
সেবা বিনোদন ডেস্ক: এইচবিও এর জনপ্রিয় টিভি সিরিজ গেম অব থ্রোন্স নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। বিশ্বজুড়ে গেম অব থ্রোন্সের ভক্তকূলের কমতি নেই। গেম অব থ্রোন্সের অসাধারণ মেকিং এবং জর্জ আর. আর. মার্টিনের অসাধারণ লেখনি ভক্তদের বিগত প্রায় ৭ বছরেরও বেশি সময় ধরে মগ্ন করে রেখেছে।
এ সফলতার অন্যতম প্রধান কারণ গেম অব থ্রোন্স এমন একটি সিরিজ যেটা গতবাঁধা কোনো কাহিনী মানে না এমনকি ঘটনায় টুইস্টের কোনো কমতি নেই। এখানে যেকোনো সময়ে যেকোনো চরিত্রের মৃত্যু হতে পারে তা সে যত দর্শকপ্রিয়ই হোক না কেন।
তবে জর্জ আর. আর. মার্টিন লেখক হিসেবে অত্যন্ত বুদ্ধিমান। গেম অব থ্রোন্সের পর্দায় এখন পর্যন্ত যত বড় ঘটনা ঘটেছে তার কোনোটাই হঠাৎ করে ঘটেনি। অত্যন্ত সুনিপুণভাবে তিনি পুরো সিরিজ জুড়েই সামনে ঘটতে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনার পূর্বাভাস দিয়ে গিয়েছেন। তবে সেগুলো পূর্বে বোঝা না গেলেও এখন যখন সিরিজটির আর মাত্র এক সিজন বাকি রয়েছে এ অবস্থায় পিছনে ফিরে তাকালে এরকম অনেক উদাহারণ খুজে পাওয়া যায়।
আজ আমরা আপনাদের সামনে তুলে ধরব সিরিজের এরকম কিছু দৃশ্য যেগুলোতে সিরিজটিতে সামনে ঘটতে যাওয়া ঘটনার প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল। এখন পর্যন্ত সিরিজটির ৭টি সিজন সম্প্রচারিত হওয়ায় এ পর্যন্ত ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর উপর ভিত্তি করেই তালিকাটি করা হয়েছে।
পিটার বেইলিশ এবং রবিন আ্যারিনের কথাপোকথনে সামনের মৃত্যুর পূর্বাভাস
চতুর্থ সিজনের এ দৃশ্যটিতে লর্ড পিটার বেইলিশ এবং ভেইলের মানসিক ভারসাম্যহীন তরুণ রাজপুত্র রবিন আ্যারিনের মধ্যে কথাপোকথন হতে দেখা যায়। বেইলিশ এ দৃশ্যে রবিনকে মৃত্যুর ব্যাপারে বলতে গিয়ে বলেন,”মানুষ খাবারের টেবিলে মারা যায়।তারা নিজেদের বিছানায় মারা যায়। তারা নিজেদের টয়লেটেও পিছলে পড়ে মারা যায়।”
উল্লেখ্য যে, এ দৃশ্যের পরে গেম অব থ্রোন্সের বেশ কিছু চরিত্রের মৃত্যু উপরের এ সংলাপের সাথে মিলে যায়। রাজা জফ্রি বারাথিওনকে খাবারের টেবিলে বিষপ্রয়োগ করা হয়। টিরিয়ন ল্যানিস্টারের প্রেমিকা শেই টিরিয়নের হাতেই বিছানায় খুন হয় এবং টিরিয়নের পিতা টাইউইন ল্যানিস্টারের মৃত্যু টয়লেটে থাকা অবস্থায় টিরিয়নের হাতে হয়। ব্যাপারগুলো আপাতদৃষ্টে কাকতালীয় মনে হলেও তা যে জর্জ আর. আর. মার্টিনের সুদূরপ্রসারী চিন্তার ফসল এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই।
নেড স্টার্ক বনাম জেইমি ল্যানিস্টার এবং টাওয়ার অব জয়
সিজন ওয়ানের এক পর্যায়ে নেড স্টার্কের সাথে যখন ল্যানিস্টারদের দ্বন্দ্ব বেঁধে যায় তখন পিটার বেইলিশ দ্বারা পরিচালিত একটি পতিতালয়ের বাইরে নেড স্টার্ক আর জেইমির মধ্যে যদ্ধ হতে দেখা যায়৷ সাহসী নেড জেইমি এবং তার বাহিনীর সাথে লড়াই চালিয়ে গেলেও এক পর্যায়ে এক সৈন্য তাকে পেছন থেকে আঘাত করে।দর্শকরা এ দৃশ্যের সাথে ষষ্ঠ সিজনের একটি দৃশ্যের মিল খুঁজে পান। ষষ্ঠ সিজনে ফ্ল্যাশব্যাকে একটি দৃশ্যে তরুণ নেড স্টার্ক এবং তার সহযোগী হাওল্যান্ড রিডের সাথে সে সময়ের টারগেরিয়েন বাহিনীর সবচেয়ে দুর্ধর্ষ যোদ্ধা স্যার আর্থার ডেইনের মধ্যে অসিযুদ্ধ দেখানো হয়। নেড স্টার্ক যখন শেষ পর্যন্ত আর্থার ডেইনের সাথে পেরে উঠছিলেন না, তখন রিড পেছন থেকে আঘাত করে ডেইনকে হত্যা করেন।
