যেমন হবে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল

S M Ashraful Azom
0
যেমন হবে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল
সেবা ডেস্ক: অত্যাধুনিক স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত হতে যাচ্ছে রাজধানী ঢাকায় অবস্থিত হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল। আগামী ২৮ ডিসেম্বর নতুন এ টার্মিনালের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করার কথা রয়েছে।

২৩ অক্টোবর হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণের জন্য জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের সঙ্গে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।

জাইকা হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণে সম্পূর্ণ অর্থায়ন করবে।

জাইকার অর্থায়নে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিতব্য এ টার্মিনাল ভবন হবে তিন তলাবিশিষ্ট। দুই লাখ ৩০ হাজার বর্গমিটার আয়তনের এ ভবন ও টার্মিনালের নির্মাণ কাজ শেষ হতে সময় লাগবে প্রায় সাড়ে চার বছর। এটি চালু হলে নতুন করে ১২ মিলিয়ন যাত্রীকে সেবা দেয়া সম্ভব হবে। ফলে নতুন-পুরাতন টার্মিনাল মিলিয়ে ২০ মিলিয়ন যাত্রীকে বছরে সেবা দেয়া সম্ভব হবে।

হয়রত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাত্রী হ্যান্ডলিং ক্যাপাসিটি বছরে ৮০ লাখ এবং কার্গো হ্যান্ডলিং ক্যাপাসিটি বছরে দুই লাখ টন।

১৯৮০ সালে যাত্রা শুরু করা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বর্তমানে বছরে প্রায় ৯০ হাজার বিমান ওঠানামা করে। গত বছরে (২০১৮) সক্ষমতার চেয়ে বেশি ৯০ লাখ যাত্রীকে সেবা দেয় প্রধান এই বিমানবন্দর। সে অনুপাতে বাড়েনি বোর্ডিং ব্রিজ, লাগেজ বেল্ট, ইমিগ্রেশন চেকিং পয়েন্ট, পার্কিং-বেসহ আনুষঙ্গিক অবকাঠামো সুবিধা। ফলে কাক্সিক্ষত সেবা পাচ্ছেন না যাত্রীরা। এই প্রেক্ষাপটেই শাহজালাল বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় মূল টার্মিনালের দক্ষিণ পাশে তৃতীয় টার্মিনাল করতে যাচ্ছে সরকার।

উন্নত বিশ্বের বিমানবন্দরের মতোই অত্যাধুনিক সব নির্মাণ উপকরণ ব্যবহার করা হবে এ স্থাপনায়। থাকবে অত্যাধুনিক লাউঞ্জ, চেক ইন কাউন্টার, গমন ও আগমনী কাউন্টার, স্বয়ংক্রিয় পাসপোর্ট কন্ট্রোল কাউন্টার, দোকান, রেস্টুরেন্ট, শপিং মলসহ অন্যান্য সুবিধা। এটি চালু হলে বদলে যাবে দেশের প্রধান এ বিমানবন্দরের যাত্রী সেবার মান। এর মধ্য দিয়ে শাহজালাল বিমানবন্দর নতুনভাবে বাংলাদেশকে বিশ্বাসীর কাছে তুলে ধরবে।

বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) তথ্য মতে, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালে ২৪টি বোর্ডিং ব্রিজ থাকবে। যদিও প্রথম ধাপে চালু করা হবে ১২টি বোর্ডিং ব্রিজ। বহির্গমনের জন্য ১৫টি সেল্ফ সার্ভিস চেক ইন কাউন্টারসহ মোট ১১৫টি চেক ইন কাউন্টার থাকবে।

এছাড়াও ১০টি স্বয়ংক্রিয় পাসপোর্ট কন্ট্রোল কাউন্টারসহ থাকবে ৬৬টি ডিপারচার বা গমন ইমিগ্রেশন কাউন্টার থাকবে। আগমনীর ক্ষেত্রে পাঁচটি স্বয়ংক্রিয় চেক ইন কাউন্টারসহ ৫৯টি পাসপোর্ট ও ১৯টি চেক ইন অ্যারাইভাল কাউন্টার থাকবে।

