
সেবা ডেস্ক: আল্লাহর কাছে আমরা কিছু চেয়ে তাৎক্ষণিক না পেলে হতাশ হই। এসব হতাশা যার ভেতর বিন্দুপরিমান উঁকি দিচ্ছে, মনে রাখবেন- আল্লাহর অস্তিত্ব নিয়ে আপনার মধ্যে এক ধরনের দ্বিধা তৈরি করতে যাচ্ছে শয়তান। এই যেমন, আপনার মনে হয়তো প্রশ্ন জাগতে পারে- আল্লাহ কী সত্যিই আছেন!
এছাড়াও আমাদের মনে ভেতর অহরহ নানা বিষয়ে প্রশ্ন জাগতে পারে। সেসব প্রশ্ন থেকেই শুরু হয় হতাশার। আর তা থেকেই ধীর ধীরে ঈমান দুর্বল হতে থাকে।
যেসব হতাশা থেকে ঈমান দুর্বল হওয়ার আশংকা থাকে-
হতাশা- ১:
পত্রিকায়, ফেসবুকে মাঝে মাঝে মাছ, গাছ, ফল, মাংস ইত্যাদি এমনকি ছোট শিশুর শরীরে মহান আল্লাহ এবং রাসূলুল্লাহ (সা.) এর নাম লেখা ‘অলৌকিক’ কিছু ছবি দেখা যায়। আল্লাহ এবং রাসূল (সা.) যে সত্য এর প্রমাণ হিসেবে এগুলো অনেকে প্রচার করে থাকেন। এসব দেখলে কারো মনে একধরনের আনন্দ, তৃপ্তির ঢেউ খেলে যায়। কেউ আছেন, আবেগে কেঁদে ফেলেন। পরবর্তীতে যখন জানা যায়, এসবের কিছু কিছু ‘ভূয়া’; এডিট করে বানানো। তখন তারা হতাশ হয়ে যান।হতাশা-২:
কেউ কেউ আছেন, যখন কোনো দেশে মুসলমানের ওপর অন্যরা কিংবা রাষ্ট্রযন্ত্র অবর্ণনীয় নির্যাতন চালায় (যেমন- মায়ানমার, কাশ্মীর, আফগানিস্তান, সিরিয়া, ফিলিস্তিন) তখন আমরা ভাবি এই বুঝি নির্যাতনকারীদের ওপর আল্লাহর গজব নেমে আসবে। কিন্তু আসে না, তখন আমরা হতাশ হই!হতাশা-৩:
আমাদের মধ্যে অনেকেই আকাশ, নদী, পাহাড়, দিগন্তে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকি যদি দেখা যায় আল্লাহর কোনো নিদর্শন। ভাবি, যদি আল্লাহ অলৌকিক কিছু দেখান তাহলে আমাদের ঈমান আরো ইস্পাত দৃঢ় হবে। কিন্তু আমরা হতাশ হয়ে চোখ ফিরিয়ে নিই!হতাশা-৪:
কেউ ভাবেন, মঙ্গল গ্রহে পাঠানো ‘ইনসাইট’ কেন আল্লাহর কোনো নিদর্শন অর্থাৎ আল্লাহর নাম খচিত কোনো পাথর বা কোনো বস্তু পাঠিয়ে বিজ্ঞানীদের মাধ্যমের পুরো পৃথিবীর মানুষকে চমকে দিচ্ছে না। কিংবা মহাকাশ নিয়ে যারা গবেষণা করে, তারা কেন আল্লাহ এবং তার রাসূল (সা.) এর কোনো নিদর্শন দেখতে পাচ্ছে না। যদি কিছু একটা দেখতে পেতেন তাহলে তো সব মানুষ মুসলমান হয়ে যেতো! এ চিন্তা করে আমরা হতাশ হই!এসব হতাশার কারণে আল্লাহর প্রতি আমাদের বিশ্বাসের ভীত নড়ে যায়। ধীরে ধীরে ঈমান দুর্বল হতে থাকে। নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত ইত্যাদি মৌলিক বিষয়গুলোতে এক ধরনের অনীহা তৈরী হতে পারে। সুতরাং দুনিয়া এবং আখেরাতের কল্যাণের জন্য এসব চিন্তা চেতনা মনের মধ্যে লালন করা থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকতে হবে।
আমাদের মনে রাখা উচিত যে, মহান আল্লাহ কারো মুখাপেক্ষি নন বরং আমরাই তার মুখাপেক্ষি। মানুষ এবং জ্বীন সবাই যদি দিবানিশি আল্লাহর ইবাদতে মশগুল থাকে তাতে তার কোনো লাভ নাই কিংবা সবাই যদি আল্লাহকে অস্বীকার করে তাতেও তার কোনো ক্ষতি নাই। বরং লাভ-ক্ষতি আমাদেরই। অর্থাৎ যারা তার আনুগত্য করবে তারা জান্নাত লাভ করবে আর তাকে অস্বীকার করলে জাহান্নামে যেতে হবে। তা তিনি আমাদেরকে পবিত্র কোরআনে স্পষ্ট করেছেন।
