
শিব্বির আহমদ রানা, বাঁশখালী সংবাদদাতা: পল্লীবিদ্যুতের ভেলকিবাজিতে অতিষ্ট চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার প্রায় ৯৬ হাজার গ্রাহক। এ অঞ্চলের মানুষ নিত্য লোডশেডিং এ ভোগছে। প্রতিদিনই বিদ্যুৎতের লুকোচুরি খেলায় জনজীবন চরমভাবে অতিষ্ট। সভ্যতার চরম উৎকর্ষতায় আজও বিদ্যুৎতের চরম হেয়ালীপনা থেকে রেহায় পায়নি বাঁশখালীবাসী। রাত আর দিন বলে নেই কোন তফাৎ, বেশিরভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকেনা। পুরো বছর জুড়েই বিদ্যুতের লুকোচুরি থাকে অস্বাভাবিকভাবে। বিদ্যুৎতের এহেন লুকোচুরি খেলায় মারাত্মকভাবে অস্বস্তিতে আছেন বাঁশখালীর লোকজন। রাতের বেশিরভাগ সময় বিদ্যুৎ না থাকে বলেই চলে। ২৪ ঘন্টার মধ্যে অন্তত ১৫/২০ বার এমনকি তারও বেশি বিদ্যুৎতের লুকোচুরি হয় দীর্ঘসময় ধরে। সামান্য বৃষ্টিপাতে, হালকা বাতাসেও বিদ্যুৎ চলে যায় দীর্ঘ বিরতীতে। সপ্তাহের শুক্রবার কখনো নোটিশ দিয়ে, কখনো নোটিশ ছাড়া গাছকাঁটার নামে পুরোদিন বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রাখে। পুরো বছড় জুড়েই গাছকাঁটা যেন ট্রাডিশনালে পরিণত হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে সোস্যাল এক্টিভিটিসদের মতে, বর্তমানে বাঁশখালীর এক নম্বর সমস্যা এখন পল্লীবিদ্যুতের ভেলকিবাজি।
মিটার রিডিং মিটারেই সীমাবদ্ধ রেখে অতিরিক্ত রিডিং দেখিয়ে করা হচ্ছে ভূতুড়ে বিল, বিদ্যুৎ সংযোগের নামে দালালদের দৌরাত্ম্যের শেষ নেই, দালালদের রোড টু রোড সম্পর্ক রয়েছে সংশ্লীষ্ট কর্মকর্তাদের, দালালদের মোটা অংকের টাকা দিলেই মিটার মিলে কম সময়ে অন্যতায় মাসের পর মাস গুনতে হয় অপেক্ষার সময়, ঘনঘন লোডশেডিং এর কারণে বাড়ির নিত্য প্রয়োজনীয় ইলেকট্রিক সামগ্রী নষ্ট হয়ে যাচ্ছে এমনও অভিযোগ করেছেন বাঁশখালী পল্লীবিদ্যুতের গ্রাহকেরা।
উল্লেখ্য যে, দিনের অধিকাংশ সময় বিদ্যুৎ সরবরাহ না থাকলেও মিটার ভাড়া ও অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করতে হয় পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি নির্ধারিত মূল্যে। ভূক্তভোগীর অনেকে অভিযোগ করেন যে, দিনের এক-তৃতীয়াংশ সময় বিদ্যুৎ ব্যবহার না করলেও প্রতিমাসেই অতিরিক্ত বিল দিতে হচ্ছে। এছাড়াও, সংযোগ পরীক্ষা করার নামে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি গ্রাহকদের সাথে নগ্ন প্রতারনা চালিয়ে যাচ্ছে এমনকি নাম্বার উঠেনা এমন মিটার দিয়ে আইডিয়ামাত্র বিল বসায় বলেও জানান গ্রাহকেরা। বিশেষ করে সরকারী বেসরকারী অফিসের কাজ, পড়াশুনা, গৃহস্থলির কাজ, চিকিৎসা সেবা, ব্যবসা-বানিজ্যসহ সকল