করোনা ভাইরাস শনাক্ত ও মৃত্যু কমছে ঢাকায়

S M Ashraful Azom
0
করোনা ভাইরাস শনাক্ত ও মৃত্যু কমছে ঢাকায়

সেবা ডেস্ক: দেশে প্রাণঘাতি করোনাভাইরাস সংক্রমণ ও মৃত্যু দিন দিন বেড়েই চলছে। প্রথম অবস্থায় শুধু রাজধানী ঢাকার ভেতরেই শনাক্ত ও মৃত্যু সীমাবদ্ধ ছিল। পর্যায়ক্রমে দেশের সব বিভাগেই সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে। বাড়ছে শনাক্ত ও মৃত্যু। তবে চার মাসের বেশি সময় পরে এসে তুলনামূলক হারে ঢাকায় শনাক্ত ও মৃত্যু কমছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গত তিন মাসের তথ্য বিশ্লেষণে পাওয়া গেছে এমন চিত্র। দেখা যাচ্ছে, গত ২৫ এপ্রিলের বুলেটিন অনুসারে পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত ছিল ৩০৯ জন, যার ৮৬ শতাংশই ছিল ঢাকার। আর মৃত্যু হয়েছিল ৯ জনের, যাদের ৭৭.৭৭ শতাংশও এখানে। ২৫ মে পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত ছিল এক হাজার ৯৭৫ জন, যার ৬৫ শতাংশই ছিল ঢাকার। আর ওই দিন মৃত ২১ জনের মধ্যে ৫২.৩৮ শতাংশ ছিল ঢাকারই। সর্বশেষ গতকাল ২৫ জুনের বুলেটিন অনুসারে পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত তিন হাজার ৯৪৬ জন, এর মধ্যে ৪৯ শতাংশ ঢাকার এবং বাকি ৫১ শতাংশ ঢাকার বাইরের। এ দিন মৃত ৩৯ জনের মধ্যে ২৫.৬৪ শতাংশ ঢাকার, বাকিরা ঢাকার বাইরের।

দেশে করোনা সংক্রমণের শুরু থেকে এ পর্যন্ত মোট শনাক্ত ও মৃত্যুর গড় হিসাবেও ঢাকা বিভাগে কমেছে শনাক্ত ও মৃত্যুর হার। গত এপ্রিল পর্যন্ত শনাক্ত রোগী ছিল ঢাকায় প্রায় ৯০ শতাংশ, যা এখন নেমে এসেছে ৬৪.৪৩ শতাংশে। আর মৃত্যু এপ্রিলের শুরুতেও ঢাকায় ছিল গড়ে ৮৮ শতাংশ, তা এখন নেমে এসেছে ৫২.৯৭ শতাংশে।

এই পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে আরো দেখা যায়, ঢাকার বাইরে চট্টগ্রামে দ্রুত শনাক্ত ও মৃত্যুহার বেড়ে চলেছে। বিশেষ করে, ঢাকার পরেই সর্বোচ্চ ২৭ শতাংশে উঠে এসেছে চট্টগ্রামের মৃত্যুহার। এরপর রাজশাহীতে ৪.০৪, সিলেটে ৩.৭২, বরিশালে ৩.২২, খুলনায় ২.৮৪, ময়মনসিংহে ২.৭১ ও রংপুরে ২.৫ শতাংশ।

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত তিন মাসে শনাক্ত ও মৃত্যুহারে অদলবদল ঘটছে কোনো কোনো বিভাগের সঙ্গে।

অধ্যাপক ড. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ‘প্রতিদিন মৃত্যুর সংখ্যার ক্ষেত্রে খুব একটা হেরফের না হলেও সংক্রমণের ব্যাপকতার তুলনামূলক চিত্রে ঢাকায় মৃত্যুহার যেমন কমেছে, তেমনি সংক্রমণের হারও আমরা কম দেখতে পাচ্ছি।’

কেন ঢাকায় শনাক্ত ও মৃত্যুহার কমছে জানতে চাইলে এই রোগতত্ত্ববিদ বলেন, ‘আগে শুধু ঢাকায়ই সংক্রমণ ছিল। এখন তা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। আবার প্রথম দিকে ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলায় কেউ সংক্রমিত হলেই চিকিৎসার জন্য ঢাকায় ছুটে আসতেন। এখন এই সংখ্যাটা অনেকটাই কমে গেছে। ঢাকার বাইরে যাঁরা সংক্রমিত হচ্ছেন তাঁদের বেশির ভাগ নিজ নিজ এলাকায় থেকে যাচ্ছে। মৃত্যুর ক্ষেত্রেও তেমনটা ঘটছে। আগে যেমন ঢাকার বাইরে থেকে আসা অনেকের তথ্য ঢাকার হিসাবে যুক্ত হয়ে যেত; কিন্তু এখন সেটা হচ্ছে না—যে জেলার তথ্য সেখানকার হিসাবেই উঠছে।’

