জনপ্রতিনিধি তোমাকে সেল্যুট, তোমাকে ধীক্কারও!

S M Ashraful Azom
জনপ্রতিনিধি তোমাকে সেল্যুট, তোমাকে ধীক্কারও!

আমাদের জনপ্রতিনিধিরা সৎ হলে কর্মীরা সৎ হতে বাধ্য। যারা জনগণকে মেরে সরকারী অনুদান আত্মসাৎ করেছে তারা কখনোই জনপ্রতিনিধি ছিলনা। তারা মাত্র জনগণের সহজ সরল মতামত ও রায়কে পুঁজি করে রাজনৈতিক ব্যবসা করে ফকির থেকে লাট সাহেব হয়েছেন। জনগনের স্বাভাবিক জীবনকে জটিল করে তুলেছেন। অনেক মামলা হামলার ইতর জনক কিছু কিছু কথিত জনপ্রতিনিধি। এরা অগৌচরে গুপ্তচরে জনপদে অশান্তি সৃষ্টি করে, আবার প্রকাশ্যে তাদের সংশোধনী ভুমিকা দেখায়। বিচারের নামে জামানতের টাকা ফেরত পায়নি আছেন অনেক বাদী-বিবাদী পক্ষ। বিচারও পায়নি অনেকে। অহরহ এসব বর্তমান সমাজের বাস্তব চিত্র।

অপর দিকে এমন জনপ্রতিনিধির সন্ধান আছে যারা লাগাতার দু'তিন যুগ ধরে জনপ্রতিনিধি (মেম্বার-চেয়ারম্যান) ছিলেন। বাবা করে গেছেন, মা করেছেন, তাদের সন্তানেরাও জনপ্রতিনিধিত্ব করে যাচ্ছেন। ধারাবাহিক। এদেরকেই বলে জনগণের নেতা। ভোটের জন্য মানুষের ধারে ধারে যেতে হয়নি, রাতের আঁধারে চুরি করে টাকা দিয়ে ভোট কিনতে হয়নি। জনগণের ভালোবাসা কি তারা বুঝেছেন। তারাও জনগণকে সবসময় আগলিয়ে রেখেছেন। দেবতাকে পূঁজো দিলে দেবীত্ব লাভ হয়, সেটা উত্তম জনপ্রতিনিধিরাই বুঝেন।

আর যারা জনগণের রায়, ভোটকে চুরি করেছে তারা গদীতে বসে জনগণের অধিকার হনন করেছে। টেন্ডার, কাবিকা মেরে খেয়েছে। এদের কাছে জনগণ বলতে কিছু সশস্ত্র ক্যাডার বাহিনী ছাড়া আর কিছুই নেই। তো এদের নামের আগে জনদরদী, বিশিষ্ট দানবীর, মাটি ও মানুষের নেতা বড় বড় অক্ষরে লিখে ব্যাপক প্রচার করে। হুদামুদা নেতা। আসলে সমাজ খেকো, রক্তচোষা জনপ্রতিনিধি মাত্র। দেশের করোনা সংকটে চাল চুরের যে উপদ্রব বেড়েগেছে তার বহিঃপ্রকাশ তারা ক্যাডার নেতা বৈ কিছু না। প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ বিতরণে কিছু কিছু হুদামুদা নেতাদের কর্মকান্ড তাকেও ব্যথিত করে তুলেছে। মিডিয়া পাড়ায় যে সকল চাল চোর ধরা পড়েছে তাদের বেশীরভাগই হুদামুদা নেতা মাত্র।

ক্ষমতা প্রাপ্তি আল্লাহর বড় নেয়ামত। ক্ষমতার সঠিক ব্যবহারকারীকে আল্লাহ দীর্ঘদিন ধরে জনগণের পাশে রাখেন স্ব-সম্মানে। আর তিনি চাইলে নেতা বানান, আবার নেতাকে ভিক্ষুকও বানান। তিনি পারেন, গলায় ফুলের মালা পরাতে আবার জুতার মালাও পড়িয়ে দিতে। কিছু নেতা সৃজনাল ব্যবসায়ী। মাত্র পাঁচ বছরের জন্য নিয়্যত করে প্রতিনিধি রুপে আসেন, আবার চলে যায়। এ পাঁচ বছরে তাদের প্রাপ্তির খাতায়- ব্যাংক ব্যালেন্স, আলিশান বাড়ী, দামী গাড়ি, বিশাল আয়তনের জমিজমা যুক্ত হয়। এদের মৃত্যুতে জানাযা পড়ার লোক হয়না, স্মরণ করার ইভেন্ট থাকেনা, কেউ এদেরকে আদর্শ হিসেবে নিয়ে নিজেদেরকে উজ্জীবিত করতে পারেনা। ক্ষমতার চেয়ার যেদিন ছেড়েছে সেদিন থেকে টোকাই হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। অস্বীকার করার জো দেখছিনা।

