সেবা ডেস্ক: দুর্যোগ মুহূর্তে এক টাকার সহায়তাই বিপদগ্রস্তের কাছে কোটি টাকার মতো মনে হয়। আর যদি কেউ হাজার টাকার সহায়তা নিয়ে এগিয়ে আসে তখন তো চোখে-মুখে খুশির জোয়ারই থাকার কথা।
এর তিল পরিমাণও ব্যত্যয় ঘটেনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরশহরের ভাদুরঘর এলাকায় রেনু মিয়ার। করোনা পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে ঈদ উপহার হিসেবে আড়াই হাজার টাকা পেয়ে সব শঙ্কা ভুলে খুশির জোয়ারে ভাসছেন এই রং মিস্ত্রি ও তার পরিবার। তার পরিবারে যেন নেমে এসেছে ঈদের খুশি।
ছোট্ট টিনের ঘরে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে স্বল্প আয়ে বেশ ভালোই চলছিল তার সংসার। সংসারে সচ্ছলতা না থাকলেও সুখ ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব সেই সুখ টুকু কেড়ে নেয়। বন্ধ হয়ে পড়ে রেনু মিয়ার আয় রোজগারের পথ। অভাব-অনটনের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছায় পুরো সংসার। ধার-দেনা করে কোনো রকমে চলছিল তার সংসার। ঠিক সেই মুহূর্তে প্রধানমন্ত্রীর টাকা পেয়ে রেনু মিয়ার কাছে ঈদের খুশির মতোই আনন্দ লাগছে।
বুধবার দুপুরে রেনু মিয়া বলেন, রং মিস্ত্রির কাজ করে প্রতিমাসে ১০-১২ হাজার টাকা আয় করি। এ টাকা দিয়েই চলে আমার সংসার। স্ত্রী ও তিন সন্তান নিয়ে থাকি টিনের ঘরে। ঘরটিতে থাকা দুইটি কক্ষের মধ্যে একটি আমার, আরেকটি আমার ভাইয়ের। গাদাগাদি করেই থাকি সেখানে। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর থেকেই কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন সংসার চালাতে কষ্ট হচ্ছে। গত দুইমাস ধরে শুধুমাত্র শাক-সবজি ও ডাল-ভাত খেয়ে বেঁচে আছি সবাই। টাকার অভাবে মাছ-মাংস কিনতে পারিনি একদিনও।
তিনি আরো বলেন, কর্মহীন হওয়ার পর থেকে কারও কাছ থেকে কোনো ত্রাণ সহায়তা পাইনি। চক্ষুলজ্জার কারণে লাইনে দাঁড়িয়ে সরকারি ত্রাণ সহায়তাও নিতে পারিনি। তাই ধার-দেনা করেই সংসার চালাতে হচ্ছে।
কর্মহীন ও হতদরিদ্রদের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঈদ উপহার হিসেবে নগদ টাকা দেবেন জানতে পেরে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরের সঙ্গে যোগাযোগ করি। এরপর কাউন্সিলর আমার তালিকায় উঠায়।
প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করার দিনই রেনু মিয়ার মুঠোফোনের নগদ হিসাব নম্বরে চলে আসে কাঙ্ক্ষিত আড়াই হাজার টাকা। এ টাকা পেয়ে যেন রেনু মিয়া ঈদের খুশি ফিরে পেলেন। ওইদিনই টাকা উঠিয়ে চলে যান বাজার-সদাই করতে।
রেনু মিয়া বলেন, প্রধানমন্ত্রীর টাকা পেয়ে বাজারে গিয়ে চাল, ডাল, তেল ও পেঁয়াজের সঙ্গে মাছও কিনেছি। ঈদের কিছু বাজার-সদাইও করেছি এ টাকা দিয়ে। এছাড়া অসুস্থ শিশু সন্তানের ওষুধও কিনেছি প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহারের টাকায়। এখন আরো ৩০০ টাকা আছে হাতে। এ দুর্যোগে কর্মহীনদের জন্য উপহার পাঠানোয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাই।
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রভাবে কর্মহীন হয়েপড়া ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবার ঈদ উপহার হিসেবে দুই হাজার ৫০০ টাকা করে দিচ্ছেন। এজন্য জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, ইউপি চেয়ারম্যান, সদস্য, শিক্ষক এবং সমাজের গণমান্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটি ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করেছে।
তালিকা অনুযায়ী সারাদেশে ৫০ লাখ পরিবারকে দেয়া হচ্ছে ঈদ উপহার। আর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় ৭৫ হাজার পবিারকে দেয়া হবে প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার। উপহারের তালিকায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার ১১ হাজার ৯৩২টি পরিবার রয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরের ইউএনও পঙ্কজ বড়ুয়া বলেন, পৌরসভা ও ইউপি থেকে প্রাপ্ত তালিকা আমরা যাচাই-বাছাই করে দেখছি। প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো যেন প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার পায় সেজন্য আমরা সতর্কতার সঙ্গে তালিকা প্রণয়নের কাজ করছি।