
লিয়াকত হোসাইন লায়ন.জামালপুর প্রতিনিধি : জামালপুরের ইসলামপুরে দেহ বিহীন মাথা উদ্ধার ও মেলান্দহ উপজেলায় দেহ উদ্ধার উপজেলার গোয়ালের চর ইউনিয়নের সভুকুড়া গ্রামের হাসেন আলী (৫০) হত্যা ঘটনার রহস্য উন্মোচন হয়েছে। কল্লা কাটা গুজবে মেয়ে জামাই কতৃক শশুরের কল্লা কেটে হত্যা খুব স্বল্প সময়ে এই রহস্য উদঘাটন হওয়ায় সাধারন মানুষ ও সুধীজনরা পুলিশ প্রশাসনকে সাধুবাদ জানিয়েছে।
জানা গেছে, গত ৪ আগস্ট সকালে মেলান্দহ থানা পুলিশ কাঙ্গালকুর্শা গ্রামে ব্রক্ষপুত্র নদের কিনারায় ভাসমান অবস্থায় একটি মাথা বিহীন লাশ পায়। উক্ত সংবাদের ভিত্তিতে ইসলামপুর থানা পুলিশ লাশের মাথা খুঁজতে থাকে। ওইদিন দুপুরে ইসলামপুর পলবান্ধা ইউনিয়নের চরচাড়িয়া ব্রহ্মপুত্র নদের পশ্চিম পাড়ে দেহ বিহীন একটি মাথা পানিতে ভাসমান অবস্থায় পাওয়া যায়। মেলান্দহ থানায় মাথা বিহীন দেহ ও ইসলামপুর থানায় দেহ বিহীন মাথা দেখে গোয়ালের চর ইউনিযনের সভুকুড়া গ্রামের মোঃ সুন্দর আলী, তার পিতা হাসেন আলী (৫০) এর লাশ বলে সনাক্ত করেন। ওইদিন সে বাদী হয়ে ইসলামপুর থানায় ১১ জনকে আসামী করে অভিযোগ দায়ের করেন।
জামালপুর পুলিশ সুপার, মোঃ দেলোয়ার হোসেন বিপিএম, পিপিএম (বার) নির্দেশক্রমে ইসলামপুর সার্কেলের এএসপি সুমন মিয়া ঐক্লান্তিক প্রচেষ্টায় অফিসার ইনচার্জ আবুদল্লাহ আল মামুন সহ অন্যানের সহযোগীতায় তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় বিভিন্ন জায়গায় অভিযান ২নং আসামী আব্দুল হালিম (৩৫), ৪নং আসামী লাল চান ও ৬নং আসামী হাফেজ আলীকে গ্রেফতার এবং গত ২৭আগস্ট ১নং আসামী মৃত হাসেন আলীর মেয়ের জামাই খোরশেদ আলম (২৪) কে গাজীপুর জেলার টঙ্গী পশ্চিম থানা এলাকা হতে গ্রেফতার করা হয়।
প্রধান আসামী মেয়ে জামাই কতৃক জিজ্ঞাসাবাদে জানায়,বিগত দিনে মৃত হাসেন আলী সাথে তার মেয়ের জামাই খোরশেদ আলম, খোরশেদ আলমের চাচা ও চাচাত ভাইদের ছাগল নিয়া ঝগড়া হয়।
এই ঝগড়াকে কেন্দ্র করে মৃত হাসেন আলী বিজ্ঞ আদালতে তার মেয়ের জামাই খোরশেদ গংদের বিরুদ্ধে এবং মৃতের মেয়ে হাসিনা বেগম তাকে যৌতুকের জন্য মারপিট করার কারণে তার স্বামী খোরশেদ এর বিরুদ্ধে সিআর মামলা দায়ের করেন। মামলা-মোকদ্দমার কারণে তাদের মধ্যে শত্রুতা চলতে থাকে। এর জের ধরে মেয়ের জামাই খোরশেদ আলম, তার চাচা ও চাচাত ভাইয়েরা মিলে হাসেন আলীকে হত্যার পরিকল্পনা করে।
গত ০২/০৮/২০১৯ খ্রিঃ তারিখ রাত অনুমান ৮টা সময় তার চাচাত ভাই আব্দুল হালিম,হাসেন আলীকে গোয়ালেরচর ইউনিয়নের মোহাম্মদপুর বাজারের জনৈক কুদ্দুসের চায়ের দোকান হতে মামলা আপোষ-মীমংসার কথা বলে হালিমের বাড়ির পার্শ্বে মসজিদের কাছে নিয়ে যায়। সেখানে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী আপোষ-মীমংসার নামে কালক্ষেপন করে রাত অনুমান ১২টার দিকে হাসেন আলীকে ব্রক্ষপুত্র নদের দক্ষিণ তীরে কাশবনের জঙ্গলের ভিতর নিয়ে যায়। সেখানে পূর্ব থেকে ওৎপেতে থাকা খোরশেদ আলম এবং হালিমের কয়েকজন সহযোগী হাসেন আলীকে মারধর করার এক পর্যায়ে হাসেন আলীর এক হাতে চেপে ধরে তার মাথার উপর ছালা পেঁচিয়ে মুখ ঢেকে ফেলে।
পরবর্তীতে হাসেন আলীর গলা চেপে ধরে তাকে হত্যার পর মৃত অবস্থায় নৌকায় তুলে মাঝ নদীতে নিয়ে যায়। নৌকায় তোলার পর আসামীরা নিজেদের মধ্যে পরামর্শক্রমে উক্ত হত্যাকান্ডকে কল্লাকাটা বলে চালিয়ে দেয়ার জন্য গলা কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়। পরবর্তীতে আসামীদের একজন মৃত হাসেন আলীর বুকের উপর বসে থাকে এবং আব্দুল হালিমের কাছে থাকা বটি-দা দিয়ে খোরশেদ আলম মৃত হাসেন আলীকে জবাই করে দেহ থেকে মাথা আলাদা করে নদীর দুই জায়গায় ফেলে দেয়।
আসামী খোরশেদ আলম গত ২৮আগস্ট বিজ্ঞ আদালতে ১৬৪ ধারামতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছেন। পরে পুলিশ ওই আসামী কথামত হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ব্রহ্মপুত্র নদে মাটি চাপা দিয়ে ডুবিয়ে রক্তমাখা নৌকা উদ্ধার করায় পরো রহস্যের উন্মেচন হয়েছে।
-সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।