মাথায় আঘাত পেয়ে মধুপুরে শিকলবন্দি জীবন শুক্কুরের

S M Ashraful Azom
0
মাথায় আঘাত পেয়ে মধুপুরে শিকলবন্দি জীবন শুক্কুরের
সেবা ডেস্ক: দারিদ্র্যের মধ্যে জন্ম হলেও স্বাভাবিক ছিল টাঙ্গাইল জেলার মধুপুরের অজপাড়া গাঁয়ের শুক্কুর আলীর বেড়ে ওঠা। বাবা-মায়ের চার ছেলের মধ্যে চতুর্থ শুক্কুর আলীর জন্ম ১৯৮৭ সালে। ১৪/১৫ বছর বয়স থেকে মানসিক ভারসাম্যহীন। এখন গায়ে কাপড় রাখে না। বাড়িতে একটি গাছে সারাদিন শিকলে বাধা অবস্থায় উম্মাদ প্রলাপে দিন কাটে তার। অল্প আধটু খাওয়ায় চলে দিন। সারাদিন গাছের সঙ্গে পশুর মতো বাধা থেকে সন্ধ্যায় ছোট একটি ঘরের খুঁটিতে আবারও বাধা হয় তাকে।

ঘরের মেঝের খড় চাটাইয়ের বিছানায় শোয়ার ব্যবস্থা থাকলেও প্রায়ই নিদ্রাহীন আর প্রলাপে কাটে রাত। সকালে আবারও গাছের সঙ্গেই বাধা পড়ে। গত ১৫ বছর ধরে এমন পশু তুল্য জীবন শুক্কুরের। হতভাগ্য এই শুক্কুর আলী মধুপুর উপজেলার আলোকদিয়া ইউনিয়নের দিগরবাইদ গ্রামের (পশ্চিমপাড়া) শাহজাহান আলী ও রহিমা দম্পতির ছেলে।

সরেজমিন গিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা হলো। জানা গেল শুক্কুর সম্পর্কে নানা তথ্য। দিগরবাইদ বাজারের দোকানি শামীম জানান, দরিদ্র বাবা-মায়ের বড় আদরের ছেলে শুক্কুর কৃতিত্বের সঙ্গে স্থানীয় প্রাথমিকের পাঠ চুকিয়ে আলোকদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হয় ২০০০ সালের দিকে। টানাটানির পরিবারের কথা চিন্তা করে কিশোর শুক্কুর লেখাপাড়ার পাশাপাশি রাজমিস্ত্রির জোগালির কাজ করে। লেখাপাড়ায় যেমন শিক্ষকদের নজরে এসেছিল তেমনি কাজের প্রতিও আন্তরিক থাকায় মিস্ত্রিদের নজর কাড়ে সে।

দারিদ্র্যের কষাঘাতে লেখাপাড়া তার এগোয়নি। পরিবারের অচল চাকা ঘুরাতে শেষ অবধি কাজে মনযোগ দেয় সে।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, ২০০৪ সালের দিকে পরিচিত একজনের ঋণ শোধ করতে নিজেদের বাঁশ ঝাড় থেকে বাঁশ কেটে বিক্রির দায়ে পরিজনের হাতে বেশ পিটুনির শিকার হয় শুক্কুর। মাথায় আঘাত লাগে। সে সময় থেকে অস্বাভাবিক আচরণ শুরু।

বাড়ি থেকে কাউকে না বলে বেরিয়ে গিয়ে নিখোঁজ থেকেছে কয়েকবার। খোঁজাখুঁজি করে, মাইকিং করে একাধিকবার বাড়িতে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। নিবিড় চিকিৎসা কখনও হয়নি। অনিয়মিত চিকিৎসায় অবস্থার উন্নতি ঘটেনি।

তাই হারিয়ে যাওয়ার ভয়ে স্বজনদের সহায়তায় বাধ্য হয়ে বাবা-মা শুক্কুরের পায়ে ২০০৫ সালে শিকল পরিয়ে রাখছে।

শুক্কুরের ভাতিজা মাধমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থী স্বপন জানায়, তার চাচা শুক্কুর আলী মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে বাড়ি থেকে হারিয়ে গিয়েছিল। তাকে অনেক খোঁজাখুঁজির পর পাওয়া যায়। মূলত হারিয়ে যাওয়ার ভয়ে এখন এমনভাবে রাখা হচ্ছে।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আবু সাঈদ তালুকদার দুলাল জানান, শুক্কুর নামের এমন কোনো লোকের তথ্য তার জানা নেই।

সামাজিক নিরাপত্তার সরকারি ভাতার প্রয়োজন হলে এখনই ব্যবস্থা করা যাবে। মধুপুর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা হিসেবে চলতি দায়িত্বে আছেন ইসমাইল হোসেন। তিনি জানান, বিষয়টি আমাদের জানা নেই।

গোচরে এলে প্রতিবন্ধী হিসেবে তাকে ভাতা দেয়ার ব্যবস্থা করা যাবে কিন্তু এর চিকিৎসা বা পুনর্বাসন করার বিষয়ে সমাজসেবা বিভাগের কোনো সুযোগ আছে কিনা এই মুহূর্তে বলতে পারছি না।

 -সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন

ট্যাগস

Post a Comment

0Comments

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

Post a Comment (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top