ত্যাগ, উৎসর্গ ও আনুগত্যের ঈদ: মুহাম্মদ শামসুল ইসলাম সাদিক

S M Ashraful Azom
0
ত্যাগ, উৎসর্গ ও আনুগত্যের ঈদ মুহাম্মদ শামসুল ইসলাম সাদিক



ঈদুল আযহা মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব। সৃষ্টিকর্তার নৈকট্য লাভে অন্যতম মাধ্যম। ইব্রাহীম (আ:) স্বয়ী পুত্র ইসমাঈল (আ:) কে আল্লাহর রাস্তায় কোরবান করে সৃষ্টিকর্তার নৈকট্য অর্জন করেছিলেন। ইব্রাহিম (আ:) কর্তৃক স¦ীয় প্রাণপ্রিয় পুত্র ইসমাঈল (আ:)-এর কোরবানী করার সেই ঘটনাকে মুসলিম মিল্লাতে চির স্মরণীয় করে রাখতে সৃষ্টিকর্তা আমাদের জন্য কোরবানির ঈদের বিধান জারি করলেন। ইরশাদ হচ্ছে-‘আমি তাকে মুক্ত করলাম এক মহান কোরবানির বিনিময়ে। আমি ইহা পরবর্তীদের স্মরণে রেখেছি। ইব্রাহীমের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। এভাবে আমি সৎকর্ম পরায়ণদিগকে পুরুস্কৃত করে থাকি। সৃষ্টিকর্তা ইব্রাহীম (আ:)-এর প্রাণপ্রিয় পুত্র ইসমাঈল (আ:)-কে আল্লাহর রাস্তায় কোরবানিকে এতো বেশি পছন্দ করলেন যার দরুন প্রত্যেক সামর্থবান মুসলমানদের এই বিধান পালন ওয়াজিব।  
১০ই জিলহজ্ব খাঁটি মুসলমানের প্রতি সৃষ্টিকর্তার আনুগত্য প্রকাশের মাধ্যমে যাতে ঈদুল আযহার খুশি প্রকাশ ও উপভোগ করতে পারে সেজন্য ১০ই জিলহজ্বে ঐতিহাসিক কোরবানি করার মাধ্যমে আনন্দ লাভের সুযোগ করা হয়েছে মুসলিম মিল্লাতের জন্য। ঈদের দিন পশু কোরবানির মাধ্যমে আমরা যেন মনের পশুটাকে কোরবানি করতে পারি। তাহলে সৃষ্টিকর্তার নৈকট্য লাভের পথ উন্মুক্ত থাকবে। ঈদের দিন বা ঈদের পরের দুই দিন ও পশু কোরবানি করা যায়। ঈদুল-আযহার নামায শেষে কোরবানি করতে হয়। কোরবানির গোশত তিন ভাগে ভাগ করে একভাগ নিজের জন্য, একভাগ আতœীয় স্বজনদের জন্য এবং ্একভাগ অসহায়দের কে ভাগ করে দেয়া উত্তম। রাসুল (সা:) ইরশাদ করেন- যে ব্যক্তির কোরবানি করার ক্ষমতা রাখে, অথচ কোরবানি করলোনা সে যেন ঈদগাহে না আসে। যাদের কাছে নিসাব পরিমান সম্পদ থাকবে তার ওপর কোরবানি ওয়াজিব। আয়েশা সিদ্দিকা (রা:) থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, রাসুল (সা:) ইরশাদ করেছেন- কোরবানির দিনে কোরবানি ছাড়া অন্য কোন আমল আল্লাহর দরবারে অধিক পছন্দনীয় নয়।
কিয়ামত দিবসে কোরবানির পশুর শিং, লোম ও পায়ের খুর সব কিছু নিয়েই সৃষ্টিকর্তার দরবারে হাজির হবে। কোরবানিকৃত পশুর রক্ত মাটিতে গড়িয়ে পড়ার আগেই আল্লাহর কাছে তা বিশেষ মর্যাদায় পৌঁছে যায়। তাই খালিস নিয়তে তোমরা স্বাচ্ছন্দে কোরবানি করবে। সূরা হজ্বে ইরশাদ হচ্ছে- কোরবানিকৃত পশুর গোশত এবং রক্ত কিছুই আল্লাহর কাছে পৌঁছায় না বরং পৌঁছায় কেবল তোমাদের তাকওয়া। সূরা কাওসারে ইরশাদ হচ্ছে- অতএব তোমার মালিককে স্মরণ করার জন্য তুমি নামায পড় এবং (তাঁরই উদ্দেশ্যে) তুমি কোরবানি করো। কোরবানির ঘটনা হৃদয় বিদারক। ইসমাঈল (আ:) যখন ছোট তখন আল্লাহ ইব্রাহীম (আ:) কে নির্দেশ প্রধান করলেন, হে ইব্রাহীম আমি তোমার প্রতিপালকের ভালবাসায় তোমার প্রাণপ্রিয় পুত্র ইসমাঈলকে আমার রাহে কোরবান কর! ইব্রাহীম (আ:) সৃষ্টিকর্তার নির্দেশে ছেলে ইসমাঈল (আ:) কে জিজ্ঞাসা করলেন হে প্রিয় বৎস! আল্লাহ আমাকে স্বপ্নযোগে নির্দেশ দিলেন সৃষ্টিকর্তাকে সন্তুষ্টির লক্ষে তোমাকে তাঁর রাহে উৎস্বর্গ করতে হবে তথা কোরবানি দিতে হবে। এবার তুমি তোমার মতামত জানাও। জবাবে ইসমাঈল (আ:) উত্তর দিলেন, আমি কোরবান হলে আমার পালনকর্তা যদি রাজিখুশি হয়ে যান তাহলে নিঃসন্দেহে আমি সৃষ্টিকর্তার পথে কোরবানি হতে রাজি আছি। তখন ইব্রাহীম (আ:) স্বীয় পুত্রকে কোরবানি করতে শুয়ালেন- তখন আল্লাহর পক্ষ থেকে ঘোষণা এলো হে ইব্রাহীম তোমার ছেলের রক্ত, গোশত চাইনা, আমি যা ছেয়েছিলাম তা তোমার তাকওয়ার মাধ্যমে পেয়েগেছি তাই এখন অনুষ্ঠান পালনের মাধ্যমে তুমি কোরবানি করো। রাব্বুল আলামীন জিব্রাঈল (আ:)-এর মাধ্যমে দুম্বা পাঠালেন এবং ইব্রাহীম (আ:) প্রেরিত সেই দুম্বা আনুষ্ঠানিক ভাবে কোরবানি করলেন। কাজেই কোরবানি জাঁকজমক আনুষ্ঠান নয় বরং সৃষ্টিকর্তার নির্দেশ পালনের মধ্যদিয়ে ইহকালিন শান্তি আর পরকালিন মুক্তির সুপান মাত্র। যাদের উপর কোরবানি ওয়াজিব কেবল মাত্র তারাই এই শরীয় বিধান পালনীয়। কোরবানি হলো সৃষ্টিকর্তার নির্দেশ পালন করা এবং খালিস নিয়তে দুনিয়ার কোনো মানুষকে দেখানোর উদ্দেশ্য ছাড়া পশুর কোরবানির মধ্যদিয়ে নিজ মনের পাপিষ্ঠ পশুকে ত্যাগ করার নাম কোরবানি ।

