অপরাধের স্বর্গরাজ্য রাজধানীর মিরপুর-আশুলিয়া বেড়িবাঁধ

S M Ashraful Azom
0
অপরাধের স্বর্গরাজ্য রাজধানীর মিরপুর-আশুলিয়া বেড়িবাঁধ
সেবা ডেস্ক: মিরপুর ও আশপাশের প্রভাবশালী কিছু রাজনীতিবীদদের ছত্রছায়ায় একটি সংঘবদ্ধ সক্রিয় সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে অপরাধের স্বর্গরাজ্য হয়ে উঠেছে রাজধানীর মিরপুরের মিরপুর-আশুলিয়া বেড়িবাঁধ এলাকাটি। নিয়মিত ছিনতাই, ডাকাতি, প্রতারণামূলক ঘটনা এই বেড়িবাঁধটিতে নিত্যনৈমত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।

মিরপুরের বৃহৎ বিনোদনকেন্দ্র চিড়য়াখানা, বোটানিক্যাল গার্ডেন, তামান্না পার্ক ও নেভারল্যান্ড পার্ককে কেন্দ্র করে রাজধানীসহ দেশের দূর-দূরান্ত থেকে হাজার হাজার বিনোদন পিয়াসীরা ভ্রমণ করতে আসেন। এই ভ্রমণ পিপাসু পর্যটকদের কেন্দ্র করে পার্শ্ববর্তী তুরাগ নদীরপাড় দখল করে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন খাবারের দোকান।

তবে ক্ষুধার্তদের জন্যে হোটেল গুলোতে শুধু খাবারই বিক্রি হয় না। মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে যুগলদের জন্যে রয়েছে আলাদা চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থাও। খাবার হোটেলগুলোর পাশেই ছোট্ট ছোট্ট ঝুপড়ি ঘরে অর্থের বিনিময়ে যুগলদের সময় কাটানোর ব্যবস্থা করে রাখা হয়েছে। তবে সুচতুর ব্যবসায়ীরা পোশাক-আসাক দেখেই খরিদদারদের পারিবারিক ও আর্থিক অবস্থান আন্দাজ করে ঘন্টা চুক্তিতে শ্রেনীভেদে তাদের নিকট থেকে আদায় করেন মোটা অংকের অর্থ।

তাদের রয়েছে নিজস্ব পোষ্য ছিনতাইকারী বাহিনী। ভালো পার্টি পেলে তারা ব্ল্যাকমেইল করে সঙ্গে থাকা মোবাইল, স্বর্ণালঙ্কার এমনকি কৌশলে মোটা অংকের অর্থ আদায় করার সুযোগও হাতছাড়া করেন না। আর ভুক্তভোগীরাও পারিবারিক ও লোকলজ্জার ভয়ে সেগুলি প্রকাশ করেন না। ফলে বেশির ভাগ ঘটনাই থাকে অপ্রকাশিত। তবে সমাজের এক শ্রেনীর পরিবারের বখে যাওয়া ছেলেমেয়েদেরকে বিভিন্ন স্কুল-কলেজের ড্রেস পরা অবস্থায়ই সেখানে নিয়মিত দেখা যায়।

যৌন চাহিদা মেটাতে সিঙ্গেল পুরুষদের জন্যেও এসকল হোটেল ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে শতাধিক পেশাদার পতিতা। এই পতিতারাও ছিনতাইকারী সিন্ডিকেটের সক্রিয় সদস্য। ফলে বিনোদনের উদ্দেশ্যে আসা ভ্রমনপিপাসু মানুষদের জন্য ধীরে ধীরে এলাকাটি হয়ে উঠছে চরম অনিরাপদ।

অন্যদিকে নিজস্ব মালিকানাধীন জমির ওপরেও ব্যক্তিমালিকাধীন বিভিন্ন পার্ক গড়ে তুলে নির্ধারিত মূল্যের টিকিটে যুগল ছাড়া ভেতরে কেউ প্রবেশ করতে পারে না। এই পার্কগুলোর তত্ত্বাবধায়কদের দাবি, এটি তাদের নিজস্ব সম্পত্তি; তাই কোনো ঝামেলা হওয়ার সুযোগ নেই।

