চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ারের মিল্টন সমাদ্দার গ্রেপ্তার

Seba Hot News
0

সেবা ডেস্ক: ‘মানবতার ফেরিওয়ালা’র মুখোশের আড়ালে ভয়ংকর সব অপকর্ম করা ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার’র চেয়ারম্যান মিল্টন সমাদ্দারকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি পুলিশ।

চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ারের মিল্টন সমাদ্দার গ্রেপ্তার



আজ বুধবার (১ মে) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ডিবি পুলিশের একটি দল ঢাকার মিরপুর থেকে তাকে গ্রেফতার করে।
 
ডিবি পুলিশের প্রধান হারুন অর রশীদ জানান, চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ারের মিল্টনকে সুর্নিদিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি বর্তমানে আমাদের হেফাজতে আছেন। এ ব্যাপারে পরে বিস্তারিত জানানো হবে।

উল্লেখ্য, চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ারের মিল্টন সমাদ্দার বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার’ নামের বৃদ্ধাশ্রম গড়ে রাস্তা থেকে অসুস্থ কিংবা ভবঘুরেদের কুড়িয়ে সেখানে আশ্রয় দেন। সেসব নারী, পুরুষ ও শিশুকে নিয়ে ভিডিও তৈরি করে প্রায়ই তাকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করতে দেখা যায়। মানুষের অসহায়ত্ব তুলে ধরে তাদের জন্য বিত্তবানদের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেন।

তার আবেদনে সাড়া দিয়ে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ১৬টির বেশি নম্বর এবং তিনটি ব্যাংক হিসাবে প্রতি মাসে প্রায় কোটি টাকা জমা হয়। এর বাইরে অনেকেই তার প্রতিষ্ঠানে সরাসরি অনুদান দিয়ে আসেন। মানবিক কাজের জন্য এখন পর্যন্ত তিনটি রাষ্ট্রীয় পুরস্কারও পেয়েছেন চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ারের মিল্টন সমাদ্দার। 

কিন্তু মানবিকতার আড়ালে ভয়াবহ প্রতারণার জাল বিস্তার করেছেন চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ারের মিল্টন। প্রকৃতপক্ষে তিনি যে কয়জনকে লালন-পালন করছেন, প্রচার করছেন তার চেয়ে কয়েক গুণ। লাশ দাফন করার যে হিসাব দিচ্ছেন, তাতেও আছে বিরাট গরমিল। সবচেয়ে ভয়ংকর, মিল্টনের বিরুদ্ধে রয়েছে অসহায় মানুষকে আশ্রয় দেওয়ার নামে তাদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিক্রির অভিযোগ।

চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ারের মিল্টন সমাদ্দারের ব্যক্তি জীবনেও নৈতিকতা বা মানবিকতার বালাই নেই। কিশোর বয়স থেকেই ছিলেন অর্থলোভী। প্রতিবেশী, চিকিৎসক কিংবা সাংবাদিকরা বিভিন্ন সময় তার কাছে শারীরিক লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন। এমনকি নিজের জন্মদাতা বাবাকেও বেধড়ক মারধরের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

গণমাধ্যমের বিভিন্ন প্রতিবেদনে মানবসেবার অন্তরালে যে নির্মম ও বর্বরোচিত চিত্র ফুটে উঠেছে তা অত্যন্ত ভয়াবহ। মানবসেবা পরম ধর্ম কিন্তু মানব সেবার নামে মুখোশের আড়ালে রাস্তা থেকে অসুস্থ, অসহায় ও নিরীহ মানুষকে তুলে এনে চিকিৎসার নামে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিক্রির যে অভিযোগ চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ারের মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে উঠেছে তা অত্যন্ত ভীতিকর, ন্যাক্কারজনক ও মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন।

গুরুতর অসুস্থদের হাসপাতালে না নিয়ে নিজ প্রতিষ্ঠানে আটকে রাখা, ভুয়া ডাক্তার কর্তৃক মৃত্যুর সার্টিফিকেট তৈরি করা কিংবা মৃত লাশের শরীরে কাটাছেঁড়ার যে তথ্য প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। 

কোন লাশকে বেওয়ারিশ ঘোষণা করার অনুমতি কোথায় পেয়েছেচাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ারের মিল্টন সমাদ্দার?


অন্তত ৯০০ জনকে বেওয়ারিশ দাবি করে দাফন করেন চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ারের মিল্টন সমাদ্দার। এসব নিয়ে ফেসবুকে লাইভও করেন তিনি। বিভিন্ন সময় তাদের রাস্তা থেকে তুলে আনেন নিজের প্রতিষ্ঠিত পুনর্বাসন কেন্দ্র চাইল্ড এন্ড ওল্ড এইজ কেয়ারে। দাফনের আগে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কেটে রাখার অভিযোগও রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। 

কিন্তু সরকারি সংস্থার অনুমোদন ছাড়া পরিচয়হীন বা বেওয়ারিশ হিসেবে কাউকে দাফন করতে পারে না কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান। এজন্য নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম অনুসরণ করতে হয় বলছে আঞ্জুমান মফিদুল ইসলাম।

জনকল্যাণ সংস্থা আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের মুখপাত্র মোহাম্মদ আজিম বখশ জানান, ‘বেওয়ারিশটা ডিক্লেয়ার করবে তো সরকার। অন্তত স্থানীয় কাউন্সিলর অবগত থাকলে, তখন বেওয়ারিশ হিসবে দাফন করা যেতে পারে। কাউকে দাফন করার উদ্যোগ নেওয়া হলেই দাফন করা যায় না। অনুমতি না নিলে মামলাও হয়ে যেতে পারে।’

পরিচয় ছাড়া মরদেহ দাফনে ছবি বা ভিডিও রাখার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। পুলিশ বলছে, সেই সঙ্গে মরদেহের সাথে প্রাপ্ত তথ্য-প্রমাণ, ডিএনএ নমুনা-ফিঙ্গার প্রিন