
সেবা ডেস্ক: নতুন বছর ২০১৯ এর শুরুতে টেনিস দুনিয়ায় আলোড়ন সৃষ্টিকারী ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছিলো অস্ট্রেলিয়ার পার্থে। নতুন বছরের গত ১ জানুয়ারি রাতে হপম্যান কাপের রাউন্ড রবিন ম্যাচে মুখোমুখি হয় সুইজারল্যান্ড ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সুইজারল্যান্ডকে নেতৃত্ব দেন পুরুষ এককের সর্বোচ্চ গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ী টেনিস তারকা রজার ফেদেরার। অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে নেতৃত্ব দেন নারী এককের সর্বোচ্চ গ্র্যান্ড স্ল্যাম শিরোপাজয়ী সেরেনা উইলিয়ামস।
টেনিস বিশ্বে আলোচনার শুরু হয় মূলত তখন থেকেই। রজার ফেদেরার বনাম সেরেনা উইলিয়ামস! কল্পনা কিংবা ম্যাগাজিনের কোনো গল্প নয়। পুরুষ টেনিসের সম্রাট ও নারী টেনিসের সম্রাজ্ঞী যখন এক অন্যের মুখোমুখি, তখন টেনিস ভক্তদের মাঝে বাড়তি উন্মাদনা থাকবে না, তা কি হয়?
সেরেনা ও ফেদেরার ছাড়াও ম্যাচটিতে অংশ নেন আরো দুইজন পেশাদার টেনিস তারকা।
ফেদেরারকে সঙ্গ দেন বেলিন্দা বেনচিচ। অপরদিকে, সেরেনাকে সঙ্গ দেন ফ্রান্সেস টিয়াফো। দুই মহা তারকার মধ্যকার ম্যাচটিকে টেনিস বিশেষজ্ঞরা এ কালের ‘ব্যাটল অব সেক্সেস’ বলে আখ্যায়িত করেছিলেন। এর আগে ১৯৭৩ সালে অনুষ্ঠিত বিলি জিন কিং ও ববি রিগসের মধ্যকার ঐতিহাসিক ম্যাচটি এই খেতাব পেয়েছিল।
পার্থে জানুয়ারির ১ তারিখ দিবাগত রাতে অনুষ্ঠিত হয় নারী-পুরুষ মিশ্র দ্বৈত রাউন্ড। যদিও এর আগে উভয় দলের নারী ও পুরুষ খেলোয়াড়েরা আলাদা আলাদা ম্যাচে পরস্পরের মুখোমুখি হন। ফেদেরার খেলেন ফ্রান্সেস টিয়াফোর বিপক্ষে এবং সেরেনা খেলেন বেলিন্দা বেনচিচের বিপক্ষে।
হপম্যান কাপ টেনিস প্রতিযোগিতার নিয়ম অনুযায়ী প্রতি দলের নারী ও পুরুষ তারকারা আলাদা আলাদা ম্যাচে পরস্পরের মুখোমুখি হন। অতঃপর নারী পুরুষ মিশ্র দ্বৈতে মুখোমুখি হন উভয় দলের খেলোয়াড়েরা। এই তিন ম্যাচের ফলাফলের উপর ভিত্তি করে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।
ঐদিনই পুরুষ এককে মুখোমুখি হন ফেদেরার ও ফ্রান্সেস টিয়াফো। পার্থেই অনুষ্ঠিত হয় ম্যাচটি। ম্যাচের শুরু থেকেই ২০ বছর বয়সী টিয়াফোকে প্রথম থেকেই কোনো প্রকার ছাড় দেননি ফেদেরার। ফেদেরারের দ্রুতগতির সার্ভ ও ভলির বিপক্ষে টিকতেই পারেননি টিয়াফো। টিয়াফোকে ৬-৪, ৬-১ সেটে পরাজিত করে সুইজারল্যান্ডকে ১ পয়েন্ট এনে দেন ফেদেরার।
দিনের দ্বিতীয় ম্যাচে মুখোমুখি হন সেরেনা উইলিয়ামস ও বেলিন্দা বেনচিচ। কিংবদন্তি সেরেনার বিপক্ষে ২১ বছর বয়সী বেনচিচ হয়তোবা আনুষ্ঠানিকতা রক্ষার্থেই কোর্টে নেমেছিলেন। কিন্তু সেরেনার বিপক্ষে অসাধারণ পারফরম্যান্স উপহার দেন তিনি। প্রথম গেম সেট ৪-৬ ব্যবধানে পরাজিত হলেও দ্বিতীয় সেটে ঘুরে দাড়ান বেনচিচ। ৬-৪ ব্যবধানে জিতে ম্যাচে সমতায় আনেন তিনি। যদিও তৃতীয় সেটে ৬-৩ ব্যবধানে বেনচিচকে পরাজিত করে যুক্তরাষ্ট্রকে ১ পয়েন্ট এনে দেন সেরেনা।
অবশেষে পার্থ অ্যারেনায় সেই কাঙ্ক্ষিত মুহূর্ত আসে। সুইসদের পতাকা খচিত পোশাকে ফেদেরার ও মার্কিনিদের পতাকা নিয়ে সেরেনা কোর্টে প্রবেশ করেন। ৩১তম হপম্যান টেনিস টুর্নামেন্টের ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ ম্যাচটি দেখতে পার্থ অ্যারেনায় উপস্থিত ছিলেন ১৪,০২৯ জন দর্শক। ম্যাচের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয় দুই মহাতারকার করমর্দনের মধ্য দিয়ে।