এখানে নেভারল্যান্ড পার্কের পাশ থেকে বিশেষভাবে ঘেরা নৌকা ঘন্টা চুক্তিতে ভাড়া করে নদীর মধ্যে গিয়ে অসামাজিক কার্যক্রম করার সুযোগ রয়েছে। নৌকার মধ্যে ওপরে ছাদের মতো করে ঢেকে অতিরিক্ত অর্থের বিনিময়ে এসব অপকর্ম করার ব্যবস্থা করে দেন স্বয়ং নৌকার মাঝি। শুধু অসামাজিক কার্যকলাপ নয়, সেখানে মাদক সেবনেরও সুব্যবস্থা রয়েছে বলে জানা গেছে। প্রায় সব ধরনের মাদক আগে থেকেই মজুদ থাকে সিন্ডিকের সক্রিয় সদস্য মাঝিদের কাছে। মাদক কেনা বেচা ও সেবন করার জন্যেও রয়েছে নিয়মিত কাস্টমার। বেড়িবাঁধ এলাকায় বিষয়টি ওপেন সিক্রেট হলেও মুখ খোলেন না কেউই। প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের ক্ষমতা ও অপকর্ম বিপরীতে অসহায় এলাকাবাসী ।

এলাকাবাসীর দাবি, মাদক কেনা-বেচা,চুরি,ছিনতাই আর অসামাজিক কার্যকলাপ এই এলাকায় হরহামেশাই চলে।

ডিএমপির মাদক নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মিরপুরের অর্ধশতাধিক শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীর নিয়ন্ত্রণে ছোটো-বড়ো প্রায় শতাধিক চিহ্নিত স্পটে নিয়মিত চলে নানা ধরনের মাদকদ্রব্যের রমরমা বাণিজ্য। এর বাইরেও আছে ছোটোখাটো অসংখ্য স্পট। তবে মিরপুরের শাহ্ আলী থানা এলাকাটিতে ঘনবসতি ও বস্তি এলাকা বেশি হওয়ায় অন্যান্য এলাকার তুলনায় এই এলাকা ঘিরে মাদক ব্যবসা বেশি জমজমাট। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় শাহ আলী থানা যুব-মহিলালীগের নেত্রী পরিচয় দিয়ে নিলুফা ইয়াসমিন নিলু নামে এক প্রভাবশালী নারী মাদক ব্যবসায়ীর নিয়ন্ত্রনে রয়েছে পুরো গুদারাঘাটের মাদক সম্রাজ্য। বেড়িবাঁধের মাঝিদেরকেও এই নিলুফা ইয়াসমিন নিলুই বিভিন্ন প্রকার মাদকদ্রব্য সর্বরাহ করেন বলে জনশ্রুতি রয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই নামধারী নেত্রীর একজন একান্ত সহোযোগী জানিয়েছেন, নিলুফা ইয়াসমিন নিলু নিজেই তার একজন একান্ত সহযোগী আকাশ নামে কথিত সাংবাদিককে সাথে নিয়ে গড়ে প্রতিদিন ২০ টি ইয়াবা ট্যাবলেট সেবন করেন। আর এই অর্থের যোগান দিতে প্রথমে তিনি স্বল্প পরিসরে মাদক ব্যবসা শুরু করলেও কাচাটাকার লোভে বর্তমানে পুরো গুদারাঘাটে গড়ে তুলেছেন এক সুবিশাল মাদক সম্রাজ্য।

স্থানীয় প্রভাবশালীদের কেউ কেউ মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নিয়মিত বখরা নিয়ে মাদক ব্যবসায় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সহয়তা করছেন। ফলে শাহ্ আলী থানা কর্তৃপক্ষ নিয়মিত মাদকের বিরুদ্ধে ফলপ্রসূ অভিযান পরিচালনা করলেও তার সুফল পাওয়া যাচ্ছেনা। স্থানীয় কমিউনিটি পুলিশের কিছু সদস্য অবৈধ সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করে মাদক ব্যবসায়ীদেরকে সহযোগীতা করছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।

কিছু চিহ্নিত এলাকায় ইয়াবা, মদ, গাঁজা, ফেনসিডিল, হেরোইন, প্যাথেডিনসহ সব ধরনের মাদকই বিক্রি হচ্ছে সুকৌশলে। শাহ্ আলী থানাধীন গুদারাঘাট এলাকাটিই থানা এলাকার মাদকের মূল আখড়া বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ।

এ বিষয়ে ডিএমপির মিরপুর বিভাগের দারুসসালাম জোনের দায়িত্বশীল সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) হারুন-অর রশিদ বলেন, অবশ্যই এ বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হবে। সত্যতা প্রমাণিত হলে অপরাধী যেই হোক তাদেরকে আইনের আওতায় এনে যথাযোগ্য আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রণ করা হবে।

 -সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন

ট্যাগস

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top