শুভ জন্মদিন “মোমেনশাহী”

S M Ashraful Azom
0
শুভ জন্মদিন “মোমেনশাহী”
সেবা ডেস্ক: শুভ জন্মদিন "ময়মনসিংহ"। শুভ হোক ২৩২ তম জন্মদিবস। সভ্যতার বিবর্তনের হাত ধরে শত-সহস্র স্মৃতির স্বাক্ষী হয়ে রয়ে যাবে জানি অক্ষয় আর অবিচল।

ইতিহাস থেকে:
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনামলে রাজস্ব আদায়, প্রশাসনিক সুবিধা বৃদ্ধি এবং বিশেষ করে স্থানীয় বিদ্রোহ দমনের জন্য এই জেলা গঠন করা হয়। ১৭৮৭ সালের মে ১ তারিখে এই জেলা প্রতিষ্ঠিত হয়।

শুরুতে এখনকার বেগুনবাড়ির কোম্পানিকুঠিতে জেলার কাজ শুরু হয় তবে পরবর্তী সময়ে সেহড়া মৌজায় ১৭৯১ সালে তা স্থানান্তরিত হয়। আদি ময়মনসিংহ জেলার বিভিন্ন স্থান একে একে সিলেট, ঢাকা, রংপুর ও পাবনা জেলার অংশ হয়ে পড়ে। ১৮৪৫ সালে জামালপুর, ১৮৬০ সালে কিশোরগঞ্জ, ১৮৬৯ সালে টাঙ্গাইল ও ১৮৮২ সালে নেত্রকোনা মহকুমা গঠন করা হয়। পরে সবকটি মহকুমা জেলায় উন্নীত হয়। ময়মনসিংহ শহর হয় ১৮১১ সালে। শহরের জন্য জায়গা দেন মুক্তাগাছার জমিদার রঘুনন্দন আচার্য।

১৮৮৪ সালে রাস্তায় প্রথম কেরোসিনের বাতি জ্বালানো হয়। ১৮৮৬ সালে ঢাকা‌-ময়মনসিংহ রেলপথ ও ১৮৮৭ সালে জেলা বোর্ড গঠন করা হয়।

নামকরণ:
মোঘল আমলে মোমেনশাহ নামে একজন সাধক ছিলেন, তার নামেই মধ্যযুগে অঞ্চলটির নাম হয় মোমেনশাহী। ষোড়শ শতাব্দীতে বাংলার স্বাধীন সুলতান সৈয়দ আলাউদ্দিন হোসেন শাহ তার পুত্র সৈয়দ নাসির উদ্দিন নসরত শাহ'র জন্য এ অঞ্চলে একটি নতুন রাজ্য গঠন করেছিলেন, সেই থেকেই নসরতশাহী বা নাসিরাবাদ নামের সৃষ্টি। নাসিরাবাদ নাম পরিবর্তন হয়ে ময়মনসিংহ হয় একটি ভুলের কারণে। বিশ টিন কেরোসিন বুক করা হয়েছিল বর্জনলাল এন্ড কোম্পানীর পক্ষ থেকে নাসিরাবাদ রেল স্টেশনে। এই মাল চলে যায় রাজপুতনার নাসিরাবাদ রেল স্টেশনে। এ নিয়ে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয়। পরবর্তীতে আরো কিছু বিভ্রান্তি ঘটায় রেলওয়ে স্টেশনের নাম পরিবর্তন করে ময়মনসিংহ রাখা হয়। সেই থেকে নাসিরাবাদের পরিবর্তে ময়মনসিংহ ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তবে কোনো কোনো ইতিহাসবিদদের মতে মোঘল সেনাপতি মনমোহন সিংহ ঈসা খা কে দমন করতে যাওয়ার পথে এখানে বেশ কয়েকদিন অবস্থান করেছিলেন এজন্য এখানকার নাম হয়ে যায় ময়মনসিংহ।

এ জেলায় জন্মেছেন বেশকিছু বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গ। যেমনঃ

-আনন্দমোহন বসু, তিনি ছিলেন বাঙালি রাজনীতিবিদ এবং সমাজসেবক।

- সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তিনি ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি।

-অধ্যাপক ড. আনোয়ারুর রহমান খান, তিনি এ.আর খান নামেই বেশি পরিচিত। তিনি বাংলাদেশের অন্যতম পথিকৃৎ ও বিশিষ্ট জ্যোতির্বিজ্ঞানী।

-যতীন সরকার, তিনি অসাধারণ বাগ্মীতার জন্য জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। ২০১০ খ্রিস্টাব্দে তাঁকে স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার প্রদান করা হয়।

- হেমেন্দ্রমোহন বসু, তিনি বিংশ শতাব্দীর শুরুতে বিস্ময়কর যান্ত্রিক প্রগতির বিভিন্ন নিদর্শনকে এদেশ প্রবর্তন করেন।

-আব্দুল জব্বার, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের শহিদ।

-আবুল মনসুর আহমেদ, তিনি বাংলাদেশী সাহিত্যিক, রাজনীতিবিদ এবং সাংবাদিক।

-আবুল কাসেম ফজলুল হক, বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত প্রাবন্ধিক ও রাষ্ট্রচিন্তাবিদ।

-গোলাম সামদানী কোরায়শী, বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট সাহিত্যিক, গবেষক ও অনুবাদক।
- কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ

এছাড়াও ময়মনসিংহ জেলা মৈমনসিংহ গীতিকা, মহুয়া, মলুয়া, দেওয়ানা মদীনা, চন্দ্রাবতী, কবিকঙ্ক, এর জন্য বিখ্যাত। ময়মনসিংহের মুক্তা-গাছার মন্ডা একটি বিখ্যাত খাবার।

হাওর জঙ্গল মহিষের শিং, এই তিনে ময়মনসিং- প্রবাদ প্রবচনে এভাবেই পরিচয় করানো হতো এক সময় ভারতবর্ষের বৃহত্তম জেলা ময়মনসিংহকে।ময়মনসিংহে রয়েছে প্রাচীন স্থাপনার অনবদ্য কীর্তি যার মধ্যে রয়েছেঃ

মুক্তাগাছার রাজবাড়ী, আলেকজান্দ্রা ক্যাসল, শশী লজ, সিলভার প্যালেস, রামগোপালপুর জমিদার বাড়ি ও গৌরীপুর রাজবাড়ী বিশেষ ভাবে জনপ্রিয়। তাছাড়া বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ জাদুঘর, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন সংগ্রহশালা, পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদী, বিপিন পার্ক, বোটানিক্যাল গার্ডেন।

ময়মনসিংহ জেলার জন্মদিবসে ময়মনসিংহ তথা বৃহত্তর ময়মনসিংহের সব্বাইকে জানাই শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। চলুন গড়ে তুলি এক সমৃদ্ধ জনপদ।

⇘সংবাদদাতা: সেবা ডেস্ক

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top