যে সম্প্রদায়ের নারীরা বন্যপ্রাণিকে নিজেদের বুকের দুধ পান করান

S M Ashraful Azom
0
যে সম্প্রদায়ের নারীরা বন্যপ্রাণিকে নিজেদের বুকের দুধ পান করান
সেবা ডেস্ক: জীব সেবায় মানুষ জাতিকে উৎসাহিত করতে স্বামী বিবেকানন্দ বলেছিলেন -‘জীবে প্রেম করে যেই জন, সেইজন সেবিছে ঈশ্বর’। কিন্তু সভ্য সমাজের মানুষ তার কততুকু করে তা বলা বাহুল্য।
 
এখন এমন এক সমাজের কথা জানাবো, যারা সভ্য সমাজ থেকে শত সহস্র মাইল দূরে থেকেও জীব প্রেমের মহান দৃষ্টান্ত স্থাপন করে চলেছেন।

সম্প্রদায়টির নাম আওয়া। বসবাস ‘পৃথিবীর ফুসফুস’খ্যাত আমাজনের ব্রাজিল অংশের গহীন অরণ্যে। আধুনিক সভ্যতার সঙ্গে যোজন যোজন দূরত্ব বজায় রেখে চলে এই গোত্র। এতেই তাদের স্বাচ্ছন্দ্য। কালেভদ্রে সভ্য মানুষের দৃষ্টি সীমায় তারা আসেন। এই গোত্রের মানুষ যাবাবর প্রকৃতির। এক স্থানে বেশিদিন থাকে না। ফলে তাদের যাপিত জীবন পর্যবেক্ষণ করার সুযোগ নেই বললেই চলে।

তবে সম্প্রতি বেশ কিছু মানুষের চেষ্টায় আওয়াদের জীবন যাপনের ধরণ উন্মোচিত হতে শুরু করেছে। বৃটিশ আলোকচিত্রী ডমিনিকো পুলিজ এমনই একজন গবেষক। ডমিনিকো তার এক সাংবাদিক বন্ধুর পরামর্শে  নৃ-তত্ত্ববিদকে সঙ্গে নিয়ে ২০০৯ সালে প্রথমবারের মতো আওয়াদের সঙ্গে দেখা করেন। ডমিনিকো একটি স্পিডবোটে সেখানে পৌঁছান। স্পিডবোটের শব্দে চমকে ওঠে আওয়ারা। কারণ এই সভ্য যুগের কোনো ধরনের যন্ত্রের সঙ্গে এই গোত্রের পরিচিতি নেই।

তবে সময় অতিবাহিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভয় কেটে যায় আওয়াদের। তারা ডমিনিকোকে নিয়ে হাসিঠাট্টা শুরু করে। কারণ ডমিনিকোর সঙ্গে তার পরিবার ছিল না। কোনো ব্যক্তি একা ঘুরছে এটা আওয়াদের ধারণার বাইরে। তারা মনে করে কোনো মানুষ পরিবার ছাড়া এক মুহূর্ত ঘুরতে বা থাকতে পারে না।

মোটা দাগে আমাজনের অন্যসব আদিবাসী গোত্র থেকে আওয়াদের জীবন যাপনে বেশ কিছু পার্থক্য রয়েছে। তারা বনকে মনে করে আশ্রয়দাতা। ফলে বনের সকল পশুপাখি তাদের পরিবারের অংশ। সভ্য মানুষের মতো শুধু মনে করেই খালাস নয়। বনের প্রত্যেকটি প্রাণির প্রতি রয়েছে তাদের প্রগাঢ় মমতা। বনের পশুরা তাদের ঘরে লালিত পালিত হয় সন্তানের মতো। তারা ক্ষুধা মেটানো ছাড়া বিনা প্রয়োজনে শিকারও করে না।

সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো দুর্বল পশু বিশেষ করে বানর এবং কাঠবিড়ালীকে আওয়া নারীরা সন্তানের মতো বুকের দুধ পান করান। এই প্রথাকে তারা ‘হ্যানিমা’ বলে। হ্যানিমা প্রথায় বন্যপ্রাণিরা আওয়াদের পরিবারের অংশ হয়ে যায়। ফলে কাঠবিড়ালী, বানরের মতো প্রাণি আওয়া শিশুদের সঙ্গে একই বিছানায় বড় হয়। আর এইসব প্রাণিই উঁচু গাছ থেকে খাদ্য সংগ্রহে আওয়াদের সহায়তা করে। প্রাণিগুলো বড় হওয়ার পর তারা বনে ছেড়ে দেয়। আর তাদের কখনো শিকার করে না। কারণ তারা যে পরিবারেরই অংশ।

পোশাকের ব্যবহার আওয়াদের মধ্যে খুব একটা নেই। তবে ডমিনিকো তাদের কিছু কাপড় দিয়েছিল, যেগুলো তারা প্রথমে নিতে আপত্তি জানালেও পরে নেয় এবং সেগুলো পরেই ছবি তুলতে রাজি হয়। আমাজনের গহীন অরণ্যে প্রাণ ও প্রকৃতির সঙ্গে মিলেমিশে হাজার বছর ধরে আওয়াদের বাস। কিন্তু যুগে যুগে তথাকথিত সভ্য মানুষেরা তাদের ওপর আক্রমণ চালিয়েছে। তাদের উচ্ছেদ করেছে তাদের আপন ভূমি থেকে, বানিয়েছে রাবার বাগানের দাস। বিশেষ করে ষোল শতকে যখন দক্ষিণ আমেরিকায় ইউরোপীয় কলোনী স্থাপন শুরু হয় তখন থেকে আওয়াদের জীবনে নেমে আসে ঘোরতর আঁধার। বর্তমানে আওয়াদের সংখ্যা কমতে কমতে চারশোয় এসে দাঁড়িয়েছে। আদিবাসী গোত্রদের অধিকার নিয়ে কাজ করা সংস্থাগুলোর দাবির মুখে সম্প্রতি ব্রাজিল সরকার আওয়াদের রক্ষায় আইন প্রণয়ন করেছে। তাদের বসত ভূমিতে মূল ভূখণ্ড থেকে মানুষের প্রবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

 -সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন

ট্যাগস

Post a Comment

0Comments

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

Post a Comment (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top