দালালের খপ্পরে পরে রোগীর ব্যয় ৬০ গুণ

S M Ashraful Azom
0
দালালের খপ্পরে পরে রোগীর ব্যয় ৬০ গুণ
সেবা ডেস্ক: আপনি কে? হাসপাতালে কেন হাঁটাহাঁটি করছেন? কোনো রোগী আছে নাকি? উত্তরে, না, রোগী নেই; আমি সাংবাদিক। কী কাজে আসছেন? সংবাদের কাজে।

সংবাদের কাজে এলে তো ডিরেক্টরের অনুমতি নেওয়া লাগে! তাই নাকি? তা দালালরা কি তাহলে অনুমতি নিয়েই তৎপরতা চালাচ্ছে?

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে দালালদের তৎপরতা সম্পর্কে জানতে সম্প্রতি সরেজমিন অনুসন্ধানকালে এমন বাক্যবিনিময় হয় হাসপাতালের ২ নম্বর ভবনে দায়িত্বরত জ্যেষ্ঠ সেবিকা সুরমা আক্তারের সঙ্গে। ষষ্ঠ তলার ৬০২ নম্বর ওয়ার্ডের নার্সদের এই ইনচার্জ  যাওয়ার আগে বললেন, ‘ওয়ার্ডে দালালরা যাতে না ঢুকতে পারে সে জন্য আমরা তৎপর। তবে জরুরি বিভাগের কিছু দালাল এখানে ঢুকে পড়ে। ’

সরেজমিন পরিদর্শনকালে দালালচক্রের নানামুখী তৎপরতা ও রোগীদের বিড়ম্বনার চিত্র ধরা পড়ে। বিশেষত জরুরি বিভাগ, বহির্বিভাগ ও হাসপাতালের নতুন ভবনে (মেডিক্যাল ভবন-২) দালালদের দৌরাত্ম্যে নানামুখী ভোগান্তিতে পড়ে রোগী ও সঙ্গে থাকা স্বজনরা।

রোগী নিয়ে হাসপাতাল চত্বরে পা দিতেই শুরু হয় ভোগান্তি। হুইলচেয়ার অথবা ট্রলিতে করে ভবনে ঢুকতেই দিতে হয় ৫০ থেকে ১০০ টাকা। আর দালালরা ধরে তুললে অথবা কোনো রকম সহায়তা করলে দিতে হয় ন্যূনতম ৫০০ টাকা। আর ভর্তির কথা বলে নিচ্ছে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা।

বেড দেওয়ার কথা বলে আরো ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা। এভাবে সব মিলিয়ে বিভিন্নভাবে প্রায় দেড় হাজার টাকা শুরুতেই হাতিয়ে নেয় দালালচক্র। অথচ একজন রোগী ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এলে শুরুতে জরুরি বিভাগের কাউন্টার থেকে ১০ টাকা দিয়ে টিকিট সংগ্রহ করার পর চিকিৎসকের পরামর্শে ভর্তি হতে গেলে আরো ১৫ টাকার টিকিট নিতে হয়। সে হিসাবে সর্বমোট লাগার কথা ২৫ টাকা। এর পর থেকে হাসপাতালে রোগীর চিকিৎসায় আর কোনো ব্যয়ের খাত থাকার কথা নয়। তবে বাইরে থেকে কোনো ওষুধ কেনার প্রয়োজন হলে ভিন্ন কথা।
এ বিষয়ে কথা বললে ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন বলেন, ‘ভর্তির বিষয়টি পুরোপুরি চিকিৎসকদের পরামর্শে হয়ে থাকে। হাজার হাজার মানুষের ভেতরে এমনটা হতেই পারে। যে যে ওয়ার্ডের কথা বললেন সেগুলোতে আমরা শিগগিরই শুদ্ধি অভিযান চালাব। ’

