
রফিকুল আলম,ধুনট (বগুড়া) : দুই পাশে গ্রামীন কাঁচা সড়ক। মাঝখানে বাউনদী। নদীর বুকে থৈ থৈ করছে পানি। আর এটি হলো স্থানীয়দের চলাচলের একটি সরকারি মেঠোপথ। এই পথ মাড়িয়ে নিয়মিত যাতায়াত করতে হয় স্থানীয় একটি স্কুলের একাংশের ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের। হাটু পানিতে ভরা সেই পথ। এটা হেমন্তকালের চিত্র। বর্ষাকালের চিত্রটা আরো ভয়াবহ।
বুধবার সকালের দিকে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, দলবেধে পানি মাড়িয়ে স্কুলের পথে একদল ক্ষুদে শিক্ষার্থী। পরনের প্যান্ট মুড়িয়ে সবার হাটুর ওপরে ওঠানো। বইগুলো একেকজন একেকভাবে ধরে রেখেছে। কেউ মাথার ওপর উঠিয়েছে। কেউবা কাঁধে, আবার অনেকেই বুকের সঙ্গে চেপে ধরেছে বইগুলো। জামা-কাপড় ও বইকে পানি থেকে রক্ষা করতে তাদের দু’হাতই থাকে ব্যস্ত। অর্থাৎ এসব ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবন অনেকটা পানিবন্দী।
বগুড়ার ধুনট উপজেলার মথুরাপুর ইউনিয়নে অবস্থিত সাতানী খাদুলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যাতায়াত করার পথের দৃশ্যটা এরকম।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৮৯ সালে স্থানীয় শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিদের চেষ্টায় এলাকার মানুষের দানের জমিতে প্রতিষ্ঠা করা এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি। এরপর থেকে প্রতিষ্ঠানটি গ্রামে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে আসছে। বর্তমানে এ প্রতিষ্ঠানে ১৩৫জন শিক্ষার্থী রয়েছে। পাঠদান কার্যক্রমে নিয়োজিত রয়েছেন ৫জন শিক্ষক। যারা সেই পানি পথ মাড়িয়ে নিয়মিত স্কুলে যাতায়াত করেন।
অভিশপ্ত নদীটি মথুরাপুর ও খাদুলী গ্রামের মাঝ দিয়ে বহমান। নদীর দক্ষিন পাশেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি। নদীর বুকে স্থায়ী সেতু নির্মান করা হয়নি। ফলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে স্থানীয় ১৫-১৭ গ্রামের মানুষকে। বেশি দুর্ভোগ হচ্ছে, মুম‚র্ষু রোগী, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, শিশু-বৃদ্ধদের।
স্থানীয়রা দুর্ভোগ লাঘবে দীর্ঘদিন ধরে এখানে সেতু নির্মাণের দাবি করে আসলেও কর্তৃপক্ষ তা আমলে নিচ্ছেন না। বর্তমানে পানিতে নিমজ্জিত এ পথের অবস্থা অত্যন্ত করুণ। সবমিলিয়ে খুবই দুর্ভোগে রয়েছেন বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার হাজার হাজার মানুষ।
সোহাগ, সৌরভ, রূপসি, সাদিয়া, অন্তরা, রিয়াজুল, অনামিকাসহ অনেক শিক্ষার্থী বলে, এভাবে হাটু পানি মাড়িয়ে আর কতদিন স্কুলে যাবো। অনেকের পায়ে ঘা হয়েছে। অথচ আমাদের খবর কেউ রাখে না। সরকার একটি সেতু বানিয়ে দিলেই তো পারেন। কেননা সরকার ছাড়া কেউ এখানে সেতু নির্মান করে দেবেন না। আর সেতু হলে আমাদের বহুদিনের কষ্ট দ‚র হয়ে যাবে।
সাতানী খাদুলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল করিম জানান, উপজেলা শিক্ষা অফিস ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের একাধিকবার বিষয়টি জানিয়েছি। কিন্তু অদ্যবধি পর্যন্ত সেতু নির্মানের জন্য কেউ এগিয়ে আসেননি। ভবিষ্যতে কেউ এগিয়ে আসবেন কী-না সেটাও জানা নেই।
উপজেলার মথুরাপুর ইউনিয়নে পরিষদের চেয়ারম্যান হারুন-অর-রশিদ সেলিম বলেন, বাউনদীতে সেতু নির্মানের জন্য অর্থ বরাদ্দ চেয়ে দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রান মন্ত্রনালয়ে প্রক্কলন তৈরী করে পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ সাপেক্ষে সেখানে সেতু নির্মান করা হবে।
ধুনট উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাজিয়া সুলতানা বলেন, বাউনদীতে সেতু নির্মানের বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে অর্থ বরাদ্দর জন্য দ্রæত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
-সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।