বাজারে বাঁশখালীর রসালো লিচু: বাম্পার ফলনে চাষীদের মুখে হাসি

S M Ashraful Azom
0
বাজারে বাঁশখালীর রসালো লিচু
শিব্বির আহমদ রানা, স্টাফ রিপোর্টারঃ বাঁশখালীর বাজারে মৌসুমের রসালো ফল লিচু উঠেছে। থরো থরো করে সাজিয়ে লাল লাল থোকায় ও নানা সাইজের বেতের পাত্রে রেখে বিক্রির জন্য বাজারে দেখা যায় লিচু চাষীদের। তবে লিচুর দাম বেশ চড়া হাকিয়েছেন বিক্রেতারা।

রবিবার বাঁশখালীর কালীপুর  রামদাশ মুন্সির হাট, গুনাগরি বাজার, পালেগ্রামে বিক্রেতারা লিচুর ঝুড়ি নিয়ে বসতে দেখা যায়। মৌসুমী লিচুর দাম হাকা হয় প্রতিশত সাড়ে ৩০০ টাকা থেকে ৪৫০ টাকা পর্যন্ত। কোন কোন লিচুর দাম লালছে কালারের জন্য শতপ্রতি ৫শত টাকা দাম হাকায় চাষীরা।

এমনিতেই কালিপুরের লিচুর কদর সারাদেশেই। চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার কালিপুর লিচুর জন্য বিখ্যাত যুগ যুগ ধরে। বৈলছড়ি, গুণাগরি, পুকুরিয়া, জলদি, জঙ্গল চাম্বল সহ প্রায় প্রত্যেক  ইউনিয়নেই পাহাড়ি এলাকায় একই সাথে সমতলে লিচুর চাষ হয়ে আসছে বহুকাল থেকেই। বাণিজ্যিক ও ঘরোয়াভাবে উৎপাদিত এই লিচুর কদর দেশ জুড়েই। আগাম লিচু বাজারে দেখা  মিলছে এখন। সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় ফণির প্রভাব নিয়ে দুঃচিন্তায় ছিলেন লিচু চাষীরা। কিন্তু তেমন কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মুখীন না হওয়ায় এবার লিচুর উৎপাদন হয়েছে বরাবরের চাইতে কয়েকগুণ বেশি। লিচুর বাম্পার ফলন হলেও দামের কমতি নেই এখানে।

ব্যাপক চাহিদা থাকায় এবার লিচুর আকার ভেদে প্রতি শত লিচু পাইকারী বিক্রি হচ্ছে ৩৫০-৪৫০টাকায়। স্থানীয় বাজারে প্রথম দিকে দাম বেশি থাকলেও ধীরে ধীরে ২০০-২৫০ টাকায় কমে আসবে এমনটি ধারণা লিচু চাষীদের। রাজশাহী-দিনাজপুরের লিচুর তুলনায় কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও স্বাদে-মানে বাঁশখালীর লিচুর তুলনা নেই। তাছাড়া বাঁশখালীর লিচুর তুলনায় রাজশাহী, পাবনা, দিনাজপুরের লিচু কিছুদিন পরে বাজারে আসতে শুরু করে। চট্টগ্রাম ও আশেপাশের এলাকায় বাঁশখালীর লিচুর আলাদা কদর রয়েছে। মৌসুমের একেবারে প্রথম দিকেই বাজারে পাওয়া যায় বলে কালিপুরের লিচুর খ্যাতির রেয়াজটাও কমেনা। এবার লিচু উৎপাদনে লক্ষ্য মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে বলে জানান কালিপুরের লিচু চাষী জালাল উদ্দীন। তাছাড়া পালেগ্রাম মাদ্রাসার লিচু বাগানেও ব্যাপক উৎপাদনে আশা জাগিয়েছে লিচু চাষীদের। কালীপুর এলাকায় জমির উদ্দিন বিক্রি করেন লিচু। তিনি বলেন, বাজারে নতুন লিচু উঠেছে। তাই দাম একটু বেশি।
বাজারে বাঁশখালীর রসালো লিচু: বাম্পার ফলনে চাষীদের মুখে হাসি
বাঁশখালীতে আগাম লিচুর বাম্পার ফলন হয়েছে। ছবি- পালেগ্রাম মাদরাসার পূর্ব পাশের বাগান থেকে


