নেতাকর্মী তাঁকে ঘিরেই দলীয় কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে। বিগত জোট সরকারের আমলে তিনি সংসদ সদস্য হয়ে ইসলামপুর উপজেলার পূর্বাঞ্চলের চারটি ইউনিয়নে রাস্তাঘাট, ব্রীজ-কালভার্ট ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন করায় তাঁর খ্যাতি রয়েছে।

বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য সুলতান মাহমুদ বাবু বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে ইসলামপুরে বিএনপির রাজনীতি সক্রিয় রয়েছি।বিএনপির দুর্দিনেও দলীয় নেতাকর্মীদের পাশে থেকে জীবন বাজি রেখে দলকে সুসংগঠিত রেখেছি। ইসলামপুরে বিএনপির রাজনীতিতে আমার কোনো দলীয় প্রতিদ›িড নেই। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা সাবেক মন্ত্রিপরিষদসচিব এ এস এম আব্দুল হালিম একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের মনোনয়ন চাইবেন বলে আলোচনা রয়েছে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আব্দুল হালিম ও সুলতান মাহমুদ বাবুকে কেন্দ্র করে এলাকায় বিএনপি মৌন গ্রুপে বিভক্ত রয়েছে।বিগত দিনে দুটি পক্ষের মধ্যে কয়েক দফা সংঘর্ষ হওয়ায় ঘটনাও ঘটেছে।

অন্যদিকে জাতীয় পার্টি আহবায়ক মোস্তফা আল মাহমুদ বলেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে মহাজোট হলে দলটি এ আসনটি চাইবে। এই আসন আমাদের দিলে আমরা শতভাগ আশাবাদি জয়লাভ করবো।

উপজেলা জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা বলেন, আমাদের উপজেলায় শক্তিশালী সম্ভাব্য প্রার্থী মোস্তফা আল মাহমুদ সৎ, যোগ্য ও সুশিক্ষিত একজন মানুষ। তিনি সাংগঠনিক কার্যক্রমের পাশাপাশি যমুনা ও ব্রহ্মপুুত্র নদ-নদী বিধৌত অবহেলিত দুর্গম চরাঞ্চলের অসহায় মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছেন।

তিনি ইতিমধ্যে যমুনার দুর্গম মন্নিয়া চরাঞ্চলে প্রায় ৯কোটি টাকা ব্যয়ে সোলার মিনি গ্রীড বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করেছেন। চরাঞ্চলবাসীর জীবনমান প্রতিনিয়িতই পরিবর্তনের চেষ্টা করছেন তিনি।

মোস্তফা আল মাহমুদ বলেন, দলকে সুসংগঠিত করার পাশাপাশি যমুনা ও ব্রহ্মপুুত্র নদ-নদী বিধৌত অবহেলিত অসহায় মানুষ ও বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির জন্য সার্বক্ষণিক কাজ করছি। আমার নির্বাচনী এলাকা দেখতে পার্টির চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ৩নভেম্বর ইসলামপুরে জনসভা করেছেন। এ আসনে আমাকে লাঙ্গল প্রতীকে মনোনয়ন দিয়ে মহাজোটের প্রার্থী করবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন।



এছাড়াও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পাটিরও (সিপিবি) একজন সম্ভাব্য প্রর্থী নিয়ে আলোচনা রয়েছে। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান খান। তিনি জন্মসুত্রে ইসলামপুরের কুলকান্দি গ্রামের বাসিন্দা। তিনি আগামী সংসদ নির্বাচনে কাস্তে প্রতিকে নির্বাচন করবেন বলে একাধিক সুত্রে জানা গেছে।
⇘সংবাদদাতা: লিয়াকত হোসাইন লায়ন
ট্যাগস

Post a Comment

0Comments

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

Post a Comment (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top