শামীম তালুকদার: দেশে বয়ে যাওয়া এবারের বন্যায় কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, জামালপুর জেলা সবচেয়ে বেশি এফেক্টেড। আমাদের নাগরিক হিসাবে বন্যার কারণ কি,বন্যা কেন হয়, কখন বন্যা হয়,পানির গতি প্রকৃতি এসব জানা এবং জানানো নাগরিক দায়িত্ব তদঅনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়াও উচিৎ।
এবারের বন্যাকে মিডিয়া/সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীরা ৮৮ সালের চেয়েও বৃহৎ বলা হয়েছে। বিশেষ করে এই তিনটি জেলার পানির প্লাবিত হওয়ার ধরণ দেখে তাই মনে করা হয়েছে। কিন্তু একটি বিষয় লক্ষনীয়; প্রথমে ব্যবহারিক যেমন আমার নিজের বাড়িতে ৮৮ সালের বন্যায় ঘরে পানি ছিল;প্রায় শুবার খাট এ উঠে উঠে অবস্থা কিন্তু এবার পানি আঙিনাতেও আসে নাই। অপরপক্ষে জামালপুরের বকশীগঞ্জ বাজারে ৮৮তে পানি না উঠলেও এবার উঠেছে।
কারণ কী? কেমন বিসদৃশ্য লাগছে না! এটার জন্য জানতে হবে, বাড়ির মাটি ইরােসন/ক্ষয় হয়, যেটাকে গ্রামীন ভাষায় বলি মাটি বৃষ্টিতে/অন্যান্য কারণে ধুয়ে যায়, যার কারণে নিচু হয় কিন্তু যদি প্রতিবছর বাড়ির ভিটাতে মাটি কাটেন তাহলে এই ইরোসন কাটিয়ে উঠা যায়, ফলে কখনও বন্যা হলে সেফ জোনে থাকা সম্ভব।
তবে সেটা ৮৮ বন্যাকে বেজ ধরে করাই; আমাদের দেওয়ানগঞ্জ বকশীগঞ্জ অঞ্চলের জন্য বেস্ট হবে কারণ ১৯৮৮, ১৯৯৮, ২০০৪, ২০১৯ সালের মধ্যে ৮৮ তে পানির পরিমান ছিল বেশি। একইভাবে বকশীগঞ্জ বাজার এলাকা মাটি কাটার তেমন প্রয়োজন না হওয়ায় কেউ ভিটাতে মাটি কাটেন না ফলশ্রুতিতে এবার পানিতে প্লাবিত হয়েছে।
এটা গেল সাধারণ হিসাব, বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে ৮৮ যে পরিমান পানি প্রবাহিত হয়েছে এবার তার চেয়ে অনেক বেশি উচুতে প্রবাহিত হয়েছে এবং সেটা সরকারী হিসাবেই। কারণ কী? তাদের হিসাব ভুল? উত্তর না। কারণ নদীতে পলি জমে, সাদা বালি জমে যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, ধরলাসহ বড় সব নদীর পানি ধারণ ক্ষমতা অনেক কমে গেছে একারণে উজানের নেমা আসা পানি নদীর পাড়ের নিচু স্থান দিয়ে গ্রামের দিকে ছুটে যায় এবং প্লাবিত হয়।
নদী ভরাট শুধু বাংলাদেশে না চীন, ভারত সহ অন্যান্য দেশেও রয়েছে তবে তাদের ভালো প্লান রয়েছে মোকাবেলার জন্য, আমাদের দেশেও বর্তমানে ড্রেজিং করার সক্ষমতা অনেক বৃদ্ধি করা হয়েছে। এটা ভালো দিক, স্বাভাবিক ভাবেই বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে পানি বিপদ সীমার উপরেই আসবে, তবে পানিও যথেস্ট এসেছে বলেই বন্যা/দুর্যোগ বলা হয়েছে।
