শুধু অমিতই নয়, খুন হয়েছিল আরো ২ শীর্ষ সন্ত্রাসী!

S M Ashraful Azom
0
শুধু অমিতই নয়, খুন হয়েছিল আরো ২ শীর্ষ সন্ত্রাসী!
সেবা ডেস্ক:  চট্টগ্রামের কেন্দ্রীয় কারাগারের মূল ফটকে লেখা আছে, ‘রাখিব নিরাপদ, দেখাব আলোর পথ’। অর্থাৎ কারাগারে যে সকল বন্দী থাকেন তাদের নিরাপদে রাখার পাশাপাশি তাদের অন্ধকার থেকে আলোর পথে নিয়ে আসার মন্ত্রই ধ্বনিত হয়েছে আলোচ্য স্লোগানে।

অথচ সেই কারাগারেই হচ্ছে মারামারি, ঘটছে খুনের ঘটনা। কারাগারকে বলা হয় সংশোধনাগার। অথচ সবচেয়ে সুরক্ষিত স্থান সেই কারা অভ্যন্তরেই গত ২৯ মে রিপন নাথের হাতে খুন হয় কয়েদী অমিত মুহুরী। দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী হিসেবে অল্প দিনেই নগরীর ত্রাস হিসেবে আবির্ভূত হয় অমিত মুহুরী।

গত ২৯ মে অপর এক বন্দির হাতে শীর্ষসন্ত্রাসী অমিত মুহুরী খুনের ঘটনা ঘটে। কারাগারে অমিত মুহুরীর সাথে থাকা অন্য হাজতি বেলাল ইতোমধ্যে তদন্ত টীমকে জানিয়েছে, ৩০ মে বৃহস্পতিবার অমিত মুহুরীর আদালতে হাজিরা ছিল।

হাজিরা থাকলে আগের রাতে অমিত মুহুরী দ্রুত ঘুমিয়ে পড়ে। বুধবার রাতেও ১০টার মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়ে। এরপর ঘুমিয়ে পড়ে বেল্লাল নিজেও। কিছুক্ষণ পর ঘুম ভেঙে দেখে রিপন একটি ইট দিয়ে মুহুরীর মাথায় আঘাত করছে।

অমিত মুহুরীর মৃত্যুর ঘটনায় চট্টগ্রাম কারাগারের জেলার নাশির আহমেদ বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলার এজাহারেও বাদী উল্লেখ করেন, ৬ নম্বর সেলে বন্দি থাকা অবস্থায় গত ২৯ মে বুধবার রাত ১০টা ১৫ মিনিটে কারারক্ষী শাহ পরান দেখেন হাজতি রিপন নাথ একটি ভাঙা ইট দিয়ে অমিত মুহুরীর মাথায় আঘাত করছে।

পরে কক্ষের তালা খুলে অমিত মুহুরীকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাকে ২৮ নম্বর ওয়ার্ডে রেখে চিকিৎসা দেয়া হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ১টা ১৫ মিনিটে অমিত মুহুরী মারা যায়।

অমিতের পিতা অরুণ মুহুরী বলেন, কারা কর্তৃপক্ষ শুরু থেকে নিজেদের বাঁচাতে ঘটনাটি আড়াল করার চেষ্টা করে। চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) মিজানুর রহমান বলেন, এ খুনের বিষয়ে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট কারণ বলা সম্ভব নয়। তবে কয়েকটি বিষয় সামনে রেখে ঘটনা তদন্ত করা হচ্ছে। এরমধ্যে খুনে অভিযুক্ত রিপন নাথ প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে দায় স্বীকার করেছে। তাকে রিমান্ডে এনে খুনের পেছনে অন্য কোনো কারণ রয়েছে কিনা তা উদ্ঘাটন করা হবে।

তবে চট্টগ্রাম কারাগারে এটিই প্রথম খুনের ঘটনা নয়, ১৯৯৮ সালের ৯ মে খুন হয় সেই সময়ের গ্র্যান্ড আলম। বন্ধু সেজে দেখা করতে গিয়ে কারাগারের ভেতরেই গলায় ব্লেড চালিয়ে তাকে হত্যা করে আরেক বন্দি কেলা কাদের। যুবলীগ নেতা আলমকে ১৯৯৭ সালের ১৪ আগস্ট অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। তার বিরুদ্ধে হত্যা, অস্ত্র ও চাঁদাবাজিসহ ১৯ টি মামলা ছিল।

সেই সময় আলোচিত এ হত্যাকান্ডকে পরিকল্পিত খুন দাবি করে আলমের অনুসারী ও তার পরিবার চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন ও মানববন্ধন করেছিল। পরে কেলা কাদেরকে আসামি করে কারা কর্তৃপক্ষ মামলা করে। গঠিত হয় তদন্ত কমিটি। সেই কমিটি খুনের কোনো সুস্পষ্ট কারণ খুঁজে বের করতে পারেনি। তবে কেলা কাদেরকে হত্যাকারী হিসেবে চিহ্নিত করা হয় চার্জশিটে।

পরে আলম হত্যায় কাদেরকে ফাঁসির আদেশ দেন আদালত। তবে হাইকোর্টে আপিল করে জামিনে বেরিয়ে যান কেলা কাদের। ভারতীয় নাগরিক জিবরান তায়েবী হত্যা মামলার আসামী কিলার ওসমানকেও ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয় চট্টগ্রাম কারাগারের ভেতরে ২০০০ সালের দিকে। গত দুই দশকে এই কারাগারে ঘটল তিনটি হত্যাকান্ডের ঘটনা।

খুন হওয়া তিনজনই শীর্ষ সন্ত্রাসী। বড় কোনো অপরাধের ঘটনা ধামাচাপা দিতে এসব হত্যাকান্ড ঘটানো হয়েছে কি-না তা খতিয়ে দেখার দাবি সংশ্লিষ্টদের। মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট জিয়া হাবীব আহসান বলেন, পুলিশকে দিয়ে নয়, জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে এই খুনের তদন্ত করা জরুরি।

তিনি বলেন,কারাগারের ভেতরে খুন হওয়া ব্যক্তিরা সবাই বড় ধরণের অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত। কিন্তু হত্যাকান্ডগুলোর নেপথ্যের নায়কদের খুঁজে বের করা হয় না কখনোই। কারাগারের ভেতরে এ ধরনের ঘটনা ঘটলে প্রশ্ন ওঠাইতো স্বাভাবিক।

 -সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন

ট্যাগস

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top