
শামীম তালুকদার: বাবা দিবস’ উপলক্ষে প্রিয় বাবাকে নিয়ে অন্য অনেকের মতো ফেসবুকে লিখেছেন আমার ক্লাসমেট বিশিষ্ট শিক্ষিকা জিন্নাত রেজনা শারমিন।
অবেলায় যিনি মাকে হারিয়েছেন। উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিষয়ে এক সাথে অনার্স, মাস্ট্রার্স করার সময় কত, ক্লাশ, এসাইনমেন, প্রাকটিক্যাল, ভাইভা, নোট তৈরী, এক্সারসন ইত্যাদি সবাই মিলে মিশে করা।
উদ্দেশ্য সবার পড়াশোনায় ভালো করা। আঙ্কেল এর সাথে একাধিকবার দেখা হয়েছে। আদর করেছেন, পরামর্শ দিয়েছেন, গাইড করেছেন দোয়া করেছেন আমরা যেন জীবনে ভালো করতে পারি।
চমৎকার একজন মানুষ, হ্যাঁ একজন মানুষ যিনি আমার বাবার মতই অভ্যাসবসত কতশত অমানুষদেরও টাকা দান করেছেন। আবার ধারও দিয়েছেন, ধারটি গ্রহীতারা দান হিসাবে মনে করেছেন, যাদের কাছে টাকা পাওনা যারা পরবতীতে অমানুষই রয়ে গেছে।
হতাশাটা সেখানে, তবে বাবা হিসাবে সফল একশত ভাগ আঙ্কেলের দুই মেয়ে চাকুরী করে বর, বাচ্চা নিয়ে সুখের সংসার, ছেলেও পড়াশোনা শেষ করে ঢাকাতেই ভালো চাকুরীতে নিয়োজিত, সেই আঙ্কেল আজ অসুস্থ উনার জন্য দোয়া,
শারমিন তোমার বাবা আমাদের প্রিয় আঙ্কেলকে আল্লাহ সুস্থতা দান করবেন। বাবা দিবসে সব বাবাকে স্মরণ করে শিক্ষিকা শারমিন এর আবেগঘন স্ট্যাটাস সেবা হট নিউজ এর পাঠকদের জন্য তা হুবহু তুলে ধরা হলো:
আমার সুস্থ, প্রান উচ্ছল বাবাটা বর্তমানে খুবই অসুস্থ। মাত্র এক বছরের মধ্যে কি হলো জানিনা। মেনে নিতে কষ্ট হয় আজ আমার বাবা অসহায়ের মত বিছানায় পড়ে থাকতে হয়।
যার প্রভাবে,যার দানে,যার সহায়তায়, চেনা, অচেনা,জানা,অজানা,হিন্দু, মুসলমান, আত্মীয়, প্রতিবেশী, পথিক, ইত্যাদি ইত্যাদি মানুষ জন উপকৃত হয়েছে। জীবন ও বাচিয়েছে বহুল আলোচিত খুনের দায়ে ফাসির আসামী আবুল খায়েরের মত লোকের ও।
প্রায় সড়ে সাত লাখ টাকা খরচ হয়েছে সেই ফাসির অর্ডার মাফ করাতে।পুরো টাই আমার বাবার কাজের টাকা ছিলো। শুধু টাকা নয় প্রয়োজন এ বিভিন্ন মন্ত্রীর বাসায়,শেখ হাসিনার বাসায়,আমরা সবাই গিয়েছিলাম তখন ।
যদিও সেই ৯৮ সাল থেকে আজ ২০১৯ পর্যন্ত তার এক টাকাও আমার বাবা ফেরত পায় নি।সেই লোকটি জীবন ফিরে পাবার মাস খানেক পর আমার মা যখন তার কাছে গিয়ে জানালো আমাদের আর্থিক কষ্টের কথা, টাকার জন্য ব্যবসা বন্ধের কথা, আমাদের পড়াশুনা বন্ধ হওয়ার উপক্রম তখন।
