ভয়ঙ্কর অপরাধির রুপ নিচ্ছে রোহিঙ্গারা

S M Ashraful Azom
0
ভয়ঙ্কর অপরাধির রুপ নিচ্ছে রোহিঙ্গারা
সেবা ডেস্ক: কক্সবাজারের তিন উপজেলায় আশ্রয় পাওয়া বার্মা থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে। এতে স্থানীয় প্রশাসন ও বাসিন্দারা আতঙ্কিত। তাদের নানা অপরাধের কারণে শুধু কক্সবাজারই নয় দেশের অন্যান্য অঞ্চলের বাসিন্দারাও আতঙ্কে রয়েছে।

জানা গেছে, ওই তিন উপজেলায় যে সকল ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের রাখা হয়েছে, সেখানকার বেশিরভাগ এলাকা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণের বাইরে। চারদিক খোলা থাকায় নির্বিঘ্নে ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গারা পালিয়ে যাচ্ছে। তারা ক্যাম্পে থাকে ও খায়। আর অবাধে অপরাধ করে বেড়াচ্ছে। গহীন অরণ্যে গড়ে তুলেছে অপরাধের স্বর্গরাজ্য। মাদক ও অস্ত্র পাচারের মতো কাজে তারা জড়িত। যা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নজরের বাইরে কিংবা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সেই পর্যন্ত যাওয়া সম্ভবই হয় না।

সারাদেশে প্রায় কয়েক লক্ষ রোহিঙ্গা ছড়িয়ে পড়েছে। তারা ইয়াবা বেচাকেনাসহ নানা অপরাধ করছে। এ পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ৫৬ হাজার রোহিঙ্গাকে আটক করে ক্যাম্পে ফেরত পাঠিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। আরো প্রায় তিন লক্ষ রোহিঙ্গা দেশের বিভিন্ন এলাকায় নানা পরিচয়ে আত্মগোপনে রয়েছে। ইয়াবা ব্যবসা, মানবপাচার, অপহরণ, চাঁদাবাজি, হাটবাজার নিয়ন্ত্রণ রাখতে প্রতিটি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে একাধিক সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে উঠেছে। সন্ধ্যা হলে ক্যাম্পের ভেতরে সন্ত্রাসীরা অস্ত্র নিয়ে নেমে পড়ে। পুরো ক্যাম্প তখন তাদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। নির্ধারিত হারে চাঁদা না দিলে অপহরণ, গুম, খুন প্রায়ই হচ্ছে ক্যাম্পগুলোতে। সন্ধ্যা হলে পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ক্যাম্পের বাইরে টহল দেয়। অন্যদিকে ক্যাম্পের অভ্যন্তরে সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো অপরাধের জন্য অস্ত্র নিয়ে মহড়া দেয়। সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর মধ্যে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষে এ পর্যন্ত ৩৮ জন খুন হয়েছে।

স্থানীয় পুলিশ ও অন্যান্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বর্তমানে যে অবস্থায় রোহিঙ্গাদের রাখা হয়েছে, তাদেরকে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। তাদের মধ্যে হানাহানি, সংঘর্ষ, খুন, গুম বেড়েই চলছে। রোহিঙ্গারা খুবই বেপরোয়া ও হিংস্র। বড় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটানোর আশঙ্কা রয়েছে বলে স্থানীয় প্রশাসন ইত্তেফাককে জানিয়েছে। দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা বেষ্টনিতে নির্ধারিত জায়গায় রাখা ছাড়া কোন বিকল্প নেই। কে কি বললো সেদিকেও নজর দেওয়ার প্রয়োজন নেই বলে স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

