
সেবা ডেস্ক: খুলনা মেডিকেল কলেজের আরটি পিসিআর মেশিনে করোনাভাইরাস পরীক্ষার পজেটিভ হার এক শতাংশেরও কম তবে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে তা ১৫ শতাংশের বেশি। খুলনায় করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহে কোন টেকনোলোজিস্ট নেই। কাজ করছে ৬ জন স্বেচ্ছাসেবী এবং ১৩ জন ইপিআই টেকনিশিয়ান। ফলে অভিজ্ঞতা না থাকায় একদিকে সঠিকভাবে নমুনা সংগহের শঙ্কার পাশাপাশি থাকছে তাদের আক্রান্তের ঝুঁকিও।
সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, গত ৭ এপ্রিল খুলনা মেডিকেল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের মালিকুলার ল্যাবের আরটি পিসিআর মেশিনে করোনাভাইরাস পরীক্ষা শুরুর দিনে ভাইস প্রিন্সিপ্যাল ডাঃ মেহেদী নেওয়াজ সাংবাদিকদের বলেছিলেন জ্বও, সর্দি কাশি থাকলেই হবে না যাদের করোনায় আক্রান্ত হতে পারেন চিকিৎসকগণ সন্দেহ করবেন তাদেরই শুধুমাত্র পরীক্ষা করা হবে। এই ঘোষণার পরও গত এক মাসে খুমেকে করোনা পরীক্ষায় সনাক্তের হার এক শতাংশেরও কম। ৭ এপ্রিল থেকে গতকাল শনিবার ৯ মে পর্যন্ত খুলনা মেডিকেল কলেজে করোনা পরীক্ষা হয় ৩ হাজার ৫৬টি, এর মধ্যে পজেটিভ হয়েছে মাত্র ২৮টি। শতকরা হিসাবে যা এক শতাংশেরও কম। এর থেকে আকাশ পাতাল ব্যবধান যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুুক্তির করোনা পরীক্ষার হিসাবে। ১৮ দিনে ১ হাজার ১৬টি নমুনা পরীক্ষা করে ১৬০ জনের করোনা পজেটিভ ঘোষণা দেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনম সেন্টার। এছাড়া কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগে গত ৮ মে পর্যন্ত ৬৩৯ জনের নমুনা পরীক্ষা করা করে পজেটিভ আসে মাত্র ১৫ জনের।
করোনা পরীক্ষার জন্য এদিকে গত ১৫ দিনে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৩৬ জন করোনা পজেটিভ এসেছে। খুলনায় নেগেটিভ হওয়া একাধিক করোনাভাইরাসের নমুনা যশোরের ল্যাবে পজেটিভ হয়েছে। সম্প্রতি জনপ্রশাসন সচিব শেখ ইউসুফ হারুন-এর সাথে খুলনা সার্কিট হাউজে এক সভায় এমন মন্তব্য করেন খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডাঃ রাশিদা খানম। তবে যশোরের ল্যাবের ১৫টি টেস্ট উচ্চতর পরীক্ষার জন্য ঢাকায় আইইডিসিআর এ প্রেরণ করা হলে তা নেগেটিভ আসে। বিশেষ করে যশোর ল্যাবে পজেটিভ হওয়া ঝিনাইদহের ১৫টি পজেটিভ কেস ঢাকায় আইইডিসিআর এ পাঠালে সেখানে নেগেটিভ হয়েছে। গতকাল শনিবার এ বিষয়ে নিশ্চিত করে আইডিসিআর।
এদিকে মেডিকেল টেকনোলোজিস্ট সংকটে খুলনায় করোনা পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহ করছে ইপিআই টেকনিশিয়ান। এসব টেকনিশিয়ানরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে টিকা কর্মসূচি পালন করলেও অভিজ্ঞতা না থাকা সত্ত্বেও করোনাভাইরাসের নমুনা সংগ্রহের মত স্পর্শকাতর বিষয়ে া দায়িত্ব পালন করছেন তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, খুলনা জেলায় মোট ১৩জন ইপিআই টেকনিশিয়ান এ দায়িত্ব পালন করছেন। এর মধ্যে ৯ উপজেলায় একজন করে এবং ৪ জন জেলা সদর হাসপাতাল থেকে নমুনা সংগ্রহ করছেন। তবে খুলনা মেডিকেল কলেজের নিজস্ব কয়েকজন ল্যাব টেকনোলোজিস্ট-এর সাথে কাজ করছেন ৬ জন স্বেচ্ছাসেবী মেডিকেল টেকনোলোজিস্ট। এতে করে একদিকে তাদের অভিজ্ঞতা না থাকার কারণে সঠিক নমুনা পাওয়া নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হওয়ার পাশাপাশি তাদের জীবনেও ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এরই মধ্যে জেলার রূপসা উপজেলায় একজন ইপিআই টেকনিশিয়ান করোনা আক্রান্ত হয়েছেন।
সম্প্রতি খুলনা সার্কিট হাউজে খুলনা জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত সচিব মোঃ আবুল কালাম আজাদ-এর কাছে টেকনোলোজিস্ট সংকটের কথা তুলে ধরেন খুলনা মেডিকেল কলেজের ভাইস প্রিন্সিপ্যাল ডাঃ মেহেদী নেওয়াজ। সাথে সাথে তিনি অভিজ্ঞ মেডিকেল টেকনোলোজিস্ট’র জন্য খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগাযোগের সুপারিশ করেন। তবে এর প্রেক্ষিতে সিভিল সার্জন ডাঃ সুজাত আহমেদ জানিয়েছে বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক মেডিকেল টেকনোলোজিস্ট দেয়ার কথা বলেছেন। এ ঘটনার ১০ দিন পার হলেও এখন পর্যন্ত কোন টেকনোলোজিস্ট দেয়নি ব্র্যাক। ফলে ভিডিও কনফারেন্সে প্রশিক্ষণ নিয়ে ইপিআই টেকনেশিয়ানরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে করোনা ভাইরাসের নমুনা সংগ্রহ করছে।
খুলনা জেলার সিভিল সার্জন ডাঃ সুজাত আহমেদ বলেন, ব্র্যাক খুব শিগগিরই তাদের মেডিকেল টেকনোলোজিস্ট পাঠাবে। এ ব্যাপারে কথাও চূড়ান্ত হয়েছে। মেডিকেল টেকনোলজিস্ট আসলে কিছুটা যে সংকট আছে, তা আর থাকবে না।