নন্দীগ্রামে জমিতেই নষ্ট কৃষকের স্বপ্ন, দুর্গন্ধ ধানে চারা গজাচ্ছে

S M Ashraful Azom
0
নন্দীগ্রামে জমিতেই নষ্ট কৃষকের স্বপ্ন, দুর্গন্ধ ধানে চারা গজাচ্ছে



 : বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলায় এবার বোরো ধান চাষে ব্যাপক লোকশান গুনছেন কৃষকেরা। জমিতেই নষ্ট হয়েছে তাদের স্বপ্ন। অনেকে জমি পরিত্যক্ত রেখেছেন। শতশত বিঘা জমিতে পানিতে ডুবে থাকা পাকা ধানে চারা গোজাচ্ছে। চাষাবাদে খরচের টাকাও উঠছে না। ১০ মণ ধানের টাকায় মিলছে এক বিঘা জমিতে ধান কাটার শ্রমিক। 

ঝড় ও বৃষ্টিতে জমিতে পানি জমে থাকায় পাকা ধান ডুবে পচে নষ্ট হয়েছে। অনেক কষ্টে জমির ধান কেটে বাড়ি নিয়ে আসলেও বৃষ্টির কারণে শুকাতে না পারায় ধানে দুর্গন্ধ হওয়ায় বিক্রি করতে পারছেন না কৃষকেরা। পানিতে ডুবে যাওয়া ধান নষ্ট হওয়ায় ফলন হয়েছে প্রতি বিঘায় ১০ মণ থেকে ১৮ মণ। চলতি বোরো মৌসুমে একটি পৌরসভাসহ উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নে ১৯ হাজার ৫৪৬ হেক্টর জমিতে চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। কাটা-মাড়াই প্রায় শেষ পর্যায়ে। তবে ধান নষ্ট হওয়ায় অনেক কৃষক তাদের জমি পরিত্যক্ত রেখেছেন। কাটা-মাড়াই না করে পরিশ্রমের ফসল জমিতেই ফেলে রেখেছেন। 

বুধবার সরেজমিনে উপজেলার পেংহাজারকি, তুলাশন, বীরপলী, রিধইল, দোহার, কাথম, ভাটগ্রাম, আমগাছি, ভাটরা, নিনগ্রাম, খরনা, তেঘর, দলগাছা ও পৌর এলাকার নামুইট মাঠে গিয়ে দেখা গেছে, ঝড় ও বৃষ্টির কারণে অনেক জমির পাকা ধান পানিতে ডুবে নষ্ট হচ্ছে। পাকা ধানে চারা গোজাতে শুরু করেছে। এ কারণে কৃষকেরা অনেক জমি পরিত্যক্ত রেখেছেন। যারা ধান কাটা-মাড়াই করেছেন, পানিতে ডুবে যাওয়া ধানে দুর্গন্ধ হওয়ায় বিক্রি করতে পারছেন না। 

কাথম বেড়াগাড়ি গ্রামের কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, একবিঘা জমির পত্ত¡নি ৭ হাজার টাকা। হালচাষ ৯০০টাকা, সার ১ হাজার ৮০০ টাকা, পানি সেচ ১৪৫০ টাকাসহ ৬ হাজার ১৫০ টাকা চাষাবাদে খরচ হয়েছে। তিনি দুই বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষ করেছেন। একবিঘা জমির ধান কাটাতে শ্রমিককে ৭ হাজার টাকা দিতে হয়েছে। একবিঘা জমিতে এ চাষে মোট ২০ হাজার ১৫০টাকা ব্যয় করে ধান হয়েছে ১৮ মণ। ফরিয়ারা ৯০০ টাকা মণ দরে মিনিকেট ধান কিনেছে। এতে প্রতি বিঘা জমিতে ৪ হাজার ৯৫০ টাকা লোকশান গুনতে হয়েছে। কৃষকদের পরিশ্রম স্বপ্ন সবই জমিতে নষ্ট। 

ভাটরা গ্রামের কৃষক গোলাম হোসেন বলেন, তার নিজের চার বিঘা জমির ধান পানিতে ডুবে নষ্ট হওয়ায় জমিগুলো পরিত্যক্ত রেখেছেন। প্রতিবিঘা জমির ধান কাটতে শ্রমিকরা সাড়ে ৮হাজার টাকা চেয়েছে। ওই ধান কাটতে গেলে শ্রমিকের খরচই উঠবে না। এ কারণে মাঠেই পড়ে আছে তার স্বপ্ন। আমগাছি মাঠে কৃষক মোশারফ হোসেন, আব্দুর রাজ্জাক, জয়নাল, ভাগবজরের কৃষক আলামিন, পৌর এলাকার পশ্চিমপাড়া মাঠে কৃষক মকছেদ আলীসহ উপজেলার শতশত বিঘা জমির ধান পরিত্যক্ত রেখেছেন। নামুইট গ্রামের কৃষক রুবেল বলেন, পানিতে ডুবে থাকা ধান অনেক কষ্টে কাটা-মাড়াইয়ের পর দুর্গন্দের কারণে বিক্রি করতে পারছেন না। ধানে চারা গজিয়েছে। 

কৃষি অফিস সুত্র জানায়, এবার ১০ হাজার ৭২২ হেক্টর জমিতে মিনিকেট, ৩ হাজার ৩৭২ হেক্টর জমিতে কাটারীভোগ, ৫৩৪ হেক্টর জমিতে ব্রি-৮১ ধান, ৪০ হেক্টর জমিতে ব্রি-৮৪ ধান, ৬০ হেক্টর জমিতে ব্রি-৮৯, ৮৯২ হেক্টর জমিতে বিনা-৭ ধান, ৭৪৬ হেক্টর জমিতে অন্যান্য জাতের ধান ও ১৮০ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড জাতের ধান চাষ হয়েছে। 

এ উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ আদনান বাবু বলেন, ৬১ হেক্টর জমির ধান ক্ষতি হয়েছে। পাকা ধানগুলো দ্রæত কর্তনের জন্য কৃষি বিভাগ থেকে মাঠ পর্যায়ে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। গড়ে প্রতিবিঘা জমিতে ১৮ মণ থেকে ২০ মণ ধান হয়েছে বলে দাবি করেন এই কৃষি কর্মকর্তা। 



শেয়ার করুন

সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন

ট্যাগস

Post a Comment

0Comments

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

Post a Comment (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top