সেবা ডেস্ক: রূপান্তরিত বাংলাদেশের সুনাম আজ পৃথিবীর বিভিন্ন কোণে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ উদীয়মান শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। এজন্য দেশি বিদেশী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এই দেশে বিনিয়োগে বেশ আগ্রহী হয়ে উঠছে দিন দিন। তাদের মতে দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটিতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি মাত্র শুরু হয়েছে। এজন্য এখানে বিনিয়োগ করা তারা যথার্থ মনে করেন। এছাড়া তারা আরও বলেন যে, দেশের সরকার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে।
অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির দিক থেকে বাংলাদেশের দক্ষিণ – পশ্চিমাঞ্চল সব থেকে এগিয়ে আছে। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের গবেষণা অনুযায়ী, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা চলতে থাকলে ২০৫০ সাল নাগাদ এই অঞ্চল হতে বার্ষিক ৪ থেকে সাড়ে ৪ হাজার কোটি ডলার সমপরিমাণ অর্থ আয় হবে। এজন্য এই অঞ্চলে অর্থনৈতিক করিডোর করার নিয়েছে। এডিবির গবেষণার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, এই অঞ্চলকে নিয়ে পরিকল্পিত অর্থনৈতিক করিডোর গঠন করা হলে এই অঞ্চলের উৎপাদন বা অর্থনৈতিক আয় ১৪ হাজার ৮০০ কোটি ডলারে উন্নীত করা সম্ভব হবে।
অর্থনৈতিক করিডোর তৈরী হলে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। আড়াই কোটি লোকের কর্মসংস্থান তৈরি হবে এই করিডোরের মাধ্যমে। সমন্বিতভাবে এই অঞ্চলকে অর্থনৈতিকভাবে উন্নত করা হলে ২০৫০ সাল নাগাদ এই অঞ্চলটিতে সাড়ে তিন কোটি মানুষের কর্মসংস্থানের অঞ্চলে পরিণত হবে।
‘রিয়ালাইজিং দ্য প্রটেনশিয়াল অব বাংলাদেশ থ্রু ইকনমিক করিডোর ডেভেলপমেন্ট’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে এমনটি উল্লেখ করেছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)।
সম্প্রতি প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, কাঠামোগত রূপান্তর এবং আঞ্চলিক সুষম উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক করিডোর উন্নয়নের মতো উন্নয়ন কৌশল গ্রহণ করতে হবে। এর মাধ্যমে দেশে নতুন শিল্প স্থাপন, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, অবকাঠামোর উন্নয়ন সম্ভব হবে। সেই সাথে গ্রাম শহরের মধ্যে ব্যবধান কমে আসা, অভ্যন্তরীণ বাজার ব্যবস্থা উন্নত হবে এবং বৈশ্বিক ভ্যালু চেইন ব্যবস্থার সাথে যুক্ত হওয়া সহজ হবে। দেশের অর্থনীতিবিদ ও রাজনীতি বিশ্লেষকরা বলেন যে, এসব করা সবই সম্ভব কারণ প্রতিটি উপাদান নিয়ে কাজ করবে দেশের নতুন সরকার আওয়ামী লীগ। এছাড়া এসব বিষয় তাদের নির্বাচনী ইশতেহারেও অন্তর্ভুক্ত ছিল। নির্বচনী ইশতেহার অনুযায়ী কাজ করবে আওয়ামী লীগ।
ইকোনোমিক করিডোর স্থাপনের মাধ্যমে আমাদের রপ্তানি খাত আরও বেশি ত্বরান্বিত হবে। প্রয়োজন হবে সমন্বিত উন্নয়নের। এডিবির সমন্বিত উন্নয়ন পরিকল্পনায় ১৪টি খাতে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এগুলো হলো- খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ কারখানা স্থাপন বিশেষ করে মৎস্য ও কৃষি পণ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প, তৈরি পোশাক, বাইসাইকেল, অটোমোবাইল, শিপবিল্ডিং, ফার্মাসিউটিক্যালস, চামড়াজাত পণ্য, আসবাব পণ্য, গ্লাস, সিরামিক, প্লাস্টিক, টায়ার প্রস্তুত কারখানা উল্লেখযোগ্য। বাংলাদেশের বর্তমান শিল্প উৎপাদন ব্যবস্থায় দেশীয় পণ্যের ব্যবহার বাড়াতে মনযোগী হওয়াটা জরুরি বলে তারা মনে করেন। এজন্য এসব শিল্প গড়ে তোলার সুপারিশ করা হয়েছে যাতে করে অভ্যন্তরীণ কাঁচামাল ব্যবহার করেই পণ্য উৎপাদন করা যায়।
দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত খুলনা বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহৎ শহর এবং প্রাচীন নদী বন্দর। নৌ-বন্দর সুবিধা থাকায় এই অঞ্চল পণ্য বাণিজ্যের অন্যতম প্রবেশদ্বার হতে পারে। এজন্য দ্রুত অবকাঠামো অগ্রগতির মাধ্যমে বহুমুখী পরিবহন যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি করা হবে।
এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, অর্থনৈতিক করিডোর বাস্তবে রূপান্তরিত করতে হলে অবকাঠামো খাতে অন্তত ১৪০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করতে হবে। প্রস্তাবিত ইকোনোমিক করিডোর কেবল বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চল নয়, এর মাধ্যমে পার্শ্ববর্তী নেপাল, ভুটান এবং ভারতের উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ আরো শক্তিশালী করবে। সেই সাথে দৃঢ় হবে প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক।
সরকারের পরিকল্পিত উন্নয়নের ফলে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অগ্রসর হচ্ছে বাংলাদেশ। সেই সাথে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করায় দেশি বিদেশি উদ্যোক্তাদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে রূপান্তরিত হয়েছে এই দেশ। বিশ্লেষকরা মনে করেন এই ধারা অব্যাহত থাকলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক শহরে রূপান্তরিত হবে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল।
⇘সংবাদদাতা: সেবা ডেস্ক
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।