পার্থ অ্যারেনার নীল কোর্টের দুই পাশে টেনিসের দুই মহাতারকা। আর গ্যালারিতে চৌদ্দ হাজার দর্শক। এমন ঐতিহাসিক ম্যাচের জন্য এর চেয়ে সুন্দর পরিবেশ আর হতেই পারেনা। ম্যাচ রেফারির নির্দেশনায় শুরু হয় সুইজারল্যান্ড ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার মিশ্র দ্বৈত রাউন্ডের ম্যাচটি। সেইসাথে শুরু হয় ফেদেরার ও সেরেনার মধ্যকার শ্রেষ্ঠত্বের মহাযুদ্ধ। দুজনেরই সঙ্গী যখন তরুণ খেলোয়াড়, তখন ম্যাচের পুরো দায়দায়িত্বটা তাদের কাঁধেই ছিলো। আর সে দায়িত্বকে অবহেলা করেননি ফেদেরার ও সেরেনা।
প্রথম সেটে সেরেনা উইলিয়ামস নিজের সেরা পারফরম্যান্স উপহার দিলেও তার সঙ্গী টিয়াফোর পারফরম্যান্স ছিলো হতাশাজনক। পর পর সার্ভ হারানোর কারণে প্রথম সেটে ৪-২ ব্যবধানে পরাজিত হয় যুক্তরাষ্ট্র। অন্যদিকে প্রথম সেটে জয়ের পেছনে সিংহভাগ অবদান রাখেন ফেদেক্স। তার বিধ্বংসী ভলি ও সার্ভের বিপক্ষে সেরেনাও একাধিকবার ব্যর্থ হন। ফেদেক্সের অসাধারণ পারফরম্যান্সের কল্যাণে ম্যাচের ফলাফল ততক্ষণে সুইসদের পক্ষেই চলে যায়।
কিন্তু দুই কিংবদন্তির প্রতিদ্বন্দ্বিতা এত অল্প সময়ে শেষ হয়ে যাবে, তা ভাবাটা নিতান্তই বোকামি। টেনিসে শেষ বলতে কিছু নেই। শক্তিমত্তা আর কৌশলের দিক দিয়ে যে এগিয়ে থাকবে, জয় তার পক্ষেই যাবে। যুগযুগ ধরে এমনটাই চলে আসছে।
কিছুক্ষণ বিরতির পর শুরু হয় দ্বিতীয় সেটের খেলা। সেরেনার চোখেমুখে নিজ দেশকে জেতানোর অদম্য ইচ্ছা, অন্যদিকে ফেদেরারের হার না মানার দৃঢ় মনোভাব। সবমিলিয়ে দ্বিতীয় সেটের শুরুটা হয় অসাধারভাবে।
দ্বিতীয় সেটের প্রথম কয়েকটি গেম জিতে নেন সেরেনা ও টিয়াফো। কিন্তু তখনি নিজেকে মেলে ধরলেন বেনচিচ। যে সার্ভের জন্য সেরেনা বিশ্বখ্যাত, সে সার্ভগুলোকে একে একে ঠেকিয়ে দর্শকদের মন জয় করে নেন তিনি। অপরদিকে, সেরেনার ভয়ঙ্কর রূপের সামনে ফেদেরারকেও একটু বিচলিত মনে হয়েছে। তাই দ্বিতীয় সেটে বেশ ঘাম ঝরাতে হয়েছে তাকে।
তবে হাল ছাড়েননি ফেদেক্স ও বেনচিচ। শ্বাসরুদ্ধকর দ্বিতীয় সেটে সেরেনা উইলিয়ামস ও টিয়াফোকে ৪-৩ ব্যবধানে পরাজিত করেন ফেদেরার ও বেনচিচ। সেইসাথে ২-১ পয়েন্টের ব্যবধানে যুক্তরাষ্ট্রকে পরাজিত করে হপম্যান কাপের পরবর্তী রাউন্ড নিশ্চিত করে সুইজারল্যান্ড।
ম্যাচ শেষে জয় উদযাপনের চেয়েও বেশি মনোমুগ্ধকর ছিলো দুই তারকার পরস্পরের সাথে হাত মেলানোর দৃশ্য। সাধারণ দৃষ্টিতে মনে হতেই পারে, এটি সময়ের দুই সেরা টেনিস তারকার করমর্দন। কিন্তু অন্যভাবে লক্ষ্য করলে ৪৩টি গ্র্যান্ড স্ল্যাম জেতা চারটি হাতের করমর্দন ছিলো এটি। নারী এককে টেনিস ইতিহাসের সর্বোচ্চ ২৩টি গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতেছেন সেরেনা উইলিয়ামস। অন্যদিকে পুরুষ এককে সর্বোচ্চ ২০টি গ্র্যান্ড স্ল্যাম শিরোপা জিতেছেন ফেদেরার।
পার্থে অনুষ্ঠিত এই ম্যাচের মধ্য দিয়ে দুই মহাতারকা প্রথমবারের মতো নিজেদের মুখোমুখি হলেন। হয়তো এটিই প্রথম, এটিই শেষ। কারণ ৩৬ বছর বয়সী সেরেনা উইলিয়ামসের টেনিস ক্যারিয়ার শেষের দিকে। অপরদিকে, রজার ফেদেরারের বর্তমান বয়স ৩৭। তিনি আর কতোদিন টেনিস খেলবেন, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই টেনিস বিশ্বে ব্যাপক আলোচনা চলছে। সব মিলিয়ে, এই ম্যাচটি টেনিস সর্মথকদের কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
⇘সংবাদদাতা: সেবা ডেস্ক
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।