টাঙ্গাইল-১ আসনে প্রচারণায় আওয়ামী লীগ, মাঠে নেই বিএনপি

S M Ashraful Azom
0
টাঙ্গাইল-১ আসনে প্রচারণায় আওয়ামী লীগ, মাঠে নেই বিএনপি
আনছার আলী, মধুপুর: টাঙ্গাইল-১ (মধুপুর-ধনবাড়ী) আসনটি নানা কারণে জেলার ৮টি আসনের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ। মধুপুরের শালবন, ধনবাড়ীর জমিদারবাড়ী, আদিবাসীদের নানা সংস্কৃতি আর রাণী ভবানীর স্মৃতি বিজড়িত লাল ও এঁটেল মাটির অঞ্চল মধুপুর ও ধনবাড়ী উপজেলা নিয়ে এ আসন গঠিত। 

আসন্ন ১১তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ইতিমধ্যে জেলার অন্যতম এ আসনে আ‘লীগ তথা মহাজোট প্রার্থী বাংলাদেশ আ‘লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক এমপির নৌকা প্রতীকের প্রচার-প্রচারণায় নেতা-কর্মিদের সরব তৎপরতা পরিলক্ষিত হলেও মাঠে দেখা মিলছে না বিএনপি প্রার্থী ও তার নেতাকর্মিদের। তৃণমূলের নেতাকর্মি ও ভোটারদের মাঝে এসব নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। 

রাস্তা-ঘাট, হাট-বাজর, চায়ের দোকান কিংবা যে কোন জনবহুল স্থানে আলোচনা একটাই আ‘লীগ প্রচার-প্রচারণা ও গণসংযোগ চালালেও নির্বাচনী মাঠে দেখা মিলছে না বিএনপিকে। আওয়ামী লীগের দুর্গখ্যাত এ আসনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ ৫ জন প্রার্থী আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন। 

তারা হলেন- আ‘লীগ তথা মহাজোটের প্রার্থী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক (নৌকা), বিএনপি তথা ঐক্যফ্রন্টের সরকার শহিদুল ইসলাম (ধানের শীষ), ন্যাশনাল পিপলস্ পার্টির (এনপিপি) মো. আবু মিল্লাত হোসন (আম), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ‘র মো. আশরাফ আলী (হাত পাখা) ও জাকের পার্টির মো. সালামত হোসাইন খান (গোলাপ ফুল)।

ময়মনসিংহ ও জামালপুর জেলার সীমান্তবর্তী টাঙ্গাইল-১ (মধুপুর-ধনবাড়ী) আসনটি রাজনৈতিকভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রাজনৈতিক বোদ্ধারা মনে করেন টাঙ্গাইলের রাজনৈতিক অঙ্গণ থেকে নানা কারণে প্রভাবশালী সিদ্দিক ও খান পরিবার কোনঠাসা হয়ে পড়ায় এখন টাঙ্গাইল জেলার রাজনীতি মূলত ধনবাড়ীর বাসিন্দা আ‘লীগের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য সাবেক মন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাকই দেখবাল করেন।

রাজনৈতিক তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, এ আসনে আওয়ামী লীগ ৬ বার বিজয়ী হয়। বাকি ৪ বার বিএনপিসহ অন্যান্য দল থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। 

১৯৭৩ সালে এ আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হন জাসদের আব্দুস সাত্তার, ৭৯ সালে বিএনপির সৈয়দ হাসান আলী চৌধুরী, ৮৬ সালে আওয়ামী লীগের ডা. শেখ নিজামুল ইসলাম, ৮৮ সালে জাপার খন্দকার আনোয়ারুল হক, ৯১ সালে আওয়ামী লীগের আবুল হাসান চৌধুরী কায়সার, ৯৬ সালে ১৫ ফেব্রেুয়ারীর নির্বাচনে বিএনপির ব্যারিষ্টার আব্দুস সালাম তালুকদার, ১২ জুনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আবুল হাসান চৌধুরী কায়সার এবং ২০০১, ২০০৮ ও ২০১৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক এমপি নির্বাচিত হন। পরিসংখানে এ আসনে আওয়ামী লীগ এগিয়ে এবং এখানে আওয়ামী লীগের বিশাল ভোট ব্যাংক রয়েছে। যে কারণে এ আসনে আওয়ামী লীগের বিজয়ী হওয়া খুবই সহজ।

ধনবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পৌর মেয়র খন্দকার মঞ্জুরুল ইসলাম তপন বলেন, যে যাই বলুক না কেন এ আসনে ড. মো. আব্দুর রাজ্জাকের কোন বিকল্প নাই। তিনি এক জন সৎ ও নিষ্ঠাবান রাজনীতিবিদ। 

এ বারের নির্বাচনেও আল্লাহর রহমতে বিপুল ভোটের ব্যবধানে তিনিই বিজয়ী হবেন। কেননা তার নেতৃত্বে মধুপুর-ধনবাড়ীতে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। তার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ধনবাড়ীতে ৫০ শয্যা হাসপাতাল, মডেল উপজেলা ও থানা ভবন, ফায়ার সার্ভিস, মধুপুরে ৭২ হাজার মে:টন ধারণ ক্ষমতা সম্পান্ন অত্যধুনিক সাইলোসহ বিভিন্ন উন্নয়ন মূলক কর্মকান্ড ড. মো. আব্দুর রাজ্জাকের পরিশ্রমের ফসল।

ধনবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ইকবাল হোসেন তালুকদার জানান, ড. রাজ্জাক এমপি-মন্ত্রী হয়ে ধনবাড়ী-মধুপুরে ব্যপক উন্নয়ন করেছেন। উন্নয়নের এ ধারা অব্যাহত রাখতে ড. রাজ্জাককে আবারও নৌকায় ভোট দিয়ে বিজয়ী করে মন্ত্রী হিসাবে দেখতে চাই।

মধুপুর উপজলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শরিফ আহমেদ নাসির বলেন- ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক মধুপুর ও ধনবাড়ীতে উন্নয়নমূলক কাজ করে এবং শান্তি প্রতিষ্ঠা করে ব্যাপক সুনাম ও জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন। এলাকার মানুষ এখন তাকে সততা আর উন্নয়নের প্রতীক হিসাবে দেখছেন।

বর্তমান এমপি সাবেক খাদ্যমন্ত্রী আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক এমপি বলেন, বিগত নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আমার নির্বাচনী এলাকা ধনবাড়ী ও মধুপুরে ব্যাপক উন্নয়ন করা হয়েছে। 

ধনবাড়ীতে মডেল উপজেলা ভবন, ৫০ শয্যার হাসপাতাল, থানা ভবন, ফায়ার সার্ভিস, পশু হাসপাতাল, মধুপুরে ৭২ হাজার মে:টন ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন অত্যাধুনিক সাইলো নির্মাণ, মধুপুর অডিটরিয়ামসহ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ ও অবকাঠামো খাতে ব্যাপক উন্নয়ন করা হয়েছে। ধনবাড়ী ও মধুপুর উপজেলার প্রতিটি ঘরে-ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়া হয়েছে। 

দোয়া করবেন প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী প্রায় সকল কাজই সম্পন্ন করেছি। উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে এলকার জনগণ এবারও নৌকায় ভোট দিয়ে আমাকে নির্বাচিত করলে সৎ ও নিরপেক্ষ থেকে জনগণের কল্যাণে কাজ করে যাব ইন্শাল্লাহ। 

বিজয়ী হয়ে ধনবাড়ী মধুপুরে শিল্প কারখান গড়ে তুলে তরুণ বেকারদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা এবং প্রতিটি গ্রামকে শহরে রূপান্তরিত করবেন বলে ড. রাজ্জাক জানান।

অপরদিকে বিএনপি প্রার্থী সরকার শহিদুল ইসলাম জানান- আমার নেতাকর্মিরা বিভিন্ন হামলা-মামলায় পালিয়ে বেড়াচ্ছে। যে কারণে তারা সঠিকভাবে নির্বাচনী মাঠে প্রচার-প্রচারণায় অংশ নিতে পারছেনা। তিনি বলেন নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু পরিবেশে নির্বাচন হলে এবং ভোটাররা ভোট দিতে পারলে তিনি বিজয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। 

ধনবাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার আরিফা সিদ্দিকা জানান- টাঙ্গাইল-১ (মধুপুর-ধনবাড়ী) আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৬৪ হাজার ৯৯১ জন । এর মধ্যে মধুপুরে ২ লাখ ২২ হাজার ৯২৫ জন এবং ধনবাড়ীতে ১ লাখ ৪২ হাজার ৬৬ জন।
⇘সংবাদদাতা: আনছার আলী, মধুপুর

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top