আবার অনেক জনপ্রতিনিধি আছেন, যারা সরকারী অনুদানের পাশাপাশি ব্যক্তিগত অনুদান দিয়ে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন দেবতারুপে। জনগণ তাদেরকে শ্রদ্ধা করে, ভালোবাসে, বিশ্বাস করে, আমানতদার ভাবে। একজন জনপ্রতিনিধির এর চেয়ে বড় প্রাপ্তি কী হতে পারে? এদের মৃত্যুতে জনগণ স্বজন হারাদের মতো আর্তনাদ করে। আমি নিজেই দেখেছি বাঁশখালীর একজন চেয়ারম্যান যিনি মুক্তিযোদ্ধাও ছিলেন। তার মৃত্যুর খবরে জনগণ কি যেন হারিয়ে অস্থির প্রায়। জানাযার নামায শেষে বেশ কয়েকজন বৃদ্ধ লোক কাঁদতে কাঁদতে বেহুশ হয়ে গেছেন। বলে রাখি- তারা কেউ ওই নেতার কর্মিও নন, ক্যাডারও নন। সাধারণ আমজনতা তারা। মরহুম ওই চেয়ারম্যান বিচক্ষনতা দিয়ে বিচার করেছেন। এখনো লোকজন দীর্ঘশ্বাস ফেলে তার কথা বলে। এরকম ক'জন নেতা খুঁজে পাবেন? টর্চ লাইট যদ্দুর যাবে ততদূর চাঁদাবাজ, টেন্ডারবাজের প্রতিচ্ছবি পাবেন।

ইদানিং করোনা সংকটে কিছু কিছু জনপ্রতিনিধি প্রচন্ড কষ্ট করে মানুষের ধারে ধারে ত্রাণ নিয়ে যাচ্ছেন। সাধ্যমত ব্যক্তিগত তহবিল থেকে ত্রাণ দিচ্ছেন, পাশে থাকার শান্তনা দিচ্ছেন। এরাও নেতা, এরাও জনপ্রতিনিধি। বিপরীতে চাল, গম চোর নেতাও ইতোমধ্যে জনগণ দেখে নিচ্ছে। আসুন সমাজটাকে বদলে দিই। আমি আপনি সচেতন হলে অবাঞ্চিত, ভূঁইফোড় নেতার পাখা গঁজাবেনা সমাজে। জনগণ পরবর্তী টার্মে বুঝিয়ে দেয় কে নেতা কে, নেতার আদলে চাঁদাবাজ, সন্ত্রাস।

ভেবেছেন কী? বিনা প্রাপ্তিতে কয়েকক্রোশ পথ হেঁটে ভোট দিতে যাওয়া জনগণের কথা? আপনার জয়ের জন্য তাদের ত্যাগের কথা? ভেবেছেন আপনার প্রতিপক্ষ মাত্র কয়েকভোটে হেরে যাওয়ার কথা? আপনার হেরে যাওয়ার টেনশনে তাদের রায়ে জিতে যাওয়ার আনন্দের মুহূর্ত কি রকম ছিল মনে পড়ে?

এ জনগণ চায় শুধু আপনাদের সততা। সুষম বন্টন। সঠিক বিচার। জুলমের প্রতিকার। রাস্তা-ঘাট, কালভার্ট সুবিধা। যা আপনারা নিজ থেকেও দেন না, বরং সরকারী বাজেট থেকে দেন। শুধু টেন্ডার, কাবিকা, নেতাকর্মী কোটা বাদ দিলেই হয়। আপনারা সম্পূর্ণ দেবতা নন। আপনাদেরও চলতে হবে। খান, কাজ করে খান। সীমিত খান। মনে রাখবেন- ক্ষমতার এ প্রতিনিধিত্ব আপনাকে জান্নাতে নিবে আবার জাহান্নামেও নিক্ষেপক করবে।



লেখক-
শিব্বির আহমদ রানা
(শিক্ষক ও সাংবাদিক)




ভিডিও নিউজ


-সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন


#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top