
রফিকুল আলম,ধুনট (বগুড়া): ঝকঝকে ভবনটি মাত্র চার মাস আগে কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। সেই ভবনের ছাদ চুইয়ে বৃষ্টির পানি পড়ছে। স্যাঁতসেঁতে হয়ে গেছে ৫টি কক্ষ। নষ্ট হচ্ছে আসবাবপত্র। ক্ষতির মুখে পড়েছে নানা ধরনের ঔষধ। ভিজে যাচ্ছে নথিপত্র। এমন চিত্র বগুড়ার ধুনট উপজেলায় মথুরাপুর ইউনিয়নের হিজুলী কমিউনিটি ক্লিনিকের।
ভবন নির্মাণে নিম্নমানের কাজের কারণেই এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এ অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের। এটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছিল প্রায় পৌনে ত্রিশ লাখ টাকা। এ সমস্যার প্রতিকার চেয়ে ওই ক্লিনিকের কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) বার বার লিখিত ভাবে আবেদন জানালেও কর্তৃপক্ষের মন গলেনি।
স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেয়ার লক্ষে দেশের অন্যান্য স্থানের ন্যায় উপজেলার হিজুলী গ্রামে কমিউনিটি ক্লিনিকের কর্যক্রম শুরু করা হয়। কমিউনিটি বেইজড হেলথ কেয়ার প্রকল্পের আওতায় ওই ক্লিনিকের একতলা ভবন নির্মানের জন্য ২০১৭-১৮ অর্থবছরে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে ২৯ লাখ ৬৯ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।
দরপত্র আহবানের মাধ্যমে মেসার্স মজিবর রহমান মজনু কনষ্ট্রাকশন নামে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। ঠিকাদার ২০১৯ সালের জুন মাসে ভবন নির্মান কাজ শেষ করে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার নিকট হস্তান্তর করেন। অথচ হস্তান্তরের পর থেকেই ছাদ চুইয়ে বৃষ্টির পানি পড়ায় নতুন কক্ষ গুলো যেন পুরোনো কক্ষে রূপ নিয়েছে।
ওই ক্লিনিকের নামে জমি দাতা হিজুলী গ্রামের আলী আকবর অভিযোগ তুলে বলেন, এ কাজে রড ও ঢালাইয়ে সিমেন্টের পরিমাণ অনেক কম দেওয়া হয়েছে। ছাদ ঢালাইয়ে ইটের গুঁড়া মিশ্রিত কংক্রিট ও নি¤œমানের বালু ব্যবহার করায় ছাদ চুয়ে বৃষ্টির পানি পড়ছে। সরকারি যেকোনো ভবনের ঢালাইকাজে বরাদ্দ দাতা অধিদফতরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা উপস্থিত থাকার নিয়ম থাকলেও এই ক্লিনিকের ছাদ ঢালাইয়ে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্ততরের কোনো কর্মকর্তাকে দেখা যায়নি।
হিজুলী কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি আবু সুফিয়ান বলেন, ভবন নির্মাণসংক্রান্ত কোনো বিষয় স্বাস্থ্য বিভাগ আমাকে জানায়নি। এমনকি কাজ তদারকির দায়িত্বেও ছিলেন স্বাস্থ্য বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী ইউসুব আলী। ফলে নিম্নমানের কাজ করে তা যেনতেনভাবে হস্তান্তর করা হয়েছে। ভবন নির্মাণে ত্রুটি-বিচ্যুতি তুলে ধরে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বরাবর আবেদন করা হয়েছে।
ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের পক্ষে এই কাজটি দেখভাল করেছেন শেরপুর উপজেলার হাসরা গ্রামের হেলাল উদ্দিন। তিনি বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিকের ভবন নির্মান কাজে কোন প্রকার অনিয়ম করা হয়নি। এছাড়া নতুন ভবনের ছাদ চুয়ে বৃষ্টির পানি পড়ার বিষয়টি আমাকে জানানো হয়নি।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ হাসানুল হাছিব বলেন, ভবন নির্মাণ হওয়ার পর এর নির্মাণ ত্রুটি সম্পর্কে বলা মুশকিল। নবনির্মিত ভবনটি বুঝে নেওয়ার পর ছাদ দিয়ে বৃষ্টির পানি পড়তে পারে এমন ধারণা ছিল না। তারপরও এ ত্রæটির বিষয়টি জেলা স্বাস্থ্য প্রকৌশলীকে জানানো হয়েছে।
স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী ইউসুব আলী বলেন, ভবন নির্মানে নিম্নমানের কাজ হয়েছে, এটা ঠিক নয়। নতুন ভবনের ছাদ দিয়ে বৃষ্টির পানি পড়ে, এ বিষয়টি আমার জানা নেই। এ বিষয়ে খোঁজ নেওয়ার পর বলা যাবে। তবে এ ধরনের সমস্যা হয়ে থাকলে সমাধান করা যাবে।#
-সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।