আজ ১০ জানুয়ারি, বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস

S M Ashraful Azom
0
আজ ১০ জানুয়ারি, বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস


আজ ১০ জানুায়ারি, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। ১

৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারী আমাদের স্বাধীনতার মহানায়ক বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের বন্দীদশা হইতে মুক্তিলাভ করিয়া রক্তস্নাত ও যুদ্ধ-বিধ্বস্ত সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে আসেন সগৌরবে। 

ব্রিটিশ রাজকীয় বিমান বাহিনীর বাহনে চেপে মুক্ত বিহঙ্গের ন্যায় প্রিয় মাতৃভূমিতে অবতরণ করেন বাংলার এই অবিসংবাদিত নেতা। ঐ সময়কার তেজগাঁও বিমানবন্দরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পদার্পণের সঙ্গে সঙ্গে সৃষ্টি হয় এক আবেগঘন ও আনন্দমুখর মুহূর্ত। একদিকে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে স্বজন হারানোর বেদনা ও শোক, অন্যদিকে নানা শংকা ও হতাশার মাঝে আশার আলো হিসাবে আগমন ঘটে বাঙালি জাতির প্রিয় নেতার। তাই বিমানবন্দর হইতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সভামঞ্চ পর্যন্ত দেখা দেয় জন সমুদ্রের ঢেউ।

সর্বকালের সর্ববৃহৎ এই সমাবেশে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু যে ভাষণ প্রদান করেন, তা ছিল খুবই হৃদয়স্পর্শী ও উদ্দীপনামূলক। ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ যেখানে দাঁড়াইয়া তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামের ডাক দিয়াছিলেন, এই দিন একই স্থানে তিনি শ্মশান বাংলাকে সোনার বাংলায় পরিণত করিতে অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য দীর্ঘমেয়াদি সংগ্রামের আহ্বান জানান। তার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে ১৬ ডিসেম্বরের বিজয় পূর্ণতা পায়। এ জন্যই ইতিহাসে এই দিবসটি অনন্য ও মহিমান্বিত।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর এই আগমনে দেশ একটি মহাদুর্যোগের হাত হইতে রক্ষা পায়। সে সময় ব্রিটেনের প্রভাবশালী দৈনিক গার্ডিয়ান এক সম্পাদকীয়তে লিখে যে, তার এই মুক্তি বাংলাদেশকে বাঁচার সুযোগ দিয়েছে। ইহার আগে দীর্ঘ নয় মাস পাকিস্তানের কারাপ্রকোষ্ঠে অন্তরীণ থাকা কালে তার জীবন নাশের উপক্রম হয়েছিল। প্রহসনমূলক বিচারের রায় অনুযায়ী তার ফাঁসি নিশ্চিত করার জন্য কবরও খনন করা হইয়াছিল। এই সময় তিনি বীরের ন্যায় বলিয়াছিলেন, ‘আমার লাশটা বাংলার মানুষের কাছে পাঠিয়ে দিও’। কোন প্রলোভন ও ভয়-ভীতিই তাকে বাঙ্গালির জনদাবি ও গণতান্ত্রিক আদর্শ হইতে বিচ্যুত করিতে পারে নাই। তার দৃঢ়তার কারণে পাকিস্তানের নূতন প্রেসিডেন্ট ও প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক জুলফিকার আলী ভুট্টোর কনফেডারেশনের স্বপ্নও ধূলিসাত্ হয়। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে কারাবন্দী বঙ্গবন্ধু ছিলেন অধিক প্রভাবশালী ও অনুপ্রেরণার উত্স। তিনি সশরীরে না থাকিলেও ছিলেন সবখানে। পৃথিবীতে এমন ঘটনা বিরল যে, জননেতা ১১ শত মাইল দূরে কারাগারে অবস্থান গ্রহণ করিলেও তার নামের উপর ভিত্তি করিয়া একটি দেশ স্বাধীন হইয়া গিয়াছে। তার মুক্তি ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের পিছনে বিশ্বের গণতন্ত্রকামী মানুষের অকুণ্ঠ সমর্থন এবং ভারতের তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধির বিশ্বজনমত সৃষ্টি ও অন্যান্য অবদান অনস্বীকার্য ও চিরস্মরণীয়। ইহার পর বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের স্বল্প সময়ের মধ্যেই মিত্রবাহিনীর সেনা প্রত্যাহার, যুদ্ধ-বিধ্বস্ত দেশের অর্থনৈতিক, প্রশাসনিক ও সামরিকসহ সার্বিক পুনর্গঠন, শরণার্থী ও মুক্তিযোদ্ধাদের পুনর্বাসন, সংবিধান প্রণয়ন, জাতিসংঘের সদস্য লাভ প্রভৃতি কার্যক্রম বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়।

প্রত্যাবর্তনের দিন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ভাষণে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেছেন, ‘ইনশাল্লাহ স্বাধীন যখন হয়েছি, তখন স্বাধীন থাকবো। একজন মানুষ এই বাংলাদেশে বেঁচে থাকতে কেউ আমাদের স্বাধীনতা কেড়ে নিতে পারবেন না।’ স্বাধীনতাকে সার্থক ও চির অক্ষয় করে রাখার জন্য তিনি সর্বাগ্রে অর্থনৈতিক মুক্তির কথা বলেন। তার ভাষায়, ‘এ স্বাধীনতা আমার ব্যর্থ হয়ে যাবে যদি আমার বাংলার মানুষ পেট ভরে ভাত না খায়। এই স্বাধীনতা আমার পূর্ণ হবে না যদি বাংলার মা-বোনেরা কাপড় না পায়। এ স্বাধীনতা আমার পূর্ণ হবে না যদি এদেশের মানুষ যারা আমার যুবক শ্রেণী আছে তারা চাকরি না পায় বা কাজ না পায়।’ 

বঙ্গবন্ধুর সেই দিনের সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে হলে এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হইবে। অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও দেশ গঠনের লক্ষ্যে গণতন্ত্রের নিরবচ্ছিন্ন অনুশীলন অত্যাবশ্যকীয়। তবেই বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার স্বপ্ন পূরণ হতে পারে। তার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের এই দিবসে এই হউক আমাদের দৃঢ়-অঙ্গীকার।

 


শেয়ার করুন

-সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top