এর বাইরে টার্মিনালে ১৬টি আগমনী ব্যাগেজ বেল্ট স্থাপন করা হবে। এছাড়া অতিরিক্ত ওজনের ব্যাগেজের জন্য চারটি পৃথক বেল্ট স্থাপন করা হবে। গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য তৃতীয় টার্মিনালের সঙ্গে মাল্টিলেভেল কার পার্কিং ভবন নির্মাণ করা হবে। এতে ১০৪৪টি গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা থাকবে।



তৃতীয় টার্মিনাল ভবনের সঙ্গে ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গ পথ ও উড়াল সেতু নির্মাণ করা হবে, যার মাধ্যমে মেট্রোরেল ও ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সংযোগ ব্যবস্থা থাকবে। এতে থাকবে আন্তজার্তিক মানের অত্যাধুনিক অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা। এছাড়া লাউঞ্জ, দোকান, রেস্টুরেন্টসহ সংশ্লিষ্ট সব ক্ষেত্রেই আর্ন্তজাতিক মানের যাত্রীসেবার সুবিধা রাখা হবে।

বেবিচক জানায়, তৃতীয় টার্মিনাল প্রকল্পের প্রথম ধাপের সঙ্গে বর্তমান টার্মিনাল ভবনগুলোর কোনো যোগযোগ ব্যবস্থা রাখা হবে না। তবে প্রকল্পের দ্বিতীয় ধাপে কানেকটিং করিডোরের মাধ্যমে পুরনো টার্মিনাল ভবনগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা হবে। বর্তমানে ভিভিআইপিদের জন্য পৃথক যে কমপ্লেক্স রয়েছে, সেটিও ভেঙে ফেলা হবে। তবে তৃতীয় টার্মিনালে পৃথকভাবে স্বতন্ত্র কোনো ভিভিআইপি টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে না। তৃতীয় টার্মিনাল ভবনের ভেতরে দক্ষিণ পাশে সর্বাধুনিক সুবিধাসম্পন্ন ভিভিআইপি জায়গা রাখা হবে। এছাড়া নির্মিতব্য এ প্রকল্পের দ্বিতীয় ধাপে গিয়ে বিমানবন্দরের অভ্যন্তরীণ টার্মিনালটি সরিয়ে নেয়া হবে।

কর্তৃপক্ষ আরো জানায়, শাহজালাল বিমানবন্দরের উত্তর পাশে রয়েছে আমদানি ও রফতানি কার্গো ভিলেজ। বর্তমান কার্গো ভিলেজের উত্তর পাশে যথাক্রমে ৩৫ হাজার ৮৬৩ বর্গমিটার ও ২৭ হাজার ১৪৪ বর্গমিটার আয়তনের সর্বাধুনিক সুবিধাসম্পন্ন দুটি পৃথক আমদানি ও রফতানি কার্গো ভিলেজ নির্মাণ করা হবে।

নতুন এ প্রকল্প নিয়ে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান বলেন, অনেক দেশই আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে চায়, কিন্তু আমরা তাদের জায়গা দিতে পারছি না। এর পরিপ্রেক্ষিতেই প্রধানমন্ত্রী এ প্রকল্প হাতে নিয়েছেন। এটি প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের প্রকল্প। এট প্রকল্প চালু হলে বিশ্বের অনেক দেশকেই আমরা ফ্লাইট চালুর সুবিধা দিতে পারবো।

বেবিচক চেয়ারম্যান জানান, প্রতিবছর দেশে আট শতাংশ হারে আকাশপথের যাত্রী বাড়ছে। এজন্য তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ হলে যাত্রীদের আধুনিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

বেবিচক চেয়ারম্যান আরো বলেন, তৃতীয় টার্মিনালে দুবাইসহ বিশ্বের উন্নত বিমানবন্দরে যে মানের যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয়েছে তা ব্যবহার করা হবে। বিভিন্ন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান আমাদের কাছে পণ্য ক্রয়ের জন্য ধরনা দিয়েছেন, প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু নিজে এটি তদারকি করেছি। কিন্তু আমরা সেরাটাই দেবো।

 -সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন

ট্যাগস

Post a Comment

0Comments

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

Post a Comment (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top