তিন বছর পূর্তি উপলক্ষে জাতির উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনার ভাষণ

S M Ashraful Azom
0
তিন বছর পূর্তি উপলক্ষে জাতির উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনার ভাষণ



সেবা ডেস্ক: আওয়ামী লীগ সরকারের বর্তমান মেয়াদের ৩ বছর পূর্তি উপলক্ষে আজ শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টায় জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা। 

বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার ও বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলো ও রেডিও স্টেশনগুলোতে ভাষণটি সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।

উক্ত ভাষনে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের নতুন ধরণ সম্পর্কে দেশবাসীকে সতর্ক করে চলমান সংকট মোকাবিলায় কার্যকরভাবে ভ্যাকসিন গ্রহণের পাশাপাশি স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে বিজয়ী হওয়ার পর ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি শেখ হাসিনা চতুর্থ বারেরমতো (টানা তিনবার) প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাসের মহামারির কারণে এক গভীর সংকটের মধ্য দিয়ে আমাদের বিগত ২০২০ ও ২০২১ সাল অতিক্রম করতে হয়েছে। সেই সংকট এখনো কাটেনি। এর মধ্যেই আবার বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নতুন করে করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। আমাদের এখনই সাবধান হতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। যারা টিকা নেননি তাদের দ্রুত টিকা নেয়ার জন্য আমি অনুরোধ জানাচ্ছি।

এখন পূর্ণোদ্যমে কভিড-১৯ টিকাদানের কাজ চলছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, চলতি মাস থেকে গণটিকা প্রদানের মাধ্যমে প্রতিমাসে ১ কোটি মানুষকে টিকার আওতায় আনার কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন পর্যন্ত ১২ কোটি ৯৫ লাখ ৮০ হাজার ডোজ টিকা প্রদান করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম ডোজ পেয়েছেন প্রায় ৭ কোটি ৫৮ লাখ মানুষ আর দুই ডোজ পেয়েছেন ৫ কোটি ৩৫ লাখ ৮২ হাজার। গতমাস থেকে বুস্টার ডোজ দেওয়া শুরু হয়েছে। বর্তমানে আমাদের হাতে সাড়ে ৯ কোটিরও বেশি ডোজ টিকা মজুদ রয়েছে।

করোনাভাইরাস মহামারি বিশ্ব অর্থনীতিতে এক গভীর ক্ষতের সৃষ্টি করেছে উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, অনেক দেশের অর্থনীতিতে ধস নেমেছে। আমাদের অর্থনীতিও ক্ষতির মুখে পড়েছে। নেমে এসেছিল স্থবিরতা। তবে আপনাদের (দেশবাসীর) সহায়তায় আমরা তা অনেকটা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছি।

তিনি বলেন, বিভিন্ন নীতি-সহায়তা এবং বিভিন্ন উদার-নৈতিক আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজ প্রদানের মাধ্যমে আমরা অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছি। এখন পর্যন্ত আমরা ২৮টি প্যাকেজের মাধ্যমে ১ লাখ ৮৭ হাজার ৬৭৯ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছি। এর মধ্যে অক্টোবর পর্যন্ত ১ লাখ ৬ হাজার ৫২২ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে, যা মোট বরাদ্দের ৫৬ দশমিক ৭৬ শতাংশ। এতে প্রায় ৬ কোটি ৭৪ লাখ মানুষ উপকৃত হয়েছেন এবং প্রতিষ্ঠান উপকৃত হয়েছে প্রায় ১ লাখ ১৮ হাজার।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনার অভিঘাত মোকাবিলা করে গত অর্থবছরে আমাদের জিডিপি ৫ দশমিক ৪৩ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রক্ষেপণ অনুযায়ী জিডিপি’র প্রবৃদ্ধির হারে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল এশিয়ার মধ্যে সর্বোচ্চ। ২০২১-এ মাথাপিছু আয় দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৫৫৪ মার্কিন ডলারে।

