যে কারণে আটকে গেল জামালপুর-১ আসনের বিএনপি প্রার্থীর নির্বাচন

S M Ashraful Azom
0
যে কারণে আটকে গেল জামালপুর-১ আসনের বিএনপি প্রার্থীর নির্বাচন
কাফি পারভেজ: আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামালপুর-১ (দেওয়ানগঞ্জ-বকশিগঞ্জ) আসনের বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির প্রার্থী এম. রশিদুজ্জামান মিল্লাতের ভোট যুদ্ধে অংশ নেয়ার পথ বন্ধ হলো।  গত ১৮ ডিসেম্বর মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশনের দেওয়া সিদ্ধান্ত স্থগিত করে হাইকোর্টের আদেশ বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ।

আপিল বিভাগের আদেশে বিএনপি প্রার্থী এম. রশিদুজ্জামান মিল্লাত নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারছেন না। হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে মিল্লাতের করা আবেদনের শুনানি নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ ‘নো অর্ডার’ আদেশ দেন। আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন।

আপিল বিভাগের আদেশের ফলে জামালপুর-১ আসনে বিএনপির অন্য কোন প্রার্থী থাকলো না। বিএনপির চূড়ান্ত মনোনয়ন দেওয়ার আগে জালামপুর-১ আসন থেকে বিএনপি চেয়ারপার্সন সাবেক আইজিপি আব্দুল কাইয়ুম ও মিল্লাতের ছেলে সাহাদৎ বিন জামান প্রার্থী ছিলেন। দলীয়ভাবে বিএনপির একক প্রার্থী মিল্লাতকে ঘোষণা করা হলে তারা দুই জন প্রার্থীতা উত্তোলন করে নেন।

দলীয় চূড়ান্ত মনোনয়ন পেয়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেন এম. রশিদুজ্জামান মিল্লাত। যাছাই বাছাই শেষে ২০০৭ সালে দুদকের দায়ের করা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হওয়ার কারণে হাইকোর্টের নির্দেশনা মোতাবেক জামালপুরের রিটানিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক আহমেদ কবীর তার মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষনা করেন। পরে এম. রশিদুজ্জামান মিল্লাত নির্বাচন কমিশনে (ইসি) আপিল করে তার প্রার্থিতার বৈধতা ফিরে পান। ধানের শীষ প্রতীক বরাদ্দ পেয়ে এ আসনের দুটি উপজেলা দেওয়ানগঞ্জ ও বকশিগঞ্জে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিয়ে জনসংযোগ ও ভোট প্রার্থনা শুরু করেন।

এদিকে প্রার্থিতা কেন বাতিল করা হবে না তা জানতে হাইকোর্টে রিট করেন আওয়ামী লীগ দলীয় নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ। রিটের প্রেক্ষিতে ১৩ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশন কর্তৃক জামালপুর-১ (দেওয়ানগঞ্জ-বকশিগঞ্জ) সংসদীয় আসনে বিএনপির প্রার্থী এম. রশিদুজ্জামান মিল্লাতের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণার সিদ্ধান্ত স্থগিত করেন হাইকোর্ট। পরে হাইকোর্টের এই আদেশের বিরুদ্ধে এম. রশিদুজ্জামান মিল্লাত আপিল করেন। মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশনের দেওয়া সিদ্ধান্ত স্থগিত করে হাইকোর্টের আদেশ বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ। আপিল বিভাগের আদেশে বিএনপি প্রার্থী এম. রশিদুজ্জামান মিল্লাত নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারছেন না।

আপিল বিভাগের এ আদেশের খবর ছড়িয়ে পড়লে এম. রশিদুজ্জামান মিল্লাতের নির্বাচনী এলাকা দেওয়ানগঞ্জ ও বকশিগঞ্জ উপজেলায় বিএনপি ও এর অঙ্গদলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও হতাশার সৃষ্টি হয়েছে।

উল্লেখ্য, বিএনপি দলীয় প্রার্থী এম. রশিদুজ্জামান মিল্লাত, তার স্ত্রী সাবিরা সুরাইয়া ও তার পুত্র সাহাদৎ-বিন-জামান এর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন ২০০৭ সালের ৩ জুন গুলশান থানায় মামলা দায়ের করেন। ২০০৮ সালের ২৯ জানুয়ারি বিচারিক আদালত মিল্লাতকে আট বছরের কারাদন্ড দেন। এছাড়া ১৯৮৭-৮৮ থেকে ২০০৫-০৬ করবর্ষে কর ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগে এনবিআরের উপ-কর কমিশনার মৃদুল কান্তি দাস মিল্লাতের বিরুদ্ধে ২০০৭ সালের ৭ অক্টোবর একটি মামলা করেন। এ মামলায় মোট ১৮ সাক্ষীর সাক্ষী নেওয়ার পর ২০০৭ সালের ২৮ নভেম্বর রায় ঘোষণা করেন সংসদ ভবনে স্থাপিত বিশেষ জজ আদালত। রায়ে সম্পদের তথ্য গোপন করায় মিল্লাতকে পাঁচ বছরের কারাদন্ড ও ২০ লাখ টাকা জরিমানা করেন আদালত। অন্যদিকে মিথ্যা তথ্য দেওয়ার অপরাধ প্রমানিত হওয়ায় আদালত তাঁকে এক বছর কারাদন্ড ও দুই লাখ টাকা জরিমানা করেন।

২০০৮ সালের ২৯ জানুয়ারির রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে আপিল করলে ২০১০ সালের ১৭ আগস্ট রায়ে প্রদত্ত দন্ডাদেশ বাতিল করে এম. রশিদুজ্জামান মিল্লাতকে খালাস দেন।

সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের ২০১০ সালের ১৭ আগস্ট রায়ের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন ও রাষ্ট্রপক্ষ ২০১২ সালে আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল করেন। আপিল বিভাগের ২০১৫ সালের ১০অক্টোবর এক রায়ে ২০১০ সালের ১৭ আগস্ট রায় বাতিল করে নতুন ভাবে শুনানী গ্রহনের আদেশ প্রদান করে মামলাটি হাইকোর্ট বিভাগে ফেরত দেয়া হয়। আপিল বিভাগের উক্ত আদেশ অনুযায়ী প্রদত্ত দন্ডাদেশ বহাল রয়েছে। পরবর্তীতে হাইকোর্ট বিভাগ আর কোনো আদেশ প্রদান করেননি এমনকি বিজ্ঞ জজ আদালত প্রদত্ত দন্ড স্থগিত না করায় হাইকোর্ট বিভাগে আপিল বর্তমানে বিচারাধীন রয়েছে।

⇘সংবাদদাতা: সেবা ডেস্ক

Post a Comment

0Comments

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

Post a Comment (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top