মহান আল্লাহ বলেন, যা তোমার প্রতিপালক হতে তোমার প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে তা-ই সত্য; কিন্তু অধিকাংশ মানুষ এতে বিশ্বাস করে না। আল্লাহই ঊর্ধ্বদেশে আকাশন্ডলী স্থাপন করেছেন স্তম্ভ ব্যতীত, তোমরা এটা দেখছো; অতঃপর তিনি আরশে সমুন্নীত হলেন এবং সূর্য ও চন্দ্রকে নির্দিষ্টকাল পর্যন্ত আবর্তন করেন এবং নিদর্শনসমূহ বিশদভাবে বর্ণনা করেন, যাতে তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের সঙ্গে সাক্ষাৎ সম্বন্ধে নিশ্চিত বিশ্বাস করতে পার। তিনিই ভূতলকে বিস্তৃত করেছেন এবং ওতে পর্বত ও নদী সৃষ্টি করেছেন এবং প্রত্যেক প্রকারের ফল সৃষ্টি করেছেন জোড়ায় জোড়ায়; তিনি দিবসকে রাত্রি দ্বারা আচ্ছাদিত করেন; এতে অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্যে। পৃথিবীতে রয়েছে পরস্পর সংলগ্ন ভূখন্ড; ওতে আছে আঙ্গর-কানন, শস্যক্ষেত্র, একাধিক শীষ বিশিষ্ট অথবা এক শীষ বিশিষ্ট খেজুর বৃক্ষ, সিঞ্চিত একই পানিতে এবং স্বাদে ওগুলির কতককে কতকের ওপর আমি শ্রেষ্ঠত্ব দিয়ে থাকি, অবশ্যই বোধশক্তি সম্পন্ন সম্প্রদায়ের জন্য এতে রয়েছে নিদর্শন। (সূরা: রা’দ, আয়াত: ১-৪)
তোমার প্রতিপালক হতে তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তা যে ব্যক্তি সত্য বলে জানে সে আর অন্ধ কী সমান? উপদেশ গ্রহণ করে শুধু বিবেক শক্তিসম্পন্ন ব্যক্তিরাই। (সূরা: রা’দ, আয়াত: ১৯)
এখন ভেবে দেখুন আপনি কোন দলের- বিবেকহীন নাকি বিবেকবান। বুদ্ধিমানদের জন্য এসব নিদর্শনই যথেষ্ঠ। মুমিনরা অন্য কোনো নিদর্শনের পেছনে ছোটে না।
পরীক্ষায় কেউ যদি বই দেখে লিখে অর্থাৎ নকল করে তাহলে সেটা আর প্রকৃত পরীক্ষা হলো না। দুনিয়ার স্বল্প সময়ে মহান রব আমাদের পরীক্ষার জন্য পাঠিয়েছেন। পরীক্ষা চলাকালীন আমরা যদি মহান আল্লাহকে গাছে, মাছে, গোশতে, গ্রহ-উপগ্রহে তার নাম খোদাই করা দেখতে চাই কিংবা তাৎক্ষণিক গজব দেখে ঈমান মজবুত করতে চাই তাহলে সেটা আর পরীক্ষা হলো না।
আসুন আমরা এসব ভ্রান্ত চিন্তা থেকে সম্পূর্ণ বেরিয়ে আসি। মহান আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করুন, আমিন।
আল্লাহ বলেন, অতপর আমি (কিয়ামতের দিন) যাদের কাছে রাসূল প্রেরণ করা হয়েছিল তাদেরকে এবং রাসূলদেরকেও অবশ্যই জিজ্ঞাসাবাদ করবো। তখন আমি তাদের সমস্ত বিবরণ পূর্ণজ্ঞান অনুযায়ী প্রকাশ করে দেবো, আমি তো বে-খবর ছিলাম না। আর সেই দিনের ওজন হবে সঠিক। সুতরাং যাদের (পুণ্যের) পাল্লা ভারী হবে তারাই হবে কৃতকার্য ও সফলকাম। আর যাদের (পুণ্যের পাল্লা হালকা হবে, তারা হবে সেসব লোক যারা নিজেদের ধ্বংস ও ক্ষতি নিজেরাই করেছে, কেননা, তারা আমার নিদর্শনসমূহকে (বাণীকে) প্রত্যাখান করতো। (সূরা: আরাফ, আয়াত: ৬-৯)।
-সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।