
মো. শাহ্ জামাল: বাল্যকালেই মা-বাবা হারানোর ব্যথা সেলিনা খাতুনকে কুড়ে কুড়ে মারছে। সেলিনা খাতুনের একমাত্র বড় ভাই মমিনই সুখ-দু:খের সাথী। জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার চরবাগবাড়ি গ্রামের সুরুজ্জামানের মেয়ে সেলিনা খাতুন। হতদরিদ্র বলে পেটের দায়ে অন্যের বাড়িতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে সে। একসময় সেলিনা বিবাহযোগ্য হয়। গ্রামের কতিপয় দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের বদান্যতায় সেলিনাকে বিয়ে দেয়া হয় পাশের মানকি গ্রামের সাজু মিয়ার সাথে।
স্বামী সাজু গরিব। তাই স্বামী-স্ত্রী মিলে রুজি রোজগারের টানে ঢাকায় গার্মেন্টসে চাকরি নেয়। মাস শেষে গার্মেন্টসে চাকরির বেতনের সমুদয় টাকা তুলে দেয় স্বামীর হাতে। টুকিটাকি খরচের সামান্য টাকাও সেলিনার হাতে রাখতে দেয় না স্বামী। এভাবেই টানা ৬/৭ বছর চলে সেলিনা-সাজুর দাম্পত্ব সংসার। কিন্তু তাদের ঘরে কোন সন্তানাদির জন্ম নেয় নি। সন্তানাদি নাহবার ইস্যুতে সেলিনার উপর চলে অমানুষিক নির্যাতন।
সেলিনার অভিযোগ চিকিৎসার জন্য ডাক্তারের কাছে যেতেও রাজি হয় না স্বামী। কেননা স্বামী ছেড়ে গেলে কোথায় দাড়াবে সে ? এ চিন্তায় বহুদিন যাবৎ মুখ বুঝে নির্যাতন সহ্য করে আসছে সেলিনা। নির্যাতনের কারণে কোন কোন সময় সেলিনার অবস্থা বেহাল হয়ে পড়ে। তারপরও করার কিছু নেই। কারণ একটাই সেলিনার কেও নেই।
কোথায় কার কাছে দাড়াবে সে? নির্যাতনে অতিষ্ট হয়ে একবার ভাইয়ের বাড়িতে আশ্রয় নেয়। বোন সেলিনার করুণ আর্তি শোনে ভাই মমিন অশ্রæসিক্ত হন। সেলিনার ভাইয়ের বাড়িতে থাকাবস্থায় অন্যের বাড়িতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতে থাকে। কিন্তু তাতেও সেলিনার দু:খ আরো এগিয়ে আসে। সেলিনার ভাবীর কাছে চক্ষুশোল হয়ে পড়ে। বিষয়টি পাড়াপড়শিরা জানাজানি হয়। সুহৃদদের অনেকেই সেলিনার পাশে দাড়ায়।
অবশেষে স্বামীকে ডেকে কলহের স্পিত্তি ঘটান। আবারো চলে যায় স্বামীর কাছে। কিন্তু এখন সেলিনাকে নির্যাতন সহ্য হয় দ্বিগুন। তবুও বাৎচিত নেই। স্বামীর নির্যাতন সহ্য করেই বাকি জীবন কাটাতে চায় সেলিনা। আগে নির্যাতন চালাতো কোন একটা ইস্যু নিয়ে। এখন নির্যাতন চালায় ইস্যুবিহীন পরিকল্পিতভাবে। টানা কয়েকদিন যাবৎ চলছে নির্যাতন।
সর্বশেষ ১০ জুন স্বামীর নির্যাতনে সেলিনার অবস্থা নাজুক হয়ে পড়ে। এক কান-দুই কান এভাবেই নির্যাতনের খবর জানতে পারেন সেলিনার ভাই মমিন। পরদিন মমিন খোঁজ নিতে যায় সেলিনার স্বামীর বাড়িতে। স্বামী সাজু মিয়া ও তার স্বজনরা সেলিনার ভাইকে দেখে তেলে-বেগুনে জ¦লে ওঠে। একপর্যায়ে মমিনকে লাঞ্চিতও করে। দিনভর আটকে রাখে মমিনকেও।
এমন পরিস্থিতির খবর পৌঁছে মেলান্দহ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তামিম আল ইয়ামীনের কাছে। ইউএনও তাৎক্ষণিকভাবে ঘোষেরপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান ওবায়দুর রহমানকে ঘটনাস্থলে প্রেরণ করেন। চেয়ারম্যান নির্যাতিত সেলিনাকে উদ্ধার শেষে মেলান্দহ হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করেন। বর্তমানে সেলিনা মেলান্দহ হাসপাতালে কাতরাচ্ছে। এ ঘটনার পর থেকে সেলিনার স্বামী গা ঢাকা দিয়েছে।
-সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।