চট্টগ্রামের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ড. ফ্লোরা বলেন, ঢাকার পরেই দ্রুত চট্টগ্রামের পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। শনাক্ত ও মৃত্যু দুটিই বেড়েছে।

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের আগ পর্যন্ত ঢাকায় শনাক্ত ও মৃত্যুর হার যা ছিল, পরে ওই হার আরো দ্রুত পাল্টাতে থাকে। বিশেষ করে, ঢাকায় শনাক্ত ও মৃত্যুহার যেমন নিচে নামতে থাকে, তেমনি ঢাকার বাইরে তা ওপরে উঠতে থাকে। এ ক্ষেত্রে কখনো কখনো ঢাকার চেয়ে চট্টগ্রামের মৃতের সংখ্যা বেশিও হয়ে যায়। যেমন গতকালই ঢাকায় ও চট্টগ্রামে সমান ১০ জন করে মৃত্যু ঘটেছে। এ ছাড়া গত ১ থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত হিসাব করে পাওয়া তথ্য অনুসারে, ঢাকা বিভাগে (মহানগরীসহ) মৃত্যুহার ৬৭ থেকে ২৭ শতাংশে উঠানামা করেছে। অন্যদিকে চট্টগ্রামে মৃত্যুহার এই সময়ের মধ্যে উঠানামা করেছে ৪০ থেকে ১৮ শতাংশে। এরপর ১৫ জুন থেকে চট্টগ্রামে মৃত্যুহার বাড়তে থাকে আরো দ্রুতগতিতে ঢাকার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে।

গত ২৪ জুনের আগে ১৭ জুন পর্যন্ত বিভাগওয়ারি মৃত্যুর চিত্র এ রকম—ঢাকায় ১০ জন, চট্টগ্রামে ৯ জন, রাজশাহীতে ছয়জন, খুলনায় সাতজন, বরিশালে একজন, রংপুরে একজন ও ময়মনসিংহে তিনজন। ঢাকায় ১৬ জন, চট্টগ্রামে ১৫ জন, রাজশাহীতে ছয়জন, খুলনায় দুজন, বরিশালে একজন, সিলেটে একজন ও ময়মনসিংহে দুজন। ঢাকায় ১৫ জন, চট্টগ্রামে ১২ জন, রাজশাহীতে দুজন, খুলনায় দুজন, ময়মনসিংহে দুজন, সিলেটে একজন ও বরিশালে চারজন। ঢাকায় ১৬ জন, চট্টগ্রামে ১১ জন, রাজশাহীতে দুজন, খুলনায় চারজন, বরিশালে চারজন, সিলেটে একজন ও রংপুরে একজন। ঢাকায় ১০ জন, চট্টগ্রামে ১৩ জন, রাজশাহীতে পাঁচজন, খুলনায় দুজন, বরিশালে দুজন, ময়মনসিংহে চারজন ও রংপুরে একজন। ঢাকায় ২১ জন, চট্টগ্রামে ১৬ জন, রাজশাহী ও খুলনায় দুজন করে, বরিশাল ও সিলেটে একজন করে এবং ময়মনসিংহে চারজন। ঢাকায় ১৪ জন, চট্টগ্রামে ১৮ জন, খুলনায় দুজন, রাজশাহী, রংপুর, বরিশাল ও ময়মনসিংহে একজন করে। ঢাকায় ২১ জন, চট্টগ্রামে ১২ জন, রাজশাহীতে চারজন, খুলনায় দুজন, রংপুরে একজন, সিলেটে একজন এবং ময়মনসিংহে দুজন।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. শাহ মনির হোসেন বলেন, ‘হ্যাঁ, শতকরা হারে ঢাকায় আক্রান্ত ও মৃত্যু কমেছে। তবে সংখ্যায় কম না। এ ক্ষেত্রে বলব, এখন যা সংক্রমিত হয়েছে, সেটা হয়েছে আমাদের দোষে। অর্থাৎ আমরা লকডাউন দিয়েও তা কার্যকর রাখতে পারিনি। বরং ঢাকার বাইরে থেকে মানুষকে ঢাকায় ডেকে এনেছি, সংক্রমণ ছড়িয়েছি সারা দেশে। তা না হলে ঢাকায় যেমন আক্রান্ত ও মৃত্যুহার আরো কম থাকত, তেমনি ঢাকার বাইরেও এভাবে ছড়িয়ে পড়ত না।’

ভিডিও নিউজ


-সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন


Post a Comment

0Comments

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

Post a Comment (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top