টিভি ও অনলাইনের মাধ্যমে পাঠদান: উপভোগ করছে শিক্ষার্থীরা

S M Ashraful Azom
টিভি ও অনলাইনের মাধ্যমে পাঠদান উপভোগ করছে শিক্ষার্থীরা

সেবা ডেস্ক: বাংলাদেশসহ পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতি নোভেল করোনা ভাইরাসের সংক্রমণরোধে বাংলাদেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ সরকার। তবে টিভির মাধ্যমে বিকল্প পদ্ধতিতে পাঠদান কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। অন্যদিকে ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলগুলোও তাদের শিক্ষার্থীদের জন্য অনলাইনে পাঠদান চালু রেখেছে। নতুন এই পদ্ধতিটি বেশ উপভোগ করছে শিক্ষার্থীরা। সন্তানরা আবারো পড়াশোনায় ফেরায় স্বস্তিবোধ করছেন অভিভাবকরাও।

এছাড়া প্রাথমিকস্তরে শিক্ষার্থীদের জন্যও বিষয়ভিত্তিক অলাদা অনলাইন পোর্টাল করা হচ্ছে। শ্রেণি কার্যক্রমের ভিডিও আপলোড করা হবে সেখানে। এখান থেকে শিক্ষার্থীরা তাদের সুবিধাজনক সময়ে পড়া বুঝে নিতে পারবে।

গত ২৯ মার্চ থেকে ৬ষ্ঠ-১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য সংসদ টেলিভিশনে বিষয়ভিত্তিক ক্লাস শুরু হয়। টিভিতে ক্লাস শেষে শিক্ষক বাড়ির কাজ দিচ্ছেন। শিক্ষার্থীরা স্কুল খোলার পর এই বাড়ির কাজ জমা দেবে; যা তাদের ধারাবাহিক মূল্যায়নের অংশ হিসেবে বিবেচিত হবে।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকার গত ১৭ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করে দেশের সব স্কুল-কলেজ। দ্বিতীয় দফায় ১১ এপ্রিল পর্যন্ত তা বর্ধিত করা হয়। তৃতীয় দফায় ১২ ও ১৩ এপ্রিল সাধারণ ছুটি আর পরদিন পয়লা বৈশাখের ছুটিও যুক্ত হয়। সবশেষ চতুর্থ দফায় শুক্র ও শনিবার যুক্ত করে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত এ ছুটি বাড়ানো হয়েছে। ওই দিন পর্যন্ত বন্ধ থাকবে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও।

এদিকে বাংলা মাধ্যমের শিক্ষার্থীদের এপ্রিল থেকে মে মাসের মধ্যে অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা হওয়ার রুটিন থাকে। আর ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের ফাইনাল পরীক্ষাও একই সময়ে হয়ে থাকে।

কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে ঘরবন্দী হয়ে পড়ে শিক্ষার্থীরা। সিলেবাস সম্পন্ন করতে পারেনি কোনো স্কুলই। অভিভাবকদের মতে, দীর্ঘদিন ধরে ঘরবন্দী হয়ে থাকার ফলে শিক্ষার্থীদের ভেতর অস্থিরতা, পড়াশোনার প্রতি অনীহা সৃষ্টিসহ নানান সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে; যা নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে তাদের মনোজগতে।

এরকম পরিস্থিতিতে সরকারের নেয়া এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন অভিভাবকরা। তাদের মতে, টিভিতে পাঠদান শুরু হওয়ার পরদিনের একটা উল্লেখযোগ্য সময় পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা ব্যস্ত থাকছে পড়াশোনা নিয়ে। এভাবে পাঠদান পদ্ধতি তাদের কাছে নতুন হওয়ায় শিক্ষার্থীরাও কৌতূহলী হয়ে বসছে টিভির সামনে। টিভিতে দেয়া হোমওয়ার্কও তারা করছে নিয়মিতভাবে।

টিভিতে পাঠদান শুরুর আগেই রুটিন দিয়ে দেয়া হয়েছে। এক এক শ্রেণির জন্য নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। আবার টিভিতে নেয়া ক্লাসগুলো সারাদিনই পুনঃপ্রচার করা হচ্ছে। এতে কোনো কারণে কোনো শিক্ষার্থী ক্লাস মিস করলে পরবর্তীতে তা দেখে নিতে পারছে।

রাজধানীর উইলস লিটিল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজের ৭ম শ্রেণির শিক্ষার্থী ফায়াজ হোসেন খান সিফাত জানায়, টিভির মাধ্যমে পড়াশোনা করতে তার ভালোই লাগছে। প্রতিদিন সকালে নিয়মমতো সে বসে যায় টিভির সামনে। মনোযোগ দিয়ে অনুসরণ করে শিক্ষকের কথা। পরে সেই অনুযায়ী বাড়ির কাজও করে ফেলছে।

