
সেবা ডেস্ক: দীর্ঘ আন্দোলন ও ঈদকে সামনে রেখে অবশেষে পাটকল শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি-ভাতা পরিশোধে ১৬৯ কোটি ১৪ লাখ টাকার থোক বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। গতকাল সোমবার এই অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়। বরাদ্দের এই অর্থ শ্রমিকদের এ্যাকাউন্টে চেকের মাধ্যমে দেওয়া হবে।
এ বিষয়ে বিজেএমসি’র চেয়ারম্যান শাহ মোহাম্মদ নাছিম বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে থোক বরাদ্দ পেয়েছি ১৬৯ কোটি ১৪ লাখ টাকা। এটাকে অপারেশন লোন বলে। এই টাকা দিয়ে শ্রমিকদের বকেয়া বেতন ও ঈদ বোনাস দেওয়া হবে। শ্রমিকদের প্রত্যেকের নিজস্ব ব্যাংক হিসাবে এই টাকা চলে যাবে। টাকা তোলার প্রক্রিয়া চলছে। আমরা শ্রমিকদের কথা বিবেচনা করে সরকারের কাছে ঋণ চেয়েছিলাম।
অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক চিঠিতে জানা গেছে, আগামী ২০ বছরে ৫ শতাংশ সুদে প্রতি ছয় মাসের কিস্তিতে এ অর্থ পরিশোধ করতে হবে। আর এ জন্য অর্থ বিভাগের সঙ্গে বিজেএমসিকে একটি ঋণ চুক্তি করতে হবে। চিঠিতে বিশেষ ভাবে বলা হয়েছে, বরাদ্দ দেওয়া অর্থ কেবল শ্রমিকদের বকেয়াসহ মজুরি এবং উৎসব ভাতা হিসেবে পরিশোধ করতে হবে।
লোকসানি প্রতিষ্ঠান হওয়ায় বিজেএমসির (বাংলাদেশ জুট মিল কর্পোরেশন) কাছে এতদিন শ্রমিকদের বেতন ও ভাতা দিতে ভরসা পায়নি সরকার। তাই, সরকারি কোষাগার থেকে সরাসরি শ্রমিকদের নিজস্ব এ্যাকাউন্টে জমা দেওয়া হবে বলে আগেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অর্থ বরাদ্দ দিল সরকার।
এদিকে বকেয়া বেতন, মজুরি ও উৎসব ভাতার দাবিতে খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাটকল শ্রমিকেরা আন্দোলন করে আসছিলেন। গত ৫ মে দুপুর থেকে খুলনা-যশোর অঞ্চলের নয়টি পাটকলে কর্মবিরতি শুরু হয়। পরবর্তীতে ১৩ মে থেকে সারাদেশের ২৬টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলে এ ধর্মঘট ছড়িয়ে পড়ে। গত ২১ মে জেলা প্রশাসকের সাথে বৈঠক শেষে তিন শর্তে শ্রমিক নেতারা এক সপ্তাহের জন্য আন্দোলন স্থগিত করে। অবশেষে গতকাল সোমবার শ্রমিকদের জন্য এই বরাদ্দ দেয়া হলো।
পাটকল শ্রমিক লীগের খুলনা ও যশোর অঞ্চলের আহ্বায়ক মুরাদ হোসেন বলেন, পাটকলের শ্রমিকদের জন্য জরুরি বিবেচনায় অর্থ বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। এ সংবাদে আমরা খুশি। ঈদ সমাগত। অথচ শ্রমিকরা মজুরি নিয়ে হতাশায় ছিলো। মজুরি কমিশনসহ ৯ দফা দাবিতে আন্দোলন করেছে অধাহারে-অনাহারে থাকা শ্রমিকরা। দীর্ঘদিন ধরে না খাওয়া শ্রমিকরা এ খবর শুনে অনেক খুশি হয়েছেন। তবে নয় দফা দাবি আদায়ের জন্য শ্রমিকরা যে আন্দোলন করছিলেন তার মধ্যে কেবল একটি দাবি পূরণ হয়েছে। আমরা মজুরি কমিশনসহ বাকি দাবিগুলো পূরণ না হওয়ায় হতাশ হয়েছি।
প্লাটিনাম জুট মিলের সিবিএ সভাপতি শাহানা শারমিন বলেন, শ্রমিকদের টাকা বরাদ্দ হয়েছে শুনে ভালো লাগছে। তবে শ্রমিকদের খুশির মাঝেও হতাশা বিরাজ করছে। বকেয়া মজুরি হাতে না পাওয়া পর্যন্ত তারা খুশি হতে পারছে না। একই সাথে মজুরি কমিশনসহ ৯ দফা দাবিতে শ্রমিকরা আন্দোলন করেছে। কিন্তু প্রতিশ্র“ত সকল দাবি আদায় হয়নি। অন্তত মজুরি কমিশন বাস্তবায়ন করে শ্রমিকদের মজুরি প্রদান করলে শ্রমিকরা আনন্দিত হতো।
পাটকলগুলোর সূত্রে জানা যায়, খুলনার ক্রিসেন্ট, প্লাটিনাম, স্টার, খালিশপুর, দৌলতপুর, ইস্টার্ন, আলিম এবং যশোরের জেজেআই ও কার্পেটিং জুটমিলে স্থায়ী শ্রমিক রয়েছেন ১৩ হাজার ১৭০ জন এবং বদলি শ্রমিক সংখ্যা ১৭ হাজার ৪১৩ জন। শ্রমিকদের ৯ থেকে ১২ সপ্তাহের মজুরি এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ৪ মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে।
এ ব্যাপারে বিজেএমসি’র খুলনা আঞ্চলিক সমন্বয়কারী মোঃ সাজ্জাদ হোসেন বলেন, খুলনা অঞ্চলের ৯টি পাটকলে শ্রমিক-কর্মচারী-কর্মকর্তাদের পাওনার পরিমাণ প্রায় ৫৮ কোটি ৭০ লাখ টাকা। আর বোনাস বাবদ আরো প্রায় ৭ থেকে ৮ কোটি টাকা যোগ হবে।
⇘সংবাদদাতা: সেবা ডেস্ক
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।