স্থানীয়দের সম্পৃক্ততায় টেকসই হবে কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বাস্থ্যসেবা

S M Ashraful Azom
0
স্থানীয়দের সম্পৃক্ততায় টেকসই হবে কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বাস্থ্যসেবা
সেবা ডেস্ক: কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো স্থানীয় জনগণের সম্পৃক্ততায় চললে এটি টেকসই হবে। স্থানীয় ব্যক্তিদের নিবিড় সম্পৃক্ততা ছাড়া এ ক্লিনিকগুলো ভালোভাবে চালানো সম্ভব নয়। এই ক্লিনিকের কার্যকারিতা অনেকাংশে কমিউনিটি গ্রুপ এবং কমিউনিটি সাপোর্ট গ্রুপের সক্রিয় অংশগ্রহণের ওপর নির্ভরশীল। এসব গ্রুপের দক্ষতা বৃদ্ধি, জবাবদিহিতার ব্যবস্থা এবং আরও সক্রিয় অংশগ্রহণের উদ্যোগ খুবই দরকার।

সোমবার (২৭ মে) সকাল ১১টার দিকে খুলনা নগরীর একটি অভিজাত হোটেলে ‘কমিউনিটি ক্লিনিকের সেবার মান উন্নয়ন শীর্ষক’ এক কর্মশালায় এসব কথা উঠে আসে।

সভায় বক্তারা বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিকে সুপেয় পানির উৎস না থাকা, স্বাস্থ্য-সম্মত স্যানিটেশন ব্যবস্থার অভাব, চিকিৎসা সরঞ্জামাদির ব্যবহার উপযোগিতা নিশ্চিত না করা অপর্যাপ্ত ওষুধ সরবারহসহ প্রসব সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধার অনুপস্থিতি ও জরাজীর্ণ অবকাঠামোর কারণে মানসম্মত সেবাদানে সমস্যার সম্মূখীন হচ্ছে। এগুলো কাটিয়ে ওঠা খুবই জরুরি।

আমেরিকান সরকারের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (ইউএসএআইডি) ফুড ফর পিস (দ্বিতীয় পর্যায়) খাদ্য সহায়তা কার্যক্রমের অর্থায়নে ‘নবযাত্রা’ প্রকল্প ওই কর্মশালার আয়োজন করে।

ক্লিনিকগুলো বাড়ির কাছাকাছি হওয়ায় এবং সেখানে বিনা মূল্যে সাধারণ রোগের ওষুধ পাওয়া যায় বলে দিনদিন এই সেবাগ্রহীতার সংখ্যা বাড়ছে। বেসরকারি ওই উন্নয়ন সংস্থার তথ্যমতে, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের চারটি উপজেলার ১১৯টি কমিউনিটি ক্লিনিকে মাত্র ২২ শতাংশ ক্লিনিকে নিরাপদ পানির ব্যবস্থা ও ১৩ শতাংশ ক্লিনিকে ব্যবহার উপযোগি স্যানিটেশন রয়েছে। ওই প্রকল্পের মাধ্যমে ২৫ শতাংশ কমিউনিটি ক্লিনিকে পয়ঃনিষ্কাশন এবং সুপেয় পানির ব্যবস্থাসহ অবকাঠামো উন্নয়ন সাধিত হয়েছে।

আলোচনা সভায় মুক্ত আলোচনা পর্বে বক্তারা বলেন, শতভাগ ক্লিনিকে এখনও পর্যন্ত প্রয়োজনীয় ওষুধের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা যায়নি, যেটা খুবই জরুরি। কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে ‘নাগরিক সনদ’ (সিটিজেন চার্টার) থাকাটা আবশ্যক। স্থানীয়ভাবে এই ক্লিনিকের বিষয়ে জোর প্রচারণা থাকাটাও জরুরি। স্বচ্ছন্দে সেবাদান কার্যক্রম অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত পরিমাণ আসবাবপত্র রাখাটাও খুবই দরকার। বাৎসরিক কর্মপরিকল্পনা ভালোভাবে করলে ক্লিনিক ভালোভাবে চলবে।