আর্থার ডেইন তখন নেড স্টার্কের অপহৃত বোন লিয়ানা স্টার্কের প্রহরী হিসেবে ছিলেন যিনি কিনা সে সময় সিরিজের প্রধান চরিত্র জন স্নোর জন্ম দেন। জনের জন্মপরিচয় সিরিজটির শুরু থেকেই ভক্তদের মধ্যে সর্বাধিক আলোচিত বিষয় এবং ‘টাওয়ার অব জয়‘ এর সে দৃশ্যটি পুরো গেম অব থ্রোন্স সিরিজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং বহুল প্রতিক্ষিত দৃশ্য। তাই দর্শকদের ধারণা প্রথম সিজনের সে দৃশ্যটি আসলে ওই গুরুত্বপূর্ণ দৃশ্যটিরই পূর্বাভাস ছিল।
ইঁদুরের গল্প এবং ‘ফ্রে পাই’
ব্র্যান স্টার্ককে একবার দেখা যায় হোডর, মিরা রিড এবং তার অন্যান্য সহযোগীদের একটি রূপকথার গল্প শোনাতে। গল্পটি ছিল নাইটস ওয়াচের এক কুক এবং এক রাজার গল্প। রাজার উপর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য সেই কুক রাজার সন্তানকে হত্যা করে এবং তার মৃতদেহ থেকে একটি পাই বানিয়ে রাজার অজ্ঞাতে তাকে খাওয়ায়।এ রূপকথার গল্পটি ষষ্ঠ সিজনে ঘটে যাওয়া ওয়াল্ডার ফ্রের পরিণতির সাথে অত্যন্ত সামঞ্জস্যপূর্ণ। আরিয়া স্টার্কের হাতে বৃদ্ধ ওয়াল্ডার ফ্রে নিহত হবার পূর্বে আরিয়া তার সন্তানদের হত্যা করে এবং তাদের মৃতদেহ থেকে বানানো পাই ওয়াল্ডারকে খাওয়ায়। তাই রূপকথার গল্পটি আসন্ন এ ঘটনার পূর্বাভাস ছিল বলেই নিশ্চিতভাবে ধরে নেওয়া যায়।
ডায়ারউলফ এবং নেড স্টার্কের পরিণতি
গেম অব থ্রোন্সে যে সব প্রাণী দেখানো হয়েছে তার মধ্যে ডায়ারউলফ অন্যতম। অতিকায় আকৃতির এ নেকড়েগুলো দুর্লভ এবং হাউজ স্টার্কের প্রতীক। গেম অব থ্রোন্সের প্রথম পর্বেই স্টার্ক সন্তানদের একটি করে ডায়ারউলফ পেতে দেখা যায়। স্টার্ক পরিবার একবার জংগলে শিকার করতে গেলে তারা একটি মৃত ডায়ারউলফ আবিষ্কার করে যা কিনা একটি হরিণের সাথে লড়াই করে তার শিংয়ের আঘাতে নিহত হয়েছিল।সেই নেকড়েটির অনাথ শিশুগুলোই পরে স্টার্ক পরিবারের সন্তানদের খেলার সাথী হয়। ভক্তদের মতে, ওই ডায়ারউলফটির এ পরিণতি আসলে নেড স্টার্কের মৃত্যুর দিকেই নির্দেশ করে। বারাথিওনদের কারণে নেড স্টার্ককে প্রত্থম সিজনের শেষে নিজের গর্দান দিতে হয় এবং এ বারাথিওনদের প্রতীক হলো হরিণ। তাই প্রথম পর্বে দেখানো ডায়ারউলফটির পরিণতি নেড স্টার্কের ভবিষ্যতেরই পূর্বাভাস বলে সকলের ধারণা।
ডেনেরিসের সুপ্ত ক্ষমতার পূর্বাভাস
গেম অব থ্রোন্সে এখন পর্যন্ত ডেনেরিস টার্গারিয়েনের মতো সফলতা খুব কম চরিত্রেরই কপালে জুটেছে। বিশেষ করে স্বামী খাল ড্রোগোর শবদাহ করার সময় তিনটি ড্রাগনের জন্ম তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। স্বামীর চিতার আগুনে নিজেকে বিলিয়ে দিলেও আশ্চর্যজনকভাবে ডেনেরিস অক্ষত অবস্থায় ফিরে আসে এবং এতে প্রমাণিত হয় ডেনেরিস একজন প্রকৃত টার্গেরিয়েন বংশধর বিধায় আগুন তার কোনো ক্ষতি করতে পারে না।দর্শকদের মতে, এ তথ্যের জন্য প্রথম সিজনের শেষ পর্ব পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতো না, প্রথম সিজনের প্রথম পর্বেই দেওয়া হয়েছে এর পূর্বাভাস। পর্বটিতে দেখা যায়, এক দাসীর বারণ সত্ত্বেও ডেনেরিস ফুটন্ত গরম পানিতে গোসল করতে নেমে যায় এবং সে যেন সেখানেই অপেক্ষাকৃত বেশি সাচ্ছন্দ্যবোধ করছিল। এ ঘটনাটি ডেনেরিসের সুপ্ত ক্ষমতার দিকেই নির্দেশ করছিল বলে দর্শকদের ধারণা।
⇘সংবাদদাতা: সেবা ডেস্ক
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।