জামালপুর সংবাদদাতা : জামালপুরে হত্যা মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ৩৫ বছরের পলাতাক আসামীকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-১৪। গ্রেপ্তারকৃত আসামী এলহান ওরফে এনামুল ওরফে জুয়েল (৬৫)।
সে জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার চরপলিশা গ্রামের ওমেদ আলীর ছেলে। র্যাব-১৪ জামালপুরের কোম্পানী কমান্ডার স্কোয়াড্রন লিডার আশিকুজ্জামান প্রেরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে প্রকাশ, ১৯৮৮ সালের দিকে জুয়েলের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের হয়। ১৯৯০ সালের ৪ নভেম্বর বিজ্ঞ আদালত সাক্ষ্যপ্রমাণ শেষে সন্দেহাতিতভাবে দোষি সাব্যস্ত হওয়ায় বিজ্ঞ জেলা ও দায়রা জজ খন্দকার মোঃ আবু বকর আসামীর বিরুদ্ধে যাবজ্জীবন কারাদন্ডাদেশ প্রদান করেন। হত্যা মামলার পর থেকেই আসামী একেক সময় একেক নাম ধারণ করে দেশের বিভিন্ন স্থানে ছদ্মবেশে আত্মগোপনে থাকে। ১৫ মার্চ দিবাগত মধ্য রাতে র্যাব-১৪ ঢাকার খিলগাঁওয়ের তিলপাপাড়ায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে।
এলহান ওরফে রাজুকে গ্রেপ্তারের পর অনুসন্ধানে জানা গেছে, জামালপুর সদর থানার পাথালিয়া গ্রামের হাতেম আলীর ছেলে হাসমত আলী ওরফে হাসুকে হত্যা করে এলহানের সাথে আরো কয়েকজন। নিহত হাসু জামালপুর রেল স্টেশন এলাকার বাসায় থাকতেন। পেশায় ছিলেন ঠিকাদার এবং ব্যবসায়ী। হাসুর পিতা জামালপুর পৌরসভায় চাকরি করতেন। বর্তমানে হাসুর আরো দুই ভাই জীবন মিয়া এবং আমিনুল এখনো জামালপুর পৌরসভায় চাকরি করেন।
নিহত হাসুর আরেক ভাই ব্যবসা রাজু মিয়া কান্নাজড়িত কন্ঠে র্যাবকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন-পাথালিয়ার আয়নাল হক, রায়হান, আলাল, চালাপাড়ার মুকুল, মেলান্দহের আ: মান্নান, এলহান ওরফে এনামুল ওরফে রাজুসহ কয়েকজনে ব্যবসার কথা বলে ৩ লাখ টাকা নেয়। এই টাকা আত্মসাত করতেই হাসুকে হত্যা শেষে রাতের অন্ধকারে লাশ ঘরের মেঝেতে পূঁতে মাটির উপর প্লাস্টার করে রাখে। বাসা থেকে রাতের অন্ধকারে হাসুর নিখোঁজের বিষয়ে পুলিশ ও গোয়েন্দারা তৎপরতা চালায়। প্রশাসনের উপর মহল হাসুর নিখোঁজের রহস্য উদঘাটনে হন্যে হয়ে পড়ে।
ওদিকে খুনি আব্দুল মান্নান, আলালসহ আমার ভাই হাসুর হত্যাকারিদের সন্ধানের নামে আরেক ভাই আমিনুল ইসলামকে সাথে নিয়ে ঘোরাফেরা করে। এসময় তাকেও হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। হত্যার এক সপ্তাহের মধ্যেই ৭ মাসের কন্যা সন্তানকে ফেলে হাসুর স্ত্রীও চলে যায়। এই হৃদয় বিদারক করুন দশায় হাসুর মা’র তত্ত¡াবধানে সেই শিশু বেড়ে ওঠেছে। বর্তমানে সেই কন্যার বিয়ে হয়েছে।
ইতোমধ্যেই ঘটনার সাতদিন পর আমার আরেক ভাই আমিনুল ইসলামকে হত্যা করতে না পেয়ে হত্যাকারিদের একজন আয়নাল হক জামালপুর শহরের আব্দুল কাদেরের চায়ের দোকানে চা খাইতে বসে। এ সময় এককেজি চিড়া খেয়ে আবুল তাবুল বকতে থাকে। একপর্যায়ে নিহত হাসুর ভাই আমিনুলের নামধরে ডাকাডাকি করে ট্রেনের ছাদে ওঠার জন্য ডাকাডাকি করতে থাকে। খবরটি জনৈক খাদেম আলী নামে এক লোক মারফত গোয়েন্দার কাছে খবর চলে যায়। একই সাথে সরিষাবাড়ির ঝর্ণা নামে আরেক নারীর মাধ্যমে হাসুকে বাসায় হত্যার বিষয়ে আসামী সনাক্তেরও একটা ধারণা পেয়ে যায়। মামলায় এই নারীসহ আরো কয়েকজন রাজ স্বাক্ষি হন।
তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ আয়নাল হককে গ্রেপ্তার করলে হত্যার মুটিভ খোঁজে পায়। আয়নাল হকের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে অপর খুনি আব্দুল মান্নানসহ আরো কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃতদের স্বীকারোক্তিতেই বেরিয়ে আসে হত্যার রহস্য। আসামীদের আরো কয়েকজন এখনো পলাতক আছে বলে স্বজনরা জানিয়েছেন।
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।