মানবিক কাজকে অসম্ভব করে দিচ্ছে লোডশেডিং এর অন্ধকার। বিদ্যুৎ নির্ভর বাসস্থানগুলোর আলো-বাতাস-পানি বন্ধ থাকার মত অনাকাংখিত ঘটনায় অতিষ্ট হয়ে পড়ছেন বিদ্যুতের গ্রাহক ও ভুক্তভোগীরা। ঘনঘন লোডশেডিং যখন নিত্য রুটিনে পরিণত হয়েছে তখন উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন ও পৌরসভায় বিকল্প বিদ্যুতের ব্যবস্থা করতে অনেকে দু'টাকার ম্যাচ নিয়ে এক কাঠিতে এগিয়ে আছে। ঘরে ঘরে, সোলার সিষ্টেম, আইপিএস, জেনারেটর, চার্জার লাইট-ফ্যান, মোমবাতি, কেরোসিন নিয়ে প্রস্তুত থাকেন বাঁশখালী পৌরসভাসহ সচ্ছ্বল পরিবার গুলো।
পল্লীবিদ্যুতের স্বেচ্ছাচারিতাকে অনেকেই নিরীহভাবে মেনে নিয়েছেন। তারা সংশ্লীষ্ট কতৃপক্ষের প্রতি বার বার দৃষ্টি আকর্ষণ করলেও মিলছেনা কোন সমাধান। লকডাউনে স্কুল-মাদরাসা বন্ধ রয়েছে। দিনেরাতে সমানতালে লোডশেডিং থাকায় স্কুল মাদ্রাসায় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের বাড়িতে পড়াশুনার ক্ষতি করছে। এসব অসঙ্গতি ও নির্বিচার বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নতা ও দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থায় এটা স্পষ্ট যে, এই দেশে কোনদিনই বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান হবে না। উপজেলার মানুষ কি বিদ্যুৎ-এর অনবরত লোডশেডিং এর কবল থেকে রেহাই পাবেনা? এমন প্রশ্ন উঠে আসে সচেতন মহল থেকে।
বাঁশখালী পল্লীবিদ্যুৎ অফিসসূত্রে জানা যায়, আবাসিক-অনাবাসিক সহ প্রায় ৯৬ হাজার গ্রাহকদের সেবা দিতে চট্টগ্রাম পল্লীবিদ্যুৎ সমিটি-১ জোনাল অফিস, সাব স্টেশন ৪ টিসহ মিলে ৯৬ জন কর্মকর্তা-কর্মচারি আছে, যা চাহিদার চেয়ে অপ্রতুল। তাছাড়া দোহাজারী থেকে সাতকানিয়া হয়ে দীর্ঘ ৪৬ কি.মি অতিক্রম করে বাঁশখালীতে বিদ্যুৎ আসে। সড়কে গাছপালা থাকার কারণে অব্যবস্থাপনার ফলে বৃষ্টি-বাদলের সময় সাময়িক বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকে।
বাঁশখালী পল্লীবিদ্যুতের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) মু. মফিজুল ইসলাম বলেন, 'বাঁশখালীতে চাহিদার চেয়ে অতিরিক্ত লোড বেড়ে যাওয়াতে এ সমস্যার সৃষ্টি হয়। তাছাড়া আমরা চাহিদামতো বিদ্যুৎ সরবরাহ পাচ্ছিনা। বাঁশখালীতে বিদ্যুৎ সংযোগ লাইনগুলো গাছপালার সাথে থাকাতে ঝড়বৃষ্টির সময় ও বাতাসে ডালপালা ভেঙ্গে পড়ে। এতে সাময়িক অসুবিধার কারণে সমস্যার সৃষ্টি হয়। দোহাজারী থেকে সাতকানিয়া হয়ে বিদ্যুৎ বাঁশখালীতে আসাতে ওখানেও কোন সমস্যা হলে তার প্রভাবও বাঁশখালীতে পড়ে তাই লোডশেডিং হয়।'
-সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।