নুরের ফেসবুক লাইভে ‘রুচিহীন’ বক্তব্যে সমালোচনার ঝড়

S M Ashraful Azom
0
নুরের ফেসবুক লাইভে ‘রুচিহীন’ বক্তব্যে সমালোচনার ঝড়


সেবা ডেস্ক: ধর্ষণ মামলার আসামিদের গ্রেফতারের দাবিতে অনশনরত তরুণীকে ফেসবুক লাইভে এসে ‘দুশ্চরিত্রা’ বলে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর।

রোববার রাতে ফেইসবুক লাইভে এসে ওই তরুণীকে কটাক্ষ করে তার 'চরিত্র' নিয়ে প্রশ্ন তোলেন নুর। এরপরেই ওই ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। 

নুর তার ফেসবুক থেকে ভিডিওটি সরিয়ে নিলেও নিজের অবস্থানের পক্ষে বক্তব্য দিয়েছেন কয়েকটি সংবাদ মাধ্যমে। 

নুরদের বিরুদ্ধে মামলার বাদী বলেছেন, 'আমি দুশ্চরিত্রা হলে নুরের সহযোগীরা কি চরিত্রবান? কারণ, নুর তো বলেছেন, স্বেচ্ছায় সব কিছু হয়েছে। তাহলে তাদের কেন আস্কারা দিচ্ছেন তিনি।

‘প্রথমত তিনি (নুর) যা বলেছেন সব বানোয়াট, মনগড়া কথা বলেছেন। এরপরেও তার কথার পরিপ্রেক্ষিতে যদি ধরেও নেই আমি দুশ্চরিত্রা, তাহলে তার সহযোগী সোহাগ বা মামুন কী? তারা কি চরিত্রবান?

‘নুর বলেছেন, সোহাগের সঙ্গে তোলা ছবিতে আমি হাসছিলাম। সেটা তো ঘটনার আগের ছবি। তখন হাসলেই কি ধর্ষণ মিথ্যা হয়ে যায়?’

এই তরুণীর মামলায় নুরের সংগঠন ছাত্র অধিকার পরিষদের দুই নেতাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তবে আসামি ছয় জন, যাদের একজন নুর নিজেও।

ওই তরুণী মামলা করেছেন মোট তিনটি। তার অভিযোগ, পরিষদের বহিষ্কৃত আহ্বায়ক হাসান আল মামুন তাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ করেছেন। পরে মামুনের কাছে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে ধর্ষণ করেন নাজমুল হাসান সোহাগ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীর করা ধর্ষণ মামলায় নুরের সংগঠনের দুই নেতাকে গ্রেফতার করে পুলিশ
ধর্ষণ ও ধর্ষণ চেষ্টা মামলায় গ্রেফতারের পর নুরুল হক নুরের দুই সহযোগীকে সোমবার ঢাকার একটি আদালতে তোলা হয়। ছবি: সাইফুল ইসলাম
 
মামলায় বলা হয়েছে নুরকে ঘটনাটি জানানো হয়েছিল। প্রথমে তিনি মীমাংসার আশ্বাস দেন। পরে চুপ হয়ে যেতে বলেন। নইলে অনলাইনে ‘পতিতা’ হিসেবে প্রচার চালানোর হুমকি দেন।   

নুরের ভিডিওর বক্তব্য নিয়ে যোগাযোগ করা হলে মানবাধিকারকর্মী খুশি কবির নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি ভিডিওটি দেখিনি, কিন্তু আপনার কথার প্রেক্ষিতে বলতে পারি এটি খুবই ন্যাক্কারজনক ঘটনা। এভাবে কাউকে হেয় করে অপরাধ লুকানো যায় না।’

‘দ্বিতীয়ত, কারো চরিত্র ভালো না খারাপ এই বিষয়টি আসলে আপেক্ষিক। যার যার দৃষ্টিকোণ থেকে এটা নির্ধারণ করা হয়। অপরাধ আর চরিত্র দুটি আলাদা জিনিস। অপরাধ করলে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ আছে, সেখানে কাউকে হেয় করা যথেষ্ট রুচিহীনতার কাজ।’