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা বিভিন্নভাবে দালালচক্রের মাধ্যমে প্রতারিত হচ্ছে। হাসপাতালের নতুন ভবনের ষষ্ঠ তলার ৬০২ নম্বর ওয়ার্ডে রোগী নিয়ে আসে ইমাম ও তানভীর নামের দুই দালাল। ওয়ার্ডে আনার পর ইমাম ভর্তি করানো বাবদ ৬০০ টাকা দাবি করে। রোগীর ছোট ভাই আমিনুর রহমান ২০০ টাকা দিলে ফেলে দেয় ইমাম। পরে অনেক দর-কষাকষি শেষে ৫০০ টাকা আদায় করা হয়। যাওয়ার আগে বেড পাওয়ার জন্য কয়েকজন খালার (দালাল) সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়ে যায় ইমাম।

পেটে সমস্যা নিয়ে আব্দুল হোসেন নামের এই রোগী এসেছেন টাঙ্গাইল থেকে। তাঁর ছোট ভাই আমিনুর কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘নিচ থেকে আমাদের ওপরে নিয়ে এসে ৬০০ টাকা দাবি করে ওই (ইমাম) লোক। অনেক অনুরোধ করে ৫০০ টাকা দিতে পেরেছি। উনি নাকি ভর্তি করিয়েছেন। ’ এদিকে রোগী ভোগান্তির তথ্য সংগ্রহের সময় টের পেয়ে দালালচক্র এই প্রতিবেদককে নজরে রাখতে থাকে। আল-আমীন নামের এক দালালের সঙ্গে ক্রমে যোগ দেয় কমপক্ষে আরো ছয়জন। এই চক্রের অবস্থান রোগীদের জন্য তৈরি করা অতিরিক্ত ৬ নম্বর কক্ষ।

হাসপাতালের নতুন ভবনের সামনে প্রকাশ্যে দালালচক্রের কোনো সদস্য না ঘুরলেও অ্যামু্বল্যান্স ভাড়ার আড়ালে তাদের অবস্থান রয়েছে। একই অবস্থা জরুরি বিভাগের সামনেও। তবে তাদের আর আগের মতো প্রকাশ্যে কাজ করতে দেখা যায় না। এ ছাড়া সিটি স্ক্যান ও এক্স-রে কক্ষের সামনে নারী দালালদের ঘুর ঘুর করতে দেখা যায়। তাদেরকে রোগীর লোকজনের সঙ্গে ইশারা-ইঙ্গিতে কথা বলে টাকা নিয়ে ভেতরে এন্ট্রি কর্মীর সঙ্গে যোগসাজশে আগে কাজ করে দিতেও দেখা যায়। পারভীন আক্তার নতুন ভবনে দালালদের (খালা) মধ্যে অন্যতম একজন। জানা যায়, এই ভবনে সক্রিয় দালালদের সার্বক্ষণিক সহযোগিতা দেন দায়িত্বরত আনসার সদস্য আনাস, সাব্বির ও ইব্রাহীম।

গত ২৩ মে বৃহস্পতিবার বহির্বিভাগে দেখা যায় কয়েকজন নারী দালাল টিকিট কাউন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। কোনো রোগী বা রোগীর স্বজন কাউন্টারের দিকে যাওয়ার পথে তাদের প্রশ্ন—কী সমস্যা? বেড লাগবে? নাকি পরীক্ষা করাতে হবে? সব ব্যবস্থা করে দেব, চলেন।

জানা গেছে, হাসপাতালে তৎপর রয়েছে বড় একটি দালালচক্র। তাদের সবাই আবার প্রকাশ্যও নয়। এ জন্য সবার নামও জানা যায়নি। তবে সার্বক্ষণিক তৎপর দালালদের একজন শোভা আক্তারের অবস্থান সাধারণত অর্থোপেডিক এলাকায়। তার সঙ্গে মায়া, শরীফা, জয়ন্তিসহ আরো কয়েকজন কাজ করে। তবে বহির্বিভাগে মূল নেতৃত্বে থাকে শোভা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিকিৎসক বলেন, ‘আমরা দালালদের চিনি না, আবার চিনিও। তারা বিভিন্ন সময় রোগী নিয়ে এসে দাঁড়িয়ে থাকে। একটু আগে করে দিতে বলে। এর জন্য তারা টাকা নেয় কিনা সেটা আমার জানা নেই। তবে শুনেছি তারা টাকার জন্য অনেক সময় রোগীর আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে। ’-

 কালের কন্ঠ-সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন

ট্যাগস

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top