
সেবা ডেস্ক: একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিপর্যয়ের নেপথ্যে নিজেদের ভুল ও দুর্বলতা নিয়ে নানামুখী হিসাব-নিকাশ কষেও হিসেব মেলাতে পারছে না বিএনপি। একইসঙ্গে নির্বাচনী কৌশলে ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও নানা দুর্বলতার জন্য এখন পরস্পরকে দায়ী করছেন দলের শীর্ষ নেতারা। বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রের বরাতে তথ্যের সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গিয়েছে।
বিএনপির একটি সূত্র বলছে, নির্বাচনের বহু আগ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দৌড়ঝাঁপ করেও ভূ-রাজনীতি নিজেদের ‘অনুকূলে’ আনতে পারেননি দলটির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। নির্বাচনে বিদেশি মদদ পাওয়ার জন্য প্রেক্ষাপট রচনা করতে ব্যর্থ হওয়ার কারণে বিএনপিকে মুখ থুবড়ে পড়তে হয়েছে বলেও মন্তব্য করেছেন তারা। মূলত সমন্বয়হীনতা, অবিশ্বাস এবং সঠিক পরিকল্পনার অভাবে বিএনপি দেশি এবং আন্তর্জাতিক পরিসরে ব্যর্থ হয়েছে বলেও মনে করছেন তারা।
বিএনপির সংস্কারপন্থী নেতা সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুল মনে করেন, যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত জামায়াতে ইসলামীকে জোটে রেখে নির্বাচনে ‘ধানের শীষ’ প্রতীক দেওয়ার বিষয়টিও ভুল হয়েছে। স্বতন্ত্র প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত থাকলেও শেষ মুহূর্তে কীভাবে জামায়াত ‘ধানের শীষ’ প্রতীক পেল- তা নিয়ে দল ও জোটের নেতারাও বিস্মিত। সেই অর্থে বলা যেতে পারে, জামায়াতের কারণে জনরায় বিএনপির বিপক্ষে গিয়েছে। চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের নিয়ে সংসার বাধা এবং জনপ্রিয় ও ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে দুর্বল প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে বলেও মনে করেন অনেক নেতাকর্মী। দুর্বল প্রার্থীর পাশাপাশি প্রতিপক্ষকে চ্যালেঞ্জ করার মতো সাহসী ও যোগ্য নেতৃত্বের অভাবও ছিল। এজন্য অনেক ভোটকেন্দ্রে পোলিং এজেন্ট দেওয়া যায়নি। এটিকেও একটি বড় ব্যর্থতা হিসেবে মনে করছে দলের হাইকমান্ড। মনোনয়নদানকারী নীতিনির্ধারক নেতা ও মনোনয়নপ্রাপ্ত নেতা- দু’পক্ষকেই দোষারোপ করাটা যৌক্তিক মনে হচ্ছে।
এছাড়া বিভিন্ন গণমাধ্যমের বরাতে জানা যায়, নির্বাচনের আগে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ও ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলুর ফাঁস হওয়া ফোনালাপেও দলের ভেতর পরস্পরের বিরুদ্ধে দোষারোপের বিষয়টি প্রকাশ পায়। ওই ফোনালাপে দুই নেতাই নির্বাচনে থাকায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে দোষারোপ করে কথা বলেন। অন্যদিকে, নির্বাচনে বিএনপি কিছু ইতিবাচক কৌশল নিলেও অনেক ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করে ড. কামাল হোসেনসহ জাতীয় নেতাদের দেশে-বিদেশে ইতিবাচক ভাবমূর্তিকে কাজে লাগাতে সক্ষম হয়েছে। তবে বিএনপির সংকটের বড় কারণ বৈশ্বিক রাজনীতি অনুধাবন করতে না পারা। বিএনপির কৌশল প্রভাবশালী প্রতিবেশী দেশগুলোকে আশ্বস্ত করতে ব্যর্থ হয়েছে। বর্তমানে সারা বিশ্ব ইসলামী জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়ছে। বিএনপি জোটের অন্যতম শরিক দল জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তানের জঙ্গিগোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে বলে বিদেশিদের কাছে প্রমাণিত হয়েছে।
বিএনপির এমন বিশৃঙ্খল অবস্থার বিষয়ে বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে বিএনপির উচিত হবে ধৈর্য ধারণ করা। তাদের কোনো ভুলত্রুটি থাকলে তা খুঁজে বের করে সংশোধন করা। এ মুহূর্তে কোনো হঠকারী চিন্তা-ভাবনা ও কর্মসূচি গ্রহণ না করাই ভালো। পরিস্থিতি অনুযায়ী ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এখন ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের নেতৃত্বে এনে তৃণমূল থেকে দলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করে সামনে এগোতে হবে।
⇘সংবাদদাতা: সেবা ডেস্ক
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।