
শফিকুল ইসলাম: পঞ্চম দফায় বন্যার পানি ব্রহ্মপুত্র নদ দিয়ে কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার বাঘমারা শহররক্ষা ভাঙ্গা বাঁধ দিয়ে প্রবেশ করায় সাড়ে ৯’শ হেক্টর জমির আমন ধান নি¤œজিত হয়েছে। পানি বন্দি হয়েছে প্রায় তিন হাজার পরিবার। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে কয়েকটি গ্রাম। দফায় দফায় ক্ষতির হিসেব গুনতে হচ্ছে কৃষকদের। ফলে সর্বস্ব হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ওইসব কৃষক পরিবার।
শুক্রবার (২ অক্টোবর) সকালের দিকে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রৌমারী উপজেলার বন্দবেড় ইউনিয়নের জন্দিরকান্দা, চাক্তাবাড়ি, পদ্মারচর, বাঘমারা, কলেজপাড়া, খনজনমারা, বাইসপাড়া, বাগুয়ারচর, জিগ্নিকান্দি, বাইটকামারী, খাঁপাড়া, বাঞ্ছারচরসহ কয়েকটি গ্রামে প্রায় ২ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়। পশু খাদ্যের জন্য হাহাকার অবস্থায় পড়েছে বন্যা কবলিত পানিবন্দি খামারিরা। কেজিতে ২৫ টাকা দরে খড় কিনে গরু ও মহিষকে খাওয়ানো হচ্ছে। কৃষকগণ অভাবের তাড়নায় কম দামে বিক্রি করছেন গৃহপালিত পশু।
গত বন্যার ক্ষতি থেকে পুষিয়ে নিতে বিভিন্ন এলাকা থেকে বেশি দামে চারা ধান কিনে ক্ষেতে রোপন করে ঘুরে দাড়ানোর চেষ্টা ছিল ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকের। এর আগের বন্যায় বীজতলা নষ্ট হয়ে যায়। ওই ক্ষতি থেকে কাটিয়ে উঠতে সরকারের প্রণোদনা হিসেবে বিনা মুল্যে ধানের চারা, ধান বীজ, মাসকলাই ও শাকসবজির বীজ উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বিতরন করা হয়েছিল। পঞ্চম বারের বন্যায় আবারো কৃষককে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। উপজেলা কৃষ্ িঅফিস সূত্রে জানা গেছে, এবারে রোপা আমনের লক্ষমাত্রা ছিল ৫ হাজার ৪০ হেক্টর জমি। দ্বিতীয় দফা বন্যায় শহর রক্ষা বাঁধ জলিলের বাড়ী নামকস্থানে ভেঙ্গে যায়। এছাড়াও খনজনমারা বেড়িবাঁধের তিনটি, শহর রক্ষা বেড়িবাঁধের দুইটি স্থানে গত বছর বন্যায় ভেঙ্গে যায়। পঞ্চম দফায় বন্যার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় ও বেরি বাঁধগুলো মেরামত না করায় সহজে বন্যার পানি প্রবেশ করছে নি¤œঞ্চল এলাকায়। এতে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে কয়েকটি গ্রাম। বন্যা পানি তীব্র গতিতে বৃদ্ধি পাওয়ায় রৌমারী শহরে পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে।
উপজেলার বন্দবেড় ইউনিয়নের বন্দবেড় গ্রামের রেজাউল ইসলাম বলেন, আমি প্রায় ৪ বিঘা জমিতে রোপা আমনের চাষ করেছিলাম। শহররক্ষা বাঁধ ভাঙ্গা থাকায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি সহজেই প্রবেশ করে ক্ষেতের ফসল তলিয়ে যায়। জমিতে দুইবার রোপা আমনের চারা রোপন করেছি। দুইবারে নষ্ট হয়ে গেল।
বাঘমারা গ্রামের রফিক মিয়া বলেন, খুব কষ্ট করে আমন ধান লাগাইছি। তাও আবার বন্যার পানিতে তলিয়ে গেল। গরু বাছুর নিয়া বিপাকে আছি।
বন্দবেড় ইউপি চেয়ারম্যান কবির হোসেন জানান, দফায় দফায় বন্যা আসায় কৃষকের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। পানিবন্দি ও ক্ষতি গ্রস্থ কৃষকের তালিকা করা হচ্ছে। তাছাড়াও শহর রক্ষা বেড়িবাঁধটি দ্রæত মেরামত করা দরকার।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহরিয়ার হোসেন জানান, নতুন করে বন্যা আসায় সাড়ে ৯’শ হেক্টর রোপা আমন পানিতে তুলিয়ে গেছে। এছাড়াও মাসকলাই, শাকসবজিসহ বিভিন্ন জাতী জমির ফসল নি¤œজিত হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার আল ইমরান বলেন, শহর রক্ষা বাঁধটি ভাঙ্গা থাকায় বন্যা পানি সহজে নি¤œাঞ্চলগুলোতে প্রবেশ করছে। এতে কৃষকের ফসলের অনেক ক্ষতি হয়েছে।
-সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।