মেঘে ঢাকা তারা হুনুফা

S M Ashraful Azom
0
মেঘে ঢাকা তারা হুনুফা


রেজাউল করিম বকুল, শেরপুর প্রতিনিধি: হুনুফা বেগম। তার ভাগ্যের আকাশে বাসা বেঁধেছে অমানিশা। যেন জন্ম থেকেই জ্বলছে। শৈশব থেকেই সইছে অভাবের তাড়না। দারিদ্র্যতার নির্মম কষাঘাত যেন জীবন সঙ্গী। জীবনটাই যেন অপ্রতিকুলতায়। বার বার নানা বাঁধার মোকাবেলা করতে হয়েছে তাকে। তবে হার মানেনি। ঝিয়ের কাজ আর। টিউশনি করে সংসারের চাকা ঘুরাতে ছোট থেকেই ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে  তাকে। এর ফাঁকেঁও ছিল পড়া লেখা। খেলা ধূলা, গান ও নৃত্যেও ছিল পারদর্শী। মায়া ভরা মুখ। সহজ সরল চাহনী। সহযেই জয় করেন সবার মন। গড়ে তুলেন নিজের অবস্থান। সকল প্রতিকুলতাকে হার মানিয়ে এমএ পাশ করেন হুনুফা বেগম। কিন্তু ভাগ্য বিরম্বিত। সোনার হরিণ সরকারি চাকরি তার ভাগ্যে জোটেনি। জীবন মানে যন্তনা। এটা মেনেই এগিয়ে যাচ্ছেন। অবশেষে চাকরি নেন গ্রাম পুলিশের। এখানেও প্রশংসিত  তিনি। বাস্তবতা যে কতো কঠিন? সংগ্রামী  হুনুফার জীবনের গল্প শোনলে তা বোঝা যায়। জীবন সংগ্রামী এই নারী হুনুফা বেগম শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার রানীশিমুল ইউনিয়নের বিলভরট গ্রামের বাসিন্দা। সম্প্রতি এ প্রতিনিধির সাথে কথা হয় হুনুফা বেগমের। তিনি তুলে ধরেন তার জীবনের ট্রাজেডি আর সফতার গল্প।
হুনুফা বেগমের বাবা হানিফ উদ্দিন মারা গেছেন শৈশবেই। মা কোহিনুর বেগম গৃহিনী। তার বয়স সাতাশ ছুইঁ ছুইঁ। তিনি বলেন, মাননীয় প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথেও দেখা করেছি। কিছুই চাইনি। মনে করেছিলাম চাকরি হবেই। কিন্তু তার ভাগ্যে জোটেনি সরকারি চাকরি। বাধ্য হয়ে বেসরকারি সংস্থার মাঠ পর্যায়ের বিভিন্ন প্রকল্পের অধীনে চাকরি করেছেন। দু’ এক বছর না গড়াতেই শেষ হতো চাকরির মেয়াদ। তবে বসে থাকেনি।  উপজেলা সমাজ সেবা ও মহিলা অধিদপ্তর থেকে সেলাই প্রশিক্ষণ, নকশী কাঁথাসহ বিভিন্ন কাজ শিখেছেন। তার মতো বেকার অন্য নারীদেরও প্রশিক্ষণ করান। এসব করেই হুনুফা, তার মা আর এক বোনের ভরণ পোষন করতেন। ইতোমধ্যে সরকারি চাকরির বয়সের সীমানা অতিক্রম হচ্ছে বলে তিনি গ্রাম পুলিশের দফাদার পদে চাকরির আবেদন করেন। অবশেষে চাকরি হয়। নারী হয়েও পুরুষের সাথে পাল্লা দিয়ে পালন করছেন রানীশিমুল ইউনিয়ন পরিষদে গ্রাম পুলিশের দায়িত্ব। তবে অবসর পেলেই ছুটে যান সামাজিক কার্যক্রমে। সমাজেও স্বীকৃত হুনুফা যেন এক মেঘে ঢাকা তারা।
হুনুফা জানান, তারা দুই বোন। হুনুফাই বড়। ঢাকার একটি আত্মীয়ের বাসায় থেকে ঝিয়ের কাজ করে পড়া লেখা করেছেন। কখনো পড়া লেখা বন্ধে প্রচÐ বাঁধার সন্মুখীন হতো। তুবও পিছু হটেনি। টিউশনির অর্থ দিয়ে পড়ালেখাসহ সংসারের খরচ করেছে। হাতে কোনো নগদ অর্থ ছিলনা। কোনো সম্পদও নেই। সামাজিকভাবে অনেকটাই হেয় প্রতিপন্ন হয়ে থাকতে হয়েছে তাকে। সেই দুর্দিনের স্মৃতি তাকে এখনো পিড়া দেয়। তবুও নানা প্রতিকুলতাকে হার মানিয়ে দেখেছেন সোনালি স্বপ্ন। হুনুফা বলেন, আমারতো বয়স শেষ। বোনটাকে পড়া লেখা করাচ্ছি। ওকে ভাল ছেলের হাতে তুলে দিতে পারলেই আমি সফল। এর পর হয়তো ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখবো।  
বর্তমানে সমাজে  তিনি একজন উচ্চ শিক্ষিত মেয়ে। এখন তিনি মাসে আয় করেন ১৫ হাজার টাকা। তিনি সমাজে নিজস্ব পরিচয়ে প্রতিষ্ঠিত। তাকে দেখে অন্য মেয়েরাও পড়াশোনার উৎসাহ অনুপ্রেরণা পায়। সমাজে তিনি এখন উজ্জল দৃষ্টান্ত। তার এ সফলতার জন্যে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কার্যালয় থেকে  “জয়িতা অন্বেষণে বাংলাদেশ ২০১৮” আওতায় শিক্ষা ও চাকুরির ক্ষেত্রে সফলতা অর্জনকারী নারী ক্যাটাগরিতে উপজেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ জয়িতা হিসেবে নির্বাচিত করেছেন। হুনুফার ইচ্ছা সমাজে পিছিয়ে পড়া নারীদের প্রতিষ্ঠিত করে তোলা। তিনি বদলে দিতে চান অবহেলিত নারীদের জীবন। মেঘের আড়াল থেকে বেরিয়ে যেন সমাজে আলো ছড়াতে পারে। বদলে দিতে পারে নিজের ভাগ্যটাকে। 


-সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন
ট্যাগস

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top