
সেবা ডেস্ক: পবিত্র রমজান মাসের রোজা রাখার পর পরবর্তী মাস শাওয়ালে ছয়টি রোজা রাখার গুরুত্ব ইসলামে অপরিসীম।
রমজান মাস শেষ। শাওয়ালের প্রথম মুমিন মুসলমান ঈদ আনন্দ উদযাপন করে। ঈদ পরবর্তী শাওয়াল মাসে ৬টি রোজায় সারা বছর রোজার রাখার সওয়াব মেলে।
শাওয়াল মাসের প্রথম দিন মুসলমানের জন্য রোজা রাখা হারাম। এদিন রোজাদারদের জন্য আনন্দের দিন। তাই ঈদের পরে শাওয়াল মাসের যে কোনো ৬ দিন রোজা রাখায় রয়েছে বছরজুড়ে রোজা রাখার সাওয়াব।
শাওয়ালের ছয়টি রোজার মাধ্যমে রমজানের রোজা আদায়ের তাওফিকের শুকরিয়াও আদায় করা হয়। যখন কোনো বান্দার আমল আল্লাহ তায়ালা কবুল করেন, তখন তাকে অন্য একটি নেক আমলের তাওফিক দেন। সুতরাং এ রোজাগুলো রাখতে পারা রমজানের রোজা কবুল হওয়ারও লক্ষণ। রাসূলুল্লাহ (সা.) নিজে এ রোজা রাখতেন এবং সাহাবায়ে কেরামদের রোজা রাখার নির্দেশ দিতেন।
হজরত আবু আইয়ুব আনসারি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি রমজানের রোজা রাখল, অতঃপর শাওয়ালের ছয়টি রোজা রাখল, সে যেন সারা বছরই রোজা রাখল।’ (মুসলিম : ২/৮২২)
রমজানের ৩০টি রোজার সঙ্গে শাওয়ালের ছয়টি রোজা যুক্ত হলে মোট রোজার সংখ্যা হয় ৩৬টি। আর প্রতিটি পুণ্যের জন্য ১০ গুণ পুরস্কারের কথা উল্লেখ রয়েছে কোরআনুল কারিমে। তাহলে ৩৬টি রোজার ১০ গুণ হলে ৩৬০টি রোজার সমান (এটি পুরস্কারের দিক থেকে)। অর্থাৎ সারা বছর রোজার সমান সওয়াব হবে।
হজরত সাওবান (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘রমজানের রোজা ১০ মাসের রোজার সমতুল্য আর (শাওয়ালের) ছয় রোজা দুই মাসের রোজার সমান। সুতরাং এ হলো এক বছরের রোজা।’ (নাসায়ি : ২/১৬২)
সূরা আনআমের ১৬০ নম্বর আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, যে ব্যক্তি একটি সৎকর্ম করল, সে ১০ গুণ সওয়াব পাবে। এ হিসাবে যে ব্যক্তি রমজানের এক মাস রোজা রাখল, সে ১০ মাস রোজা রাখার সওয়াব পাবে। আর ছয়টি রোজার ১০ গুণ ৬০ দিন। অর্থাৎ দুই মাস। আর এ দুই মাস মিলে ১২ মাস রোজার সওয়াব।
হজরত উবাইদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমি কী সারা বছর রোজা রাখতে পারব?’ রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমার ওপর তোমার পরিবারের হক রয়েছে। কাজেই তুমি সারা বছর রোজা না রেখে রমজানের রোজা রাখো এবং রমজান-পরবর্তী শাওয়ালের ছয়টি রোজা রাখো, তাতেই সারা বছর রোজা রাখার সওয়াব পাবে।’ (তিরমিজি : ১/১৫৭)
শাওয়ালের ছয়টি রোজা নারী-পুরুষ সবার জন্যই সুন্নত। মাসের শুরু-শেষ কিংবা মাঝামাঝি—সব সময়ই রাখা যায় এ রোজাগুলো। একনাগাড়ে অথবা মাঝে ফাঁক রেখে পৃথকভাবেও রাখা যায়। শাওয়াল মাসে শুরু করে শাওয়াল মাসে শেষ করলেই হলো। তবে ঈদুল ফিতরের পর শাওয়ালের প্রথম দিকে একসঙ্গে ছয়টি রোজা রাখাই উত্তম।
উল্লেখ্য যে, যাদের রমজানের রোজার কাজা আছে, তাদের জন্য শাওয়ালের রোজা রাখা জরুরি নয়। সেক্ষেত্রে আগে রমজানের রোজার কাজা আদায় করে নেয়া। তারপর সম্ভব হলে শাওয়ালের রোজা আদায় করা।
মনে রাখতে হবে-
শাওয়ালের ৬ রোজায় বছরজুড়ে রোজা রাখার ফজিলত ওই ব্যক্তির জন্যই কার্যকর হবে, যে ব্যক্তি রমজান মাসজুড়ে ফরজ রোজা আদায় করেছেন এবং শাওয়ালের রোজা পালন করেন।
মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালা মুসলিম উম্মাহকে রমজানের রোজা পালনের পর শাওয়াল মাসের ৬টি রোজা রাখার মাধ্যমে বছরজুড়ে রোজা রাখার ফজিলত লাভ করার তাওফিক দান করুন। আল্লাহুম্মা আমিন।
-সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।