এবার আসা যাক বন্যা কেন হয়? তিনটি কারণে বন্যা হয়। (নেট এ সার্চ/সিক্স, সেভেনের পাঠ্যবই দেখা যেতে পারে)
যেমন ১। উপকূলীয়, জোয়ারভাটা, বায়ু, জলোচ্ছাস, ২। নদীর পানিবৃদ্ধি,৩। অতিবৃষ্টি
তবে এবারের বন্যার কারণ ২টি: ১।নদীর পানিবৃদ্ধি, ২। অতিবৃষ্টি,
উজানের ঢলে নদীর পানির অস্বাবিক বৃদ্ধি এবং অতিবৃষ্টি, নদীর উৎপত্তি, গতিপ্রকৃতি বিশ্লেষণে জানা সম্ভব যে ভারতের আসাম, মেঘালয়, সিকিমসহ, ভুটান, চীন, নেপালে এবার একই সময়ে বৃষ্টিপাত হয়েছে যার কারণে বাংলাদেশে বন্যার কারণ।
ভারতের ও ভুটানের পানি যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে এবং সে পানি ফাইনালি বঙ্গপোসাগড়ে পতিত হয়। যেহেতু উপরে উল্লেখিত নদীসমূহ বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে কুড়িগাম, লালমনিহাট অর্থাৎ উত্তরবঙ্গ দিয়ে তাই সাফারার এ অঞ্চল গুলি বেশি।
কারণ পানি যদি কোন কারণে আসে সেটা নেমে যেতে অন্তত ২-১০ দিন পযন্ত সময় লাগতে পারে। এতে নদীর তীরবতী নিচু এলাকার দুভোগ হয় বেশি। সেটা এবার হয়েছে পানি এসেছে বেশি নামতেও সময় নিয়েছে বেশি।
আরো খেয়াল করার বিষয় অতিপানিতে প্রথমে আসামসহ ভারতের কয়েকটি এলাকা বন্যা হয়; সে পানি নেমে আসে কুড়িগ্রাম হয়ে জামালপুর, গাইবান্ধা। আর সেই পানি মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ি, ফরিদপুর অঞ্চলে বন্যা হয়ে পদ্মা নদী দিয়ে সোজা বঙ্গোপসাগড়ে নেমে দেশের বন্যার সমাপ্তি ঘটেছে। সবসময় তাই ঘটে।
এসব বিষয় সকল অথরিটি, সুশীল সমাজ, স্বেচ্ছাসেবকব এমনকি নাগরিকদেরও জানা অত্যাবশ্যক।বন্যা নিয়ে বুয়েটে আলাদা প্রতিষ্ঠান/বিভাগ রয়েছে। এমনকি বন্যা নিয়ে বাংলাদেশ এশিয়ার কয়েকটি দেশে কনসালটেন্সি প্রদান করে এটা গর্বের বিষয়। আরো গর্বের বাংলাদেশে আইনুন নিশাত স্যারের মত আন্তজার্তিক পানি বিশেষজ্ঞ রয়েছে এবং বাংলাদেশে আইনুন নিশাত স্যারের কথাই শেষ কথা।এজন্য তার বই;নিবন্ধ পড়া যেতে পারে এমনকি দুর্যোগকালীন সময়ে স্যারের মতামত/সরকারের সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের নির্দেশনা বিশেষভাবে পযবেক্ষন করা দরকার।
বন্যা একটি প্রাকৃতিক দুযোগ এটা বর্তমান সরকার বৈজ্ঞানিকভাবে এবং যথেষ্ঠ জ্ঞান দিয়ে অতীতের মত এবারও মোকাবিলা করেছে,দুযোগ মোকাবেলায় বাংলাদেশের বৈশ্বিক পুরস্কার, প্রশংসাপ্রাপ্তি ও দেশের মানুষের অসীম সাহস, মনোবল বারবার দুযোগ কাটিয়ে উঠা সহজতর হয়েছে।
-সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।