গার্মেন্টেসে আবার সুদিন ফিরছে

S M Ashraful Azom
0
গার্মেন্টেসে আবার সুদিন ফিরছে

সেবা ডেস্ক: দেশের তৈরি পোশাক খাতে আবারও সুসংবাদ এলো। করোনার কারনে গত মার্চ-এপ্রিলে বাতিল ও স্থগিত হওয়া রপ্তানি আদেশের ৮০ শতাংশই আবার ফিরে এসেছে। বিদেশি ক্রেতারা রপ্তানি আদেশ দিচ্ছেন। একইসঙ্গে বকেয়া পরিশোধেও এগিয়ে আসছেন। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, এর ফলে করোনাভাইরাস মহামারীর ধাক্কা কাটিয়ে আবার ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে দেশের তৈরি পোশাক খাত। এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরী পারভেজ বলেন, এটা অবশ্যই আমাদের জন্য একটা স্বস্তির সংবাদ। ফলে দেশের সামগ্রিক রপ্তানি খাত আবারও ঘুরে দাঁড়াবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ-বিসিআই সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরী পারভেজ গতকাল বলেন, মহামারী করোনাভাইরাসের প্রেক্ষাপটে দেশের প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাকশিল্পে ভবিষ্যতে অবিশ্বাস্য প্রবৃদ্ধি হবে। বড়দিন সামনে রেখে আন্তর্জাতিক ক্রেতারা আশাবাদের জাগান দিচ্ছেন। ভীতি দূর হলে পোশাকপণ্যের বিক্রি বাড়বে। আন্তর্জাতিক ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানগুলো বাতিল ও স্থগিত হওয়া ক্রয়াদেশ নতুন করে দিচ্ছে। বড়দিন সামনে রেখে বিক্রির আগ্রহ দেখিয়ে ক্রেতারা পণ্যও নিচ্ছেন। এটা আমাদের জন্য অবশ্যই ইতিবাচক। জানা গেছে, প্রায় চার মাস পর বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমার সঙ্গে জনমনে আতঙ্কও কমেছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে খুলতে শুরু করেছে শিল্পকারখানা। ব্যবসা-বাণিজ্য সচল করার চেষ্টা করছে বিশ্ববাসী। বন্ধ আকাশপথ ফের খুলতে শুরু করেছে। ইউরোপ ও আমেরিকার দেশগুলোয় ধীরে ধীরে বাংলাদেশের রপ্তানির বাজার স্বাভাবিক হচ্ছে। করোনার প্রভাবে শুরুতে স্থগিত ও বাতিল হওয়া ক্রয়াদেশের বেশির ভাগই তারা আবার গ্রহণ করতে শুরু করেছন। শুধু তাই নয়, ক্রেতাদের কাছে যেসব পাওনা বকেয়া রয়েছে তা পরিশোধেও তারা এগিয়ে আসছেন। যদিও এ ক্ষেত্রে তারা কিছু শর্ত জুড়ে দিচ্ছেন। তাদের সঙ্গে অবশ্য আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।

সূত্র জানান, মার্চ-এপ্রিল সময়ে বাতিল বা স্থগিত হওয়া রপ্তানি আদেশের ৮০ শতাংশই এরই মধ্যে ফিরে এসেছে। বিজিএমইএর পক্ষ থেকেও ক্রেতাদের সঙ্গে আলোচনা কিংবা মধ্যস্থতা করা হচ্ছে। অবশ্য ক্রয়াদেশ ফিরলেও অর্থ পরিশোধের ক্ষেত্রে শর্ত জুড়ে দিচ্ছেন ক্রেতারা। অনেক ক্ষেত্রেই তারা ছয় মাস কিংবা এক বছরের মতো লম্বা সময় নিচ্ছেন। আবার কেউ কেউ ডিসকাউন্ট দিতে বাধ্য করছেন। বিজিএমইএ বলছে, আমরাও তাদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। যেহেতু সময়টা বেশ চ্যালেঞ্জের। তাই আমরাও চাই ক্রেতারাও টিকে থাকুক। বিক্রেতা বা উৎপাদানকারীরাও ব্যবসা টিকিয়ে রাখার জন্য রীতিমতো লড়াই করছেন। ক্রেতারা রপ্তানি আদেশ দিলেও লম্বা সময়ে চাচ্ছেন। এ বছর আদেশ দিলেও তারা কোনো পণ্য নেবেন না। পণ্য নেবেন আগামী বছর। এটাকেও বর্তমান পরিস্থিতিতে রপ্তানি খাতের জন্য ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।

এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন গতকাল বলেন, মহামারী করোনাভাইরাস সংকট উত্তরণে বিশ্ব একটু ঘুরে দাঁড়ালেই বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাকশিল্পে বিশাল সম্ভাবনা দেখছি। করোনার চেয়ে আতঙ্ক আমাদের বেশি ক্ষতি করেছে। এ ক্ষতিও আমরা পুষিয়ে উঠতে পারব। করোনার আতঙ্ক এখনো পুরোপুরি দূর হয়নি। তবে বাংলাদেশি পোশাকপণ্যের আন্তর্জাতিক ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানগুলো তাদের দোকানপাট খোলা শুরু করেছে। ওয়ালমার্টের মতো ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলছে। কিন্তু এইচঅ্যান্ডএম ও জেসি পেনির মতো পোশাক বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান খোলেনি।
সূত্র জানান, মার্চ ও এপ্রিল জুড়ে পুরো ইউরোপ-আমেরিকায় রীতিমতো তা-ব চালায় করোনাভাইরাস। প্রতিদিন সেখানে সংক্রমণের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ে মৃতের সংখ্যা। বিশেষ করে জার্মানি, ইতালি, স্পেন, ব্রাজিল ও যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থা খুবই নাজুক পর্যায়ে চলে যায়। ইতালি, স্পেন ও জার্মানি কিছুটা কাটিয়ে উঠতে পারলেও আমেরিকার পরিস্থিতি এখনো ভয়াবহ। সে সময় ইউরোপ-আমেরিকার ৩ শতাধিক ক্রেতাপ্রতিষ্ঠান ৩১৫ কোটি ডলারের রপ্তানি আদেশ স্থগিত করে। ঢালাওভাবে রপ্তানি আদেশ বাতিল বা স্থগিতের বিরোধিতাও করে বাংলাদেশ। সে সময় ৪১টি ব্র্যান্ড কোম্পানিকে চিঠি দেওয়া হয়। এ ছাড়া নানাভাবে দেনদরবার করা হয়। এতে কঠিন সংকটে পড়ে বাংলাদেশে রপ্তানি খাতের হৃৎপি- তৈরি পোশাকশিল্প। কারখানার মালিকরা শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধেও সংকটে পড়েন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকার কারখানার মালিকদের ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা দেয় শুধু শ্রমিকদের বেতন-ভাতার জন্য। সরকার অবশ্য এর বাইরে সামগ্রিক অর্থনীতি রক্ষায় আরও অন্তত ৯৮ হাজার কোটি টাকার কয়েকটি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে; যা দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো বাস্তবায়ন করছে। ইতোমধ্যে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডও ধীরে ধীরে সচল হতে শুরু করেছে। সূত্র জানান, দেশের অন্যতম বৃহত্তম রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ডিবিএল গ্রুপ। এইচঅ্যান্ডএম, ওয়ালমার্ট, জি স্টার, জারা, পুমাসহ বেশকিছু ব্র্যান্ডের কাছে রপ্তানি করে প্রতিষ্ঠানটি। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হলে দুটি ব্র্যান্ড বাদে বাকি ক্রেতারা তাদের ক্রয়াদেশ বাতিল করে। এখন সেগুলো ধীরে ধীরে ফেরত আসছে। এরই মধ্যে সিংহভাগ ফিরে এসেছে। তবে নতুন করে অর্ডার হচ্ছে খুব কম। বাংলাদেশ থেকে একক ব্র্যান্ড হিসেবে সবচেয়ে বেশি পোশাকপণ্য কেনে সুইডেনভিত্তিক ক্রেতাপ্রতিষ্ঠান এইচঅ্যান্ডএম। জানা গেছে, এ প্রতিষ্ঠানটি কোনো অর্ডার বাতিল করেনি এবং কোনো বিক্রেতার পাওনা পরিশোধেও দেরি করেনি। বিশ্বব্যাপী এইচঅ্যান্ডএমের ৫ হাজারের বেশি খুচরা দোকানের মধ্যে বর্তমানে ৯০ শতাংশই খোলা। বাংলাদেশের প্রায় ২৫০ রপ্তানিকারক এ ব্র্যান্ডের কাছে বছরে প্রায় ৩০০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করে। এখন ওইসব দেশের আগামী গ্রীষ্মকালীন অর্ডার নিচ্ছে ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানগুলো। করোনার কারণে সদ্যসমাপ্ত ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশের রপ্তানি কমেছে ৬৮৬ কোটি ডলার বা প্রায় ৫৮ হাজার কোটি টাকা। স্বাধীনতার পর এত বেশি পরিমাণে রপ্তানি আর কখনই কমেনি বাংলাদেশের। এদিকে আগামী বছরের জন্য রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। করোনা-পরবর্তী সময়ে সারা বিশ্বে নতুন করে কর্মকান্ড শুরু হলে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের চাহিদা আরও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। ফলে এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

পোশাকশিল্প মালিকদের আরেক সংগঠন বিকেএমইএ সভাপতি এ কে এম সেলিম ওসমান গতকাল  বলেন, তৈরি পোশাক কারখানাগুলো চলমান করোনা সংকট কাটিয়ে ধীরে ধীরে উন্নতির দিকে যাচ্ছে। ক্রেতারা আবারও সাড়া দিচ্ছেন। আমরাও আশ্বস্ত। মহামারী করোনা ভাইরাস সংকট উত্তরণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার যথেষ্ট সাহায্য-সহযোগিতা করছে। যদিও করোনা সমস্যা বাংলাদেশের একার নয়; এটা বৈশ্বিক সমস্যা।

ভিডিও নিউজ


-সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন


ট্যাগস

Post a Comment

0Comments

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

Post a Comment (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top