বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা-বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠতম অর্জন: প্রধানমন্ত্রী

S M Ashraful Azom
0
বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা-বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠতম অর্জন প্রধানমন্ত্রী



সেবা ডেস্ক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, একাত্তরে’র ১৬ ডিসেম্ব’র মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ে’র মাধ্যমে জাতিরাষ্ট্রবাংলাদেশপ্রতিষ্ঠা হলো বাঙালি জাতি’র শ্রেষ্ঠতম অর্জন। এই অর্জনকে অর্থবহ ক’রতে স্বাধীনতা’র মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এবং মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে সবাইকে জানতে জানাতে হবে। 

তিনি বলেন, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে মহান মুক্তিযুদ্ধে’র চেতনা আমরা পৌঁছে দেবো-বিজয়ে’র সুবর্ণজয়ন্তী’র মাহেন্দ্রক্ষণে এই হোক আমাদে’র অঙ্গীকা’র।

প্রধানমন্ত্রী মহান বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে আজ দেওয়া এক বাণীতে একথা বলেন। বিজয়ে’র সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে তিনি দেশবাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা অভিনন্দন জানান।

প্রধানমন্ত্রী গভী’র শ্রদ্ধা’র সঙ্গে স্ম’রণ করেন জাতি’র পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবু’র ‘রহমানকে। স্ম’রণ করেন জাতীয় চা’র নেতা, ৩০ লাখ শহীদ, সম্ভ্রমহারা লাখ মা-বোন এবং জাতি’র শ্রেষ্ঠ সন্তান বী’র মুক্তিযোদ্ধাদে’র, যাঁদে’র মহান আত্মত্যাগে’র বিনিময়ে আমরা পেয়েছি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ।  তিনি কৃতজ্ঞতা জানান সেই সব দেশ ব্যক্তিবর্গে’র প্রতি যাঁরা আমাদে’র মুক্তিযুদ্ধে নানাভাবে সহায়তা দিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৬ ডিসেম্ব’র, মহান বিজয় দিবস। বাংলাদেশে’র বিজয়ে’র ৫০ বছ’র পূর্তি। বাঙালি জাতি’র এক অনন্য গৌ’রবোজ্জ্বল দিন। জাতি’র পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবু’র ‘রহমানে’র আহ্বানে সাড়া দিয়ে দীর্ঘ ২৩ বছরে’র রাজনৈতিক সংগ্রাম মাসে’র ‘রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে’র মাধ্যমে ১৯৭১ সালে’র এই দিনে চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করে বাঙালি।

জাতি’র পিতা’র জন্মশতবার্ষিকীমুজিববর্ষএবং স্বাধীনতা’র সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বিভিন্ন বর্ণাঢ্য কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাস মহামারি পরিস্থিতিতে জনসমাগম এড়িয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে এসব অনুষ্ঠানমালা উদ্যাপন করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বাংলাদেশকেস্বল্পোন্নতদেশে উন্নীত করেন, আ’র আমরা মাতৃভূমিকেউন্নয়নশীলদেশে’র কাতারে নিয়ে গেলামমুজিববর্ষএবং স্বাধীনতা’র সুবর্ণজয়ন্তী’র শুভক্ষণে। স্বাধীনতা’র প’র বিগত ৫০ বছরে আমাদে’র যা কিছু অর্জন তা জাতি’র পিতা এবং আওয়ামী লীগে’র হাত ধরেই হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন, আমাদে’র এই উন্নয়নে’র গতিধারা অব্যাহত থাকলে বিশ্ব দ’রবারে বাংলাদেশ ২০৪১ সালে’র মধ্যেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবে’র ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত-সমৃদ্ধ স্বপ্নে’র সোনা’র বাংলাদেশে পরিণত হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবে’র বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাঙালি জাতি ১৯৪৮-’৫২-এ’র ভাষা আন্দোলন, ’৬২’র শিক্ষা আন্দোলন, ’৬৬’র ছয়-দফা, ’৬৯’র এগা’র-দফা গণঅভুত্থ্যানে’র মাধ্যমে স্বাধীনতা’র জন্য প্রস্তুত হয়ে উঠে।৭০-এ’র সাধা’রণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমগ্র পাকিস্তানে নি’রঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। কিন্তু পাকিস্তানিরা বাঙালি জাতিকে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে দেয়নি। জাতি’র পিতা অনুধাবন করেছিলেন, স্বাধীনতা অর্জন ছাড়া বাঙালি জাতি’র ওপ’র অত্যাচা’র, নির্যাতন বঞ্চনা’র অবসান হবে না। তাই তিনি ১৯৭১ সালে’র মার্চ ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে’র জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে দৃপ্তকণ্ঠে ঘোষণা করেন, ‘এবারে’র সংগ্রাম আমাদে’র মুক্তি’র সংগ্রাম, এবারে’র সংগ্রাম স্বাধীনতা’র সংগ্রাম

শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবে’র ডাকে শুরু হয় অসহযোগ আন্দোলন। চলতে থাকে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে’র প্রস্তুতি। পাকিস্তানি হানাদা’রবাহিনী৭১-এ’র ২৫ মার্চ কালরাতে নিরীহ নি’রস্ত্র বাঙালি’র ওপ’র হত্যাযজ্ঞ শুরু করে। ২৬ মার্চে’র প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশে’র স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। শুরু হয় সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ। ১৭ এপ্রিল মুজিবনগরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে রাষ্ট্রপতি, সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপ-রাষ্ট্রপতি এবং তাজউদ্দিন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী করে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশে’র প্রথম স’রকা’র শপথ গ্রহণ করে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করে। বী’র মুক্তিযোদ্ধারা মাসে’র ‘রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে’র মাধ্যমে পাকিস্তানি হানাদা’র এবং তাদে’র দোস’র রাজাকা’র-আলবদ’র-আলশামস বাহিনীকে পরাজিত করে ১৬ ডিসেম্ব’র চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করেন। আমরা পাই লাল-সবুজে’র পতাকা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতি’র পিতা মাত্র সাড়ে বছরে যুদ্ধ-বিধ্বস্ত দেশকে পুনর্গঠন করেন। ধ্বংস প্রাপ্ত রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট, রেললাইন, পোর্ট সচল করে অর্থনীতিতে গতি সঞ্চা’র করেন। মাত্র ১০ মাসে তাঁ’র নির্দেশনায় মুক্তিযুদ্ধে’র চেতনা’র ভিত্তিতে আমাদে’র সংবিধান প্রণীত হয়। ১৯৭৫ সালে জিডিপি প্রবৃদ্ধি’র হা’র শতাংশ অতিক্রম করে। যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে বঙ্গবন্ধুস্বল্পোন্নতদেশে’র কাতারে নিয়ে যান।

স’রকা’র প্রধান বলেন, সকল প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব যখন একটি শোষণ-বঞ্চনামুক্ত অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিকসোনা’র বাংলাগড়া’র লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলেন, ঠিক তখনই স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি ১৯৭৫ সালে’র ১৫ আগস্টে’র কালরাতে তাঁকে পরিবারে’র বেশি’রভাগ সদস্যসহ নির্মমভাবে হত্যা করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে হত্যা’র প’র থেমে যায় বাংলাদেশে’র উন্নয়ন-অগ্রযাত্রা। শুরু হয় হত্যা, ক্যু আ’র ষড়যন্ত্রে’র রাজনীতি। ঘাতক এবং তাদে’র দোস’ররা ইতিহাসে’র এই জঘন্যতম হত্যাকান্ডে’র বিচারে’র পথ রুদ্ধ ক’রতে জারি করেইনডেমনিটি অধ্যাদেশ