সিফাতের মা ফাতেমাতুজ জোহরা বলেন, টিভির মাধ্যমে এভাবে পাঠদান করায় তিনি এখন স্বস্তি ও শান্তি পাচ্ছেন। কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, স্কুল বন্ধের পাশাপাশি করোনাভাইরাসের কারণে বাচ্চারা ঘরের বাইরেও যেতে পারছে না। সারাদিন ঘরবন্দী হয়ে থাকতে থাকতে তারাও হাঁপিয়ে উঠেছে। পড়াশোনার জন্যে তাদের বেশি চাপও দেয়া যাচ্ছিল না। আবার সামনে পরীক্ষার সময়। সবকিছু মিলিয়ে সন্তানদের জন্য কোয়ালিটি একটা সময় নির্ধারণ করাটাই ছিল বেশ চ্যলেঞ্জিং। এখন টিভির মাধ্যমে পাঠদান করায় তারা নিজেরাই ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।

এদিকে বাংলা মিডিয়াম শিক্ষার্থীদের টিভির মাধ্যমে পাঠদান শুরু পর ইংরেজি মাধ্যমের অনেক স্কুলও তাদের শিক্ষার্থীদের জন্য অনলাইনে পাঠদান শুরু করেছে। এজন্য তারা ব্যবহার করছে সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো।

রাজধানীর সানিডেল স্কুল, গোলগথা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল (জেমস), সাউথ পয়েন্ট স্কুলসহ বেশ কিছু স্কুলে ফেসবুক, মেসেঞ্জার, হোয়াইটঅ্যাপ এর মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে পাঠদান শরু করেছে। এক্ষেত্রে শিক্ষকরা ভিডিও কলের মাধ্যমে পাঠদান করেন এবং হোমওয়ার্ক দিয়ে দিচ্ছেন। ভিডিও কলে গ্রুপ কনভারসেশনের মাধ্যমে গ্রুপ করে চ্যাট করছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। বিষয়টি শিক্ষার্থীরা বেশ উপভোগ করছে বলে জানিয়েছে তারা।

জেমস স্কুলের ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী নাজিফা জানায়, অনেকদিন পর শিক্ষক ও সহপাঠী বন্ধুদের দেখতে পেয়ে তার খুব ভালো লাগছে। সে জানায়, অনেকদিন ধরে স্কুলে না যেতে পেরে তার খুব খারাপ লাগছিল। পড়াশোনাতেও মন বসছিল না। সারাদিন কোনো কাজ ছিল না। এখন ভিডিও কলে নিয়মিত শিক্ষক ও বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়ে ভালো লাগছে। শিক্ষকরা পড়া দিচ্ছেন, সেগুলো পড়ছি। যেটা না বুঝি তা বুঝিয়ে দিচ্ছেন শিক্ষকরা।

এদিকে করোনাভাইরাসকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে প্রাথমিক স্তরের অর্থাৎ প্রথম থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের জন্য অনলাইন পোর্টাল তৈরি হচ্ছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতের মহাপরিচালক মো. ফসিউল্লাহ এ প্রসঙ্গে বলেন, ভিন্নি ভিন্ন ভিডিও তৈরি করে তা আপলোড করা হবে সাইটে। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অনলাইন ফ্রেন্ডলি করে গড়ে তোলা হবে। এসব কাজ বাস্তবায়ন করবে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা ও শিক্ষকরা। এটুআই এ কাজে সহায়তা করছে। ইউনিসেফ থেকেও এসব কাজে সহযোগিতা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) পরিচালিত টেলিভিশনের মাধ্যমে এমন শ্রেণি কার্যক্রম শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কাছ থেকে দারুণভাবে প্রশংসিত হচ্ছে। বন্ধের এই সময়টায় পড়াশোনা চালিয়ে যেতে এটিকে চমৎকার উদ্যোগ মানছেন শিক্ষক-বুদ্ধিজীবীরাও।

তবে যাদের বাড়িতে টেলিভিশন নেই তাদের এই ক্লাস করতে কিছুটা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। এমন প্রশ্নের জবাবে মাউশির পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) শাহেদুল খবির চৌধুরী ডেইলি বাংলাদেশকে বলেন, এই সমস্যার কথা অস্বীকার করছি না। তবে এখন পর্যন্ত এটিই আমাদের কাছে সবচেয়ে ভালো সমাধান। এক্ষেত্রে টিভি ক্লাসে বাড়ির কাজ যেটি দেয়া হবে সেটি বিদ্যালয় খুললে নতুন করে আবার দেয়া হবে। এজন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নির্দেশনা দেয়া হবে বলেও জানান তিনি।

টিভিতে পড়ানোর সময় সিলেবাস মানা হচ্ছে কিনা এ বিষয়ে তিনি বলেন, অর্ধবার্ষিকের সিলেবাসেই পড়ানো হচ্ছে। দু’একটা অধ্যায়ে এদিক-সেদিক হতে পারে। কেউ অভিযোগ করলে আমরা অবশ্যই এর সমাধান করে দেব।

ভিডিও নিউজ


-সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন


#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top