প্রতিদান হিসেবে তার কাছ থেকে পাওয়া এক গোল্ডেন বানী- "হাশরের ময়দানে আম্বিয়ার বাপ্ রে কে চেনে"। বাসায় এসে এই বানীটা কাওকে বলতে পারেনি লজ্জায়, ভয়ে।কারন এই বিশেষ ব্যক্তি টি আমার মায়ের খালু। মায়ের জেদ,মায়ের চাপাচাপি তে বাবা বাধ্য হয়েছিল এতগুলো টাকা খরচ করতে।কারন মা বলেছিল উনি টাকা গুলো ফেরত দিবে।
শুধু তাই নয় জেল থেকে বের হয়ে আমাদের জীবন মান বদলে দিবে।আমাদের জীবনে কোন অপুর্ন থাকবেনা সে বেচে থাকতে। তবে পরিবর্তন হয়েছে তার,তার পরিবারের,তারা মুক্তিযুদ্ধা ভাতা পায়। সন্তানদের সরকারি চাকরি হয়ে গেছে।নিজের জীবন মান অনেক আপডেট হয়ে গেছে। বেশ দাপটের সাথে বেচে আছে। আর আত্মঘাতি নির্মম কালো ইতিহাসের নিচে চাপা পড়ে আছে বোকা রহিম উল্লাহ, আমার বাবা।
এত বড় রিটার্ন টা আমার মা নিজের ভিতর চাপা দিতে গিয়ে ধীরে ধীরে বেচে থাকার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলল। তার পর থেকে পাচ বছর আমাদের নিয়ে সংগ্রাম করেছে।লেখা পড়া বন্ধ হয়নি আমাদের।সংগ্রাম করেছি সবাই।কিন্তু শেষ রক্ষা হলনা। ২০০৪ সালে ব্রেন হেমারেজ হয়ে মারা যায় মা।মা মারা যাবার পর খুব কাছের মানুষ রা ও দূরে সরে যেতে লাগল।চিনে নিলাম সব মামা, কাকা, খালু, ইত্যাদি ইত্যাদি আত্মীয় সজনদের।তারপর যুদ্ধ শুরু হয় বাবার।মা বাবা দুজনের ভুমিকা পালন করতে গিয়ে আমার অসহায় বাবার কত কষ্ট,কত অপমান,কত আঘাত সহ্য করতে হয়েছে।তবুও লেখা পড়া বন্ধ হয়নি।
কারণ এই সার্থপর সমাজ দূরে সরিয়ে দিলেও আল্লাহ আমাদের সহায় ছিলো।এরুপ অনেক প্রতিকূল পরিবেশে ও আমার বাবা আমাদের কে টেক কেয়ার করার পাশাপাশি অনেক কুকুর, বিড়াল, জানোয়ার কে ও সাহায্য করেছিলো।কিন্ত আজ কেউ নেই আমার বাবার পাশে আমরা ভাই বোন রা ছাড়া। জানোয়ার রা তো এমনি হয় যদিও দেখতে তাদের কে দেখতে অবিকল মানুষের মতই লাগে। যাই হোক, আমাদের আল্লাহ ই যথেষ্ট। শুধু সবার দোয়া কামনা করি।
আমার বাবার জন্য সবাই একটু দোয়া করবেন। আমাদের জন্য ও দোয়া করবেন যেন বাবাকে দেখে রাখতে পারি।একটু শান্তি তে রাখতে পারি বাবাকে। আল্লাহ যেন সুস্থতা দান করেন। যেন বাকীটা জীবন হাসি মুখে, শান্তিতে, সম্মানের সাথে ইমান নিয়ে বাচতে পারে।মা চলে গেছে বাবা কে হারাতে চাইনা। তবুও একদিন সবারই মৃত্যু হবে।আর তখন যেন ইমানের সাথে আমাদের সবার মৃত্যু হয়। সবার কাছে এই দোয়া প্রার্থী।
-সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।