লিচু ব্যবসায়ী মৌলানা হারুন, মুহাম্মদ বেলাল, মুহাম্মদ ইলিয়াস, মুহাম্মদ জালালুদ্দিনের সাথে কথা বলে জানা যায়, "চট্টগ্রাম শহরে বাঁশখালীর লিচুর আলাদা কদর রয়েছে। আমরা পাইকারি ক্রেতা ও বিক্রেতা। স্থানীয় চাষীদের কাছ থেকে প্রতি হাজার লিচু ২হাজার ৫শত থেকে ৩হাজার টাকা করে ক্রয় করি।" পাইকার লিচু ব্যাবসায়ী মৌলানা হারুন জানান, "বাঁশখালী থেকে প্রতিদিন গড়ে এক থেকে দেড় লক্ষ টাকার লিচু চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন অঞ্চলে যায়।" আজ (রবিবার) সকালে টাইমবাজার থেকে লিচু কিনেছেন রহিম। লিচু ক্রেতা রহিম বলেন, "নতুন ফল, দামেও বেশি। তাই ১শত লিচু কিনলাম। দাম কমলে তখন বেশি করে কিনবো।"

বাঁশখালী উপজেলার কৃষি অফিসার মুহাম্মদ শহিদুল ইসলামের সাথে কথা বলে জানা যায়, "বাঁশখালীতে ৬শত থেকে ৭শত হেক্টর জমিতে লিচুর বাণিজ্যিক চাষ হয়। এবারে ফলন বেশি হওয়ায় লিচু চাষীরা খুশি বলে জানান তিনি। তাছাড়া কৃষি অফিস থেকে যথাযত সহযোগিতা দেয়া হয়েছে লিচু চাষীদের এমনটিও জানান ওই কর্মকর্তা।

ব্রিটিশ আমল থেকেই বাঁশখালীর উপজেলার কালিপুরে জমিদার বংশের লোকজন বোম্বাই, কোলকাতা, চায়না-থ্রি জাতের লিচু চারা কলম সংগ্রহ করে বাগান করে আসছেন। পরে তা জলদি, পুকুরিয়া, সাধনপুর, চাম্বল, নাপোড়ায় বিস্তৃতি লাভ করে।

ভালো ফলন হওয়ায় এক একটি বাগান এক থেকে ১ থেকে দেড় টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাঁশখালীর তিন চারটি এলাকায় লিচুর পাইকারী বাজার বসে। পাইকারদের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন যায়গায় পৌঁছে যায় বাঁশখালীর এ লিচু। বিদেশে স্বজনদের কাছে নতুন লিচু পাঠানোর রেওয়াজ আছে এই অঞ্চলে। পুষ্টিগত মান ও স্বাদের কারণে বাঁশখালীর লিচুর এমন কদর বেশি।"

কালিপুরের একটি বাগান থেকে লিচু কিনতে আসা শিহাবুদ্দীন বলেন, "সারা বছর তো বিদেশি ফল আপেল, আঙুর, কমলা  কিনেছি। সেখানে নানান রসায়নিক, ফরমালিন ও  ভেজাল থাকে।কিন্তু বাঁশখালীর লিচুতে ভেজাল থাকেনা, সদ্য গাছ থেকে পাড়ানো লিচু বাজারে আসে।

তাই দাম একটু বেশি হলেও  বাগান থেকেই বাচ্ছাদের জন্যে লিচু কিনে নিয়ে যাচ্ছি।" বাঁশখালীর লিচুর কলম চারার চাহিদাও ব্যাপক। কালিপুর, বৈলছড়ি সহ বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে কলম চারার ব্যবসা ভালো জমে । দূর দূরান্ত থেকে লিচু চাষীরা কলম চারা কিনে নিয়ে যায় এখান থেকে।




⇘সংবাদদাতা: শিব্বির আহমদ রানা
ট্যাগস

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top