
আশরাফুল ইসলাম রনি,তাড়াশ প্রতিনিধি: চলবিলাঞ্চলের তাড়াশ, রায়গঞ্জ, সলঙ্গা, উল্লাপাড়া,গুরুদাসপুর, সিংড়া, চাটমোহর, ভাঙ্গুড়াসহ বিভিন্ন হাট বাজারে দেদারছে বিক্রী হচ্ছে খেজুর রসের তৈরি গুড়।
অথচ চলনবিলাঞ্চলে ঐতিহ্য শীতকালে প্রতিটি বাড়িতে ছেলে-মেয়ে, জামাই ও আত্মীয় স্বজনরাদের নিয়ে যে পিঠার আয়োজন করা হয়। তাতে খেজুর গুড় না হলে যেন শীতের পিঠার মজাই থাকে না। শীতে দেশ বিদেশে খেজুর খেজুর গুড়ের চাহিদা থাকায় মৌসুমী গুড় তৈরীতে যারা নিয়োজিত তারা চিনি ও ক্ষতিকারক ক্যামিকেল হাইড্রোজ ও ফিটকারি ব্যবহারের মাধ্যমে ভেজাল গুড় তৈরী করছেন।
ক্রেতারা মনে করছেন মৌসুমী খেজুর গুড়ের দামের চেয়ে চিনির দাম কম হওয়ায় গত কয়েক বছর ধরে কিছু অসাধু গাছিয়ারা চিনি মেশানো ভেজাল খেজুর গুড় উৎপাদন ও বিক্রি করছেন। এতে হুমকির মুখে পড়ছে জনস্বাস্থ্য। বিশেষ করে খেজুর গুড়ের ক্ষতিকারক হাইড্রোজ ও ফিটকারি ব্যবহার করায় জনস্বাস্থ্যর জন্য খেজুর গুড় হুমকি হয়ে দাড়িয়েছে।
স্থানীয় মোসলেম উদ্দিন, আক্কাস আলী একাধিক ক্রেতা জানান, যদি প্রতিটা হাট-বাজারে ভেজাল বিরোধী অভিযান বা মনিটরিং ঠিকমত চলতো তাহলে এমনটা হতো না। তাছাড়া উপজেলা স্যানেটারী অফিসারকে মাশোহারা দিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীরা ভেজাল খাদ্য বিক্রী করছেন বলেও তারা অভিযোগ করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার নওঁগা, বিনসাড়া, নাদোসৈয়দপুর, বারুহাস,ধামাইচ ও গুল্টা হাটসহ বিভিন্ন বাজারে যে সকল গুড় বিক্রি হচ্ছে তার অধিকাংশ চিনি মেশানো। বিশেষ করে গুড়ের রং আকর্ষণীয় করতে এবং গুড়ের ময়লা কাটাতে ক্ষতিকারক ক্যামিকেল হাইড্রোজ ও ফিটকারি ব্যবহার করা হচ্ছে।
এদিকে তাড়াশ উপজেলা ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ শিমুল তালুকদার জানান, গুড়ে মেশানো চিনি ক্ষতিকারক নয়। কিন্তু টাকা দিয়ে চিনি মেশানো খেজুর গুড় কিনে ক্রেতা সাধারন প্রতারিত হচ্ছেন। অন্যদিকে খেজুর গুড়ে ক্ষতিকারক ক্যামিকেল হাইড্রোজ ও ফিটকারি ব্যবহারের ফলে ডায়বেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনির সমস্যা সহ নানা রোগে রোগাক্রান্ত হতে পারে। যা স্বাস্থ্যের জন্য হুমকিও বটে ।
উপজেলার আড়ঙ্গাইল গ্রামের আব্দুল মজিদ ও স্থানীয়রা জানান, বেশি লাভবান হওয়ার আশায় গাছিয়ারা প্রতি কেজি খেজুর গুড়ে ৪’শ থেকে ৫’শ গ্রাম পর্যন্ত চিনি মেশাচ্ছে । বাজারে প্রতি কেজি চিনির মূল্য ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। আর খেজুর গুড় বিক্রি হচ্ছে প্রকার ভেদে কেজি প্রতি ৮০ থেকে ১’শ টাকা দরে।
অন্যদিকে প্রতিবছরেরই শীতকালে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে যে সকল গাছিয়ারা খেজুর গাছ বাৎসরিক লিজ নিয়ে চলনবিলাঞ্চলে যে গুড় তৈরী করছেন তাতে চিনি, ক্ষতিকারক ক্যামিকেল হাইড্রোজ ও ফিটকারি মেশানোর হার বেশী।
তাড়াশ উপজেলার বিনসাড়া গ্রামের গাছী আবু বক্কার মিয়া জানান, শুধুমাত্র গৃহস্থের গুড়ে ভেজাল থাকে না । তবে যারা ব্যবসা করার জন্য খেজুর বাগান লিজ নিয়ে গুড় তৈরী করেন তাদের অধিকাংশই গুড়ে চিনি মেশানো হয়। মূলত বেশী লাভের আশায় তারা এ কাজ করছেন।
বক্তব্য জানতে তাড়াশ উপজেলা স্বাস্থ্য পরিদর্শক মো. ইব্রাহিম হোসেন ভেজাল গুড় বিষয়ে নিয়ে কোন মন্তব্য করতে পারবেন না বলে ফোন কেটে দেন।
⇘সংবাদদাতা: আশরাফুল ইসলাম রনি
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।