৪০ বছর ধরে পত্রিকার খবর বিক্রি করেন ইউসুফ

Seba Hot News
0
৪০ বছর ধরে পত্রিকার খবর বিক্রি করেন ইউসুফ

ছবি: প্রতিদিনের মতো সাইকেল নিয়ে খবর বিক্রি করতে ছুটে চলছেন।




শিব্বির আহমদ রানা, বাঁশখালী প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলায় গত ৪০ বছর ধরে পত্রিকার খবর বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন মুহাম্মদ ইউসুফ (৬০)। পত্রিকার পাঠক মহল এক নামে চেনেন তাকে। যাকে পত্রিকার হকার বলে চেনেন এমনকি তাকে অনেক সময় ডাকা হয়, ‘এই পেপার’, ‘ওই পত্রিকা’ ইত্যাদি নামে। তিনি একেবারে তরতাজা তরুণ থাকতে পত্রিকা বিলির কাজ শুরু করেন ১৯৮১ সাল থেকে। জীবনের পড়ন্ত বেলায় এসে দেখেন, পত্রিকা বিলি করার এই কাজে ৪০ বছর পার হয়ে গেছে তার। উপজেলা পরিষদের সামনে তিনি পত্রিকা নিয়ে বসতেন। পরে সাইকেলে করে ফেরি করেন পত্রিকা। বাঁশখালীর বিভিন্ন পয়েন্টে পত্রিকার খবর নিয়ে ছুটে চলেন তিনি। ঘুম থেকে সকাল ৬টায় উঠেই তিনি পত্রিকার এজেন্ট ও স্থানীয় পত্রিকার সার্কুলেশন ম্যানেজারদের কাছে যান। এরপর তাদের কাছ থেকে পত্রিকা নেন। পত্রিকা নিয়ে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সাইকেলের প্যাডেল মেরে শুরু হয় তার ছুটে চলা। অলিতেগলিতে পত্রিকা বিক্রি শুরু করেন। এভাবে শুরু হয় তার জীবন সংগ্রাম।

বাঁশখালী উপজেলার বৈলছড়ি ইউনিয়নের চেচুরিয়া গ্রামেই তার জন্ম।

তিনি বলেন, “খবরের কাগজ বিক্রি করে প্রতিদিন দুই থেকে তিনশ’ টাকা আয় করি। ১৯৮১ সাল থেকে পত্রিকা বিক্রির সাথে সংযুক্ত হই। বয়স বাড়ছে। শরীরটা দ‚র্বল হয়ে পড়েছে। সংসারে দুই ছেলে রয়েছে। স্ত্রী ২ বছর আগে শ্বাসকষ্টে মারা গেছেন। প্রতিদিন বাইসাইকেল চালিয়ে ভোরে পত্রিকা সংগ্রহ করি। রোদ-বৃষ্টি-ঝড় বা কনকনে শীত, করোনার মহামারিসহ যা-ই থাকুক না কেন, সব সামলে পত্রিকা ঠিকই পাঠকের দ্বারে পৌঁছে দিই। মানুষের অধিকার আদায়ের খবর বিলি করলেও তিনি নিজের ন্য‚নতম মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। অথচ তিনি পত্রিকার সম্পাদক ও পাঠক উভয়ের মাঝে সেতুবন্ধন তৈরিতে ভ‚মিকা রাখেন।”

পত্রিকা হকার মু. ইউসুফ আরো বলেন, আগের মতো আর পত্রিকা এখন চলে না, এখন ইন্টারনেটে সব খবর পাওয়া যায়। মুহূর্তের খবর মুহ‚র্তে পাওয়া যাচ্ছে। চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত আঞ্চলিক পত্রিকাসহ ঢাকা থেকে প্রকাশিত দৈনিক পত্রিকা প্রতিদিন ৫শ’-৭শ’ কপি বিক্রি করতাম। এখন ২শ থেকে ৩শ কপি তাও বিক্রি করতে কষ্ট হয়। পত্রিকা বিক্রি কমে যাওয়ায় আমাদের হকারদের পরিবার নিয়ে চলতে হিমশিম খেতে হয়। জীবনের শুরুতে পায়ে হেঁটে পত্রিকা বিলি করেছি। পরবর্তী সময়ে সাইকেল ব্যবহার করি। বাঁশখালীর দক্ষিণাংশে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি অফিস, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, স্কুল-কলেজ, দোকানপাটসহ বিভিন্নস্থানে পত্রিকা বিলি ও বিক্রি করে কেটে যায় দিনের ছয়-সাত ঘণ্টা সময়। পত্রিকা বিক্রি করে মাস শেষে যা আয় করি, তা পরিবারে ব্যয় করি।

তিনি আরো বলেন, ‘‘গ্রামে পত্রিকা এখন খুব কম বিক্রি হয়। ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকলেই খবর পড়ে থাকে। আগের চেয়ে এখন পত্রিকা কম চলে। তবুও পত্রিকা বিক্রি করছি অল্প স্বল্প নিজেদের খরচ বাড়লেও পত্রিকার দামও আমাদের পাওনা তো বাড়ে না। বছরে দুটো ঈদ এলে পত্রিকার হকাররা পান না কোনো অতিরিক্ত ম‚ল্য। এখন পত্রিকা বিক্রি কেমন হয় জানতে চাইলে তিনি জানান, ‘পত্রিকা মালিকেরা পত্রিকা প্রিন্ট দিয়েই খালাস কিন্তু দিনদিন পাঠক বৃদ্ধি করা কিংবা পাঠক ফোরাম করার কোনো চিন্তা তাদের মাথায় নেই। এতে বিক্রির পরিমাণ দিনে দিনে কমছে।’’

ইউসুফ আরো বলেন, “যারা সংবাদ তৈরি করেন তারাও আমাদের নিয়ে কোন দিন ভাবেনি। তারা সমাজের অসহায় মানুষের কথা তুলে ধরেন পত্রিকায়। সবার পাশে দাঁড়ান। আমরা যারা পত্রিকা বিক্রি করে মানুষের ধারে ধারে ছুটে চলি, কষ্টে দিনাতিপাত করি তার খোঁজখবর রাখেনা কেউ। বাঁশখালীতে যে কয়জন পত্রিকার হকার আছি আমরা খুব কষ্টে আছি। জীবনের শুরু থেকে এ পেশায় জড়িয়ে পড়ায় ভিন্ন কিছু করতে পারিনি। আমরা অবহেলিত। আমাদের পরিবার, সংসার, যাপিত জীবনের কষ্ট নিয়ে কেউ ভাবেনি।”

 


শেয়ার করুন

-সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন
ট্যাগস

Post a Comment

0Comments

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

Post a Comment (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top