 দু:খজনক হলেও সত্য সমাজে অনেকে ভিন্ন ধরনের মানসিকতায় কোরবানি করেন যা সহজে দৃশ্যমান হয়। কেউ কেউ লোক লজ্জায় নিজে কোরবানি না দিলে ছেলে-মেয়েরা গোশত খেতে পাবে কোথায়, আশপাশের অনেকেই কোরবানি দিচ্ছে আমি না দেই কিভাবে- এ ধরনের মানসিকতায়ও কোরবানি করেন। এ ধরনের কোরবানি সৃষ্টিকর্তার দরবারে নাও পৌঁছাতে পারে। তাছাড়া অনেক ধনি ব্যক্তিরা কত দামের কোরবানি করবেন সে প্রতিযোগিতায় সামিল হতে দেখা যায়। তাদের কাছে কোরবানি লৌকিক প্রথা হয়ে গেছে। লক্ষাধিক টাকার গরু বা উট কিনে বাসার ফটকের সামনে বেঁধে রেখে নিজ এলাকায় বড়ত্ব প্রর্দশ করার জন্য কোরবানির উদ্দেশ্য বলে অবস্থাদৃষ্ট মনে হয়। এ ধরনের কোরবানি দ্বারা সৃষ্টিকর্তার নির্দেশ পালন ও আতœত্যাগ হয়না। ঈদুল আযহার দিনে পশু কোরবানির মাধ্যমে প্রকৃত আতœত্যাগের মহিমায় উজ্জল হোক আমাদের জীবন তা না হলে সাম্যর্থমান মুসলমানদের কোরবানি কোনো সার্থকতা বয়ে আনবে না। কোরবানির প্রকৃত তাৎপর্য হলো সৃষ্টিকর্তার নির্দেশ আনুগত্য করা এবং তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন। কোরবানি শুধু একটি ইবাদতই নয় বরং কোরবানির মধ্যে রয়েছে ত্যাগ, উৎসর্গ ও আনুগত্যের এক জলন্ত মহান দৃষ্টান্ত। রাব্বে কারিম আমাদের সত্যিকারের কোরবানি করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

লেখক: প্রাবন্ধিক ও ম্যানেজার (মুদ্রণ বিভাগ) 

শেয়ার করুন

-সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন

Post a Comment

0Comments

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

Post a Comment (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top