টেকনাফ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রবিউল হাসান বলেন, রোহিঙ্গারা দিনে দিনে যেভাবে বেপরোয়া হয়ে উঠছে, তাদেরকে নির্ধারিত স্থানে নিরাপত্তা বেষ্টনিতে রাখার জন্য সময় সময় শীর্ষ প্রশাসনের কাছে জানানো হয়েছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মো. আসাদুজ্জামান খান কামাল জানান, শুরু থেকে আমরা বলে আসছি যে রোহিঙ্গারা কত বেপরোয়া। এরা এতটা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে যে, তারা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। এটা শুধু বাংলাদেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকি নয়, আশপাশের রাষ্ট্রের জন্য চরম হুমকি। নির্ধারিত স্থান রোহিঙ্গাদের চারদিকে কাটা তারের বেড়া দিয়ে পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নিরাপত্তা বেষ্টনিতে রাখার জন্য আমরা বলে আসছি। এর বাইরে থাকলে তারা সন্ত্রাসী হয়ে উঠবে। এসব বিষয়গুলো আমরা আন্তর্জাতিক মহলকে জানিয়েছি। তাদের জন্য নির্ধারিত জায়গা করা হয়েছে। সেখানে চিকিত্সাসহ স্বাস্থ্যসম্মত ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু সেখানে তাদেরকে নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। রোহিঙ্গাদের যত দ্রুত তাদের জন্মভূমিতে পাঠানো সম্ভব ততোই বাংলাদেশসহ বিশ্বের নিরাপত্তার জন্য মঙ্গল। তবে বর্তমানে যে অবস্থায় রোহিঙ্গারা রয়েছে, চারদিকে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে তাদের নিরাপত্তা বেষ্টনিতে রাখার কার্যক্রম চলছে।

স্থানীয় প্রশাসন থেকে জানা যায়, টেকনাফ ও উখিয়া উপজেলা ক্যাম্পে রোহিঙ্গারা স্থানীয় বাসিন্দাদের হুমকি দিচ্ছে যে, তোমরা এখনে ব্যবসা বাণিজ্য করতে পারবে না। চাষাবাদও করতে পারবে না। কারণ তোমাদের সরকার আমাদের খাওয়া-দাওয়ায় সাহায্য করছে না। আমাদের সাহায্য করছে এনজিও ও বিদেশিরা। স্থানীয় বাসিন্দারা এ ধরনের অভিযোগ স্থানীয় প্রশাসনের কাছে লিখিত আকারে জানিয়েছে। অভিযোগকারীদের মধ্যে রয়েছেন উখিয়া উজেলার বালুখালীর ফরিদ আলম বুলু, তাজনিমার খোলা এলাকার হেলাল ও সফিউল্লাহ কাটা এলাকার আব্দুস সালাম।

এক শ্রেণীর এনজিও রোহিঙ্গাদের এই এলাকায় থাকার জন্য নানাভাবে প্রভাবিত করে আসছে। এসব এনজিওর কারণে রোহিঙ্গারা সন্ত্রাসসহ জঙ্গিবাদের মতো ভয়ঙ্কর কর্মকান্ডে লিপ্ত হচ্ছে। আর এসব কাজে অর্থ যোগান দিচ্ছে ওই সব এনজিও। ভাসানচরের মতো সুন্দর নিরাপদ পরিবেশে রোহিঙ্গাদের জন্য প্রস্তুত রাখা হলেও এনজিওগুলোর কারণে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর করা সম্ভব হচ্ছে না। এই এনজিওগুলো আন্তর্জাতিক মহলে রোহিঙ্গাদের নিয়ে মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছে। রোহিঙ্গাদের সাহায্য-সহযোগিতার নামে এরা কোটি কোটি টাকা আত্মসাত্ করে আসছে। আর এনজিও কর্মকর্তারা সমুদ্র সৈকতে বিলাসবহুল জীবন-যাপন করছেন।

পুলিশসহ স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, টেকনাফ ও উখিয়ার রোহিঙ্গা শিবিরে সাতটি করে সন্ত্রাসী বাহিনী আছে। এর মধ্যে টেকনাফের আবদুল হাকিম বাহিনী বেশি তত্পর। এই বাহিনীর সদস্যরা মুক্তিপণ আদায়ের জন্য যখন-তখন লোকজনকে অপহরণ করে। ২০১৬ সালের ১৩ মে টেকনাফের মুছনী রোহিঙ্গা শিবিরের পাশে শালবন আনসার ক্যাম্পে হামলা চালায় হাকিম বাহিনী। এ সময় আনসার কমান্ডার আলী হোসেন তাদের গুলিতে নিহত হন। তারা লুট করেছিল আনসারের ১১টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ৭ শতাধিক গুলিও।

শুক্রবার ভোররাতে টেকনাফে তিন রোহিঙ্গা পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে। তারাও সম্প্রতি এক রোহিঙ্গা শিশুকে অপহরণ করে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবির অভিযোগে অভিযুক্ত ছিল বলে জানান টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ। তারাও রোহিঙ্গা হাকিম ডাকাতের দলভূক্ত থাকতে পারে বলে অভিমত রোহিঙ্গা ভূক্তভোগীদের।


 -সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন

ট্যাগস

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top