তাঁরা বলেন, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের বাৎসরিক উন্নয়ন পরিকল্পনা ও বাজেটে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার লক্ষে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ রাখা দরকার। মাতৃসেবার মান বাড়ানোর জন্য সংশ্লিষ্টদের আরও প্রশিক্ষণ দেওয়া দরকার। কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহার যাতে না হয় সে ব্যাপারে আরও সতর্ক থাকার জন্য প্রয়োজনীয় তদারকির ব্যবস্থা রাখার সুপারিশ করা হয়।

বক্তারা আরও বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাই কম বেশি সেবা পেয়ে থাকেন। বিভিন্ন ধরনের সেবার মান দিনে দিনে উন্নত হচ্ছে তবে স্থানীয় পর্যায়ে তা আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে পারলে কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব।

খুলনার স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক রাশেদা সুলতানার সভাপতিত্বে সভায় শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন স্বাস্থ্য বিভাগ খুলনার সহকারি পরিচালক মো. মঞ্জুরুল মুরশিদ, খুলনার পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের পরিচালক মো. শরিফুল ইসলাম, খুলনার স্থানীয় সরকার বিভাগের পরিচালক হোসেন আলী খোন্দকার ও নবযাত্রা প্রকল্পের চিফ অব পার্টি রাকেশ কাটালসহ আরও অনেকে।

কর্মশালায় অতিথিরা বলেন, স্থানীয় সরকার বিভাগের সদস্য ও সিএইচসিপির সদস্যরা আলোচনার মাধ্যমে সুনির্দিষ্ট কমিটি করে কমিউনিটি ক্লিনিকের উন্নয়ন করা সম্ভব। ‘অনেক সেবাকেন্দ্রে পানি সরবরাহের জন্য টিউবওয়েল আছে, কিন্তু তা অকেজো অবস্থায় আছে। নিরাপদ পানির জন্য টিউবওয়েল মেরামত ও প্রয়োজনে নতুন টিউবওয়েল পুনঃস্থাপনের ব্যবস্থা করা দরকার।’ তাঁরা আরও বলেন, দেশ উন্নয়নের মহাসড়কের দিকে যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তাতে স্বাস্থ্যসেবা আরও বৃদ্ধি করতে হবে। উন্নয়নের সঙ্গে মানুষের চিকিৎসা সেবা কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে নিশ্চিত করা প্রয়োজন। প্রথম দিকের ক্লিনিকের নির্মাণকাজ তদারক করা সম্ভব হয়নি বলে তাতে কিছু ত্রুটি আছে। তবে একটি জায়গা থেকে (ক্লিনিক) মানুষ স্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা ও পুষ্টিসেবা পাচ্ছে, এটা বিরাট ব্যাপার। কিন্তু বর্তমানে ভবন ও অবকাঠামো নির্মাণে অনেকটা ভালো হচ্ছে বলে দাবী করেন তাঁরা। দুই কিলোমিটারের মধ্যে ছয় হাজার জনসংখ্যা থাকলে স্বাস্থ্যসেবার জন্য সেখান কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ করা সম্ভব বলে জানান অতিথিরা।

কমিউনিটি ক্লিনিকের সেবার মান উন্নয়নে নবযাত্রা প্রকল্পের অভিজ্ঞতা, শিখন ও প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন নবযাত্রা প্রকল্পের পলিসি অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি ডাইরেক্টর প্রোগ্রাম মোহাম্মদ নূরল আলম রাজু।

কর্মশালায় সাতক্ষীরা ও খুলনা জেলার স্থানীয় সরকারের উপপরিচালক, খুলনার দাকোপ ও কয়রা এবং সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ ও শ্যামনগর উপজেলার উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়াম্যান ও সদস্য, বেসরকারী উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালক, সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) প্রতিনিধি, উন্নয়নকর্মী, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, গ্রাম উন্নয়ন কমিটির সদস্য, সিএইচসিপি, প্রকল্পের কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমকর্মী অংশ নেন।

⇘সংবাদদাতা: সেবা ডেস্ক
ট্যাগস

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top