নৃবিজ্ঞানী রেহনুমা আহমেদ বলেন, 'নুরুল হক নুরের যে ফেসবুক লাইভের কথা বলছেন আমি সেটি দেখিনি। যদি তিনি অভিযোগকারীর ক্ষেত্রে দুশ্চরিত্রা শব্দ ব্যবহার করে থাকেন তাহলে খুবই নিন্দনীয়।'

তিনি বলেন, ‘পিতৃতন্ত্রের মতাদর্শিক অস্ত্রগারে নিত্যনৈমিত্তিক ব্যবহারের জন্য নারীর চরিত্র-সংক্রান্ত নানা শব্দ দিনের ২৪ ঘণ্টা, মাসের ৩০ দিন, বছরের ১২ মাস- শানানো থাকে। এগুলোর ব্যবহার কোনো পরিস্থিতিতেই গ্রহণযোগ্য নয়।

নুরদের গ্রেফতারের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীর অনশন
ধর্ষণ ও ধর্ষণে সহযোগিতা মামলার নুরুল হক নুরসহ সব আসামিদের গ্রেফতারের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর অনশন
 
‘ধর্ষণ ও যৌন সহিংসতার বিরুদ্ধে লড়তে হলে রাস্তায় শুধু মিছিল করলে হবে না, পিতৃতান্ত্রিক অস্ত্রগুলোকে নিরস্ত্র করার উপায় ও পদ্ধতি বের করতে হবে। আর সেই সদিচ্ছা ও আকাঙ্ক্ষার নিরন্তর প্রয়োগ দৃশ্যমান হতে হবে।’

সাংবাদিক উদিসা ইমন বলেন, ‘একটি দায়িত্বশীল জায়গা থেকে এমন ঘটনা ঘটাতে পারে না। নুর দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছেন, যা খুবই আপত্তিকর। ‘

সাংবাদিক ইশরাত জাহান ঊর্মি বলেন, ‘কথায় কথায় নারীকে দুশ্চরিত্রা প্রমাণ করে দেয়াটা আমাদের সমাজের প্রচলিত বৈশিষ্ট্য। নুরের বক্তব্য আসলে সমাজের সেই বৈশিষ্ট্যেরই একটি অংশ।

‘ডাকসুর সাবেক ভিপি কিংবা একটি ছাত্র অধিকার সংগঠনের নেতৃত্বে থাকা একজন ব্যক্তির কাছ থেকে এমন আচরণ যখন আমরা পেলাম, তখন আমাদের বুঝতে হবে, ভবিষ্যতে যারা ছাত্র অধিকার বা নেতৃত্বে আসবেন তারা কতোটা নারীবিদ্বেষী হবেন।‘

অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ও কলামিস্ট লীনা পারভিন বলেন, ‘তিনি (নুর) একজন নারীকে দুঃশ্চরিত্র বলে মনের কদর্যকেই প্রকাশ করলেন। তার এই বক্তব্য আসলে সমাজে টিকে থাকা ধর্ষকামী পুরুষের বক্তব্যকেই প্রতিনিধিত্ব করে।

‘প্রকাশ্যে ভিডিও বার্তায় একজন ভিক্টিমকে গালিগালাজ করে তিনি প্রমাণ করলেন, তিনি সমাজ থেকে ধর্ষণ দূর হোক এটা চান না।‘

ডাকসুর সাবেক সদস্য তিলোত্তমা শিকদার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নুরের কথা সত্যি ধরে নিলে বলতে হয়, নুর যাদের নিয়ে ঘোরেন, যাদের প্রশ্রয় দেন, তারাও দুশ্চরিত্র।

‘তারা তো এতদিন কিছু স্বীকারই করেননি। ভিডিওর মাধ্যমে এবার নুর কার্যত স্বীকার করে নিলেন তার সহকর্মীদের অপরাধ।’

নুরের ভিডিও নিয়ে মন্তব্য জানতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরিনের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছিল নিউজবাংলা। তবে এ প্রসঙ্গ তুলতেই তিনি বলেন, ‘আমি আসলে ফোনে কোনো কমেন্ট দিই না। শুধু এখন না, আগেও দিইনি। ক্যামেরার সামনেও আমি আসছি না। আপনি বরং আমাকে ছেড়েই স্টোরিটা করেন।’

-সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন
ট্যাগস

Post a Comment

0Comments

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

Post a Comment (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top