তিনি বলেন, দীর্ঘ ২১ বছ’র প’র বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে জনগণে’র ভোটে জয়ী হয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা’র দায়িত্ব পায়। আমরা দায়িত্ব নিয়েই বাংলাদেশকে একটি মর্যাদাশীল দেশ হিসেবে বিশ্বে’র বুকে প্রতিষ্ঠিত করা’র উদ্যোগ গ্রহণ করি। সামাজিক সু’রক্ষা কর্মসূচি প্রবর্তনে’র মাধ্যমে গরিব, প্রান্তিক মানুষদে’র স’রকারি ভাতা’র আওতায় আনা হয়। কৃষি উৎপাদনে’র ওপ’র বিশেষ জো’র দিয়ে দেশকে খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ করি। পানি’র হিস্যা আদায়ে ১৯৯৬ সালে ভা’রতে’র সঙ্গে গঙ্গা পানিবণ্টন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি প্রতিষ্ঠা’র লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালে ঐতিহাসিক শান্তিচুক্তি সম্পাদন করি। ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করে আমরা বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে’র বিচা’র কার্যক্রম শুরু করি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ ২০০৯ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে স’রকা’র গঠন করে গত ১৩ বছ’র ধরে মানুষে’র ভাগ্যোন্নয়নে নি’রলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আমরা আজ জাতি’র পিতা’র অসমাপ্ত কাজগুলো বাস্তবায়ন ক’রছি। খাদ্য উৎপাদনে বাংলাদেশ আজ স্বয়ংসম্পূর্ণ। আমরা এখন পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত ক’রতে কাজ ক’রছি। মিয়ানমা’র ভা’রতে’র সঙ্গে সমুদ্রসীমা বিরোধে’র শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তি’র মাধ্যমে বঙ্গোপসাগরে বিশাল এলাকা’র ওপ’র আমাদে’র সার্বভৌম অধিকা’র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশ-ভা’রত স্থল সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নে’র মাধ্যমে ছিটমহলবাসী’র দীর্ঘদিনে’র মানবেত’র জীবনে’র অবসান হয়েছে। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে’র বিচারে’র রায় কার্যকরে’র মধ্য দিয়ে জাতি গ্লানিমুক্ত হয়েছে। জাতীয় চা’র নেতা হত্যাকাণ্ডে’র বিচা’র কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদে’র বিচা’র অব্যাহত ‘রয়েছে এবং বিচারে’র রায় কার্যক’র করা হচ্ছে।

বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, আমরা ২০২১-২০৪১ মেয়াদি দ্বিতীয় প্রেক্ষিত পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছি এবং ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন ক’রছি। আমরাই বিশ্বে প্রথম শত বছরে’র-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০বাস্তবায়ন শুরু করেছি। বাংলাদেশে’র উন্নয়ন অভিযাত্রায়ডিজিটাল বাংলাদেশএ’র সুবিধা আজ শহ’র থেকে প্রান্তিক গ্রাম পর্যায়ে বিস্তৃত হয়েছে। প্রতিটি গ্রামে শহরে’র নাগরিক সুযোগ-সুবিধা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। দেশে’র সকল গৃহহীন-ভূমিহীনে’র জন্য ঘ’র তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশে’র একটি মানুষও আ’র গৃহহীন থাকবে না।

তিনি বলেন, করোনাভাইরাস মহামারিতে অর্থনীতি’র চাকাকে সচল রাখতে আমরা লাখ ৩১ হাজা’র ৬৪১ কোটি টাকা’র ২৮টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছি। ৯৯.৭৫ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা’র আওতায় এসেছে। মাথাপিছু আয় ২০০৫-০৬ সালে’র ৫৪৩ মার্কিন ডলা’র হতে বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে ২৫৫৪ মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। আমরা দেশে’র প্রতিটি খাতে অভাবনীয় অগ্রগতি অর্জন করেছি। কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, তথ্যপ্রযুক্তি, শিল্প ব্যবসা-বাণিজ্যসহ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে’র প্রতিটি ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে’র বুকেরোল মডেল বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে মর্যাদাশীলউন্নয়নশীলদেশে উন্নীত হওয়া’র বিষয়ে জাতিসংঘে’র চূড়ান্ত অনুমোদন লাভ করেছে। 


শেয়ার করুন

-সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন

Post a Comment

0Comments

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

Post a Comment (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top