দ্য ইকোনমিস্ট-এর ২০২০ সালের একটি প্রতিবেদনের উল্লেখ করে তিনি বলেন, ৬৬টি উদীয়মান সবল অর্থনীতির দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ৯ম। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের পূর্বাভাস অনুযায়ী ২০৩০ সাল নাগাদ বাংলাদেশ হবে বিশ্বের ২৪তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। 

বিগত ১৩ বছরে বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, দারিদ্র্য দূরীকরণ, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়ন, মাতৃমৃত্যু-শিশুমৃত্যুর হার হ্রাস, গড় আয়ু বৃদ্ধি, নারীর ক্ষমতায়ন, শিক্ষার হার বৃদ্ধিসহ নানা আর্থ-সামাজিক সূচকে বাংলাদেশ আজ দক্ষিণ এশিয়ায় নেতৃত্ব দিচ্ছে।

তিনি বলেন, এটা সম্ভব হয়েছে আমাদের ওপর জনগণ আস্থা রাখার ফলে। পরপর ৩ বার রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ দিয়ে আপনারা উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সহায়তা করেছেন। এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখে আমরা একটি কল্যাণকামী, উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি, যেন ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত দেশগুলোর কাতারে সামিল হতে পারে। এ জন্য অতীতে যেমন আপনারা আমাদের সঙ্গে ছিলেন, ভবিষ্যতে আমাদের সঙ্গে থাকবেন, এ আশাবাদ ব্যক্ত করছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের বর্তমান ও আগামী দিনের সব কার্যক্রমের লক্ষ্য হচ্ছে নতুন প্রজন্মের জন্য একটি সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎ বিনির্মাণ। অফুরন্ত জীবনীশক্তিতে বলীয়ান তরুণ প্রজন্মই পারে সব প্রতিবন্ধকতা দূর করে একটি প্রগতিশীল অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে। যে বাংলাদেশের স্বপ্ন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেখেছিলেন, তারুণ্যের শক্তিই পারবে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন করতে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস আমাদের প্রজন্মের পর প্রজন্ম এগিয়ে যাবে মাথা উঁচু করে ভবিষ্যতের পানে।

বাংলাদেশ ও মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীরা ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়ক বেয়ে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। এটা অনেকেরই সহ্য হবে না বা হচ্ছে না। দেশ-বিদেশে বসে বাংলাদেশের বিরোধী শক্তি, স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি তাই নানা ষড়যন্ত্র করছে, উন্নয়নের এই অগ্রযাত্রাকে রুখে দেওয়ার জন্য।

তিনি বলেন, মিথ্যা-বানোয়াট-কাল্পনিক তথ্য দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। বিদেশে আমাদের উন্নয়ন সহযোগীদের ভুল বোঝানোর চেষ্টা করছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কেউ যেন মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে, সেদিকে আমাদের সবাইকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। আমাদের উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে কোনোভাবেই ব্যাহত হতে দেওয়া যাবে না। জনগণই ক্ষমতার উৎস। আমরা জনগণের ক্ষমতায় বিশ্বাস করি। তাই জনগণের সঙ্গেই আমাদের অবস্থান।

দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর অবস্থান অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, কোনো দুর্নীতিবাজকে ছাড় দেওয়া হবে না। আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছি। দুর্নীতিবাজ যে দলেরই হোক আর যত শক্তিশালীই হোক, তাদের ছাড় দেওয়া হচ্ছে না এবং হবে না। এ ব্যাপারে দুর্নীতি দমন কমিশন স্বাধীনভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করছে। তবে এই ব্যাধি দূর করতে সামাজিক সচেতনতা তৈরি করা প্রয়োজন। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা কঠোর হস্তে জঙ্গিবাদের উত্থানকে প্রতিহত করেছি। বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। এখানে সব ধর্ম-বর্ণের মানুষ পারস্পরিক সহনশীলতা বজায় রেখে বসবাস করে আসছেন এবং ভবিষ্যতেও করবেন। 


শেয়ার করুন

-সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন

Post a Comment

0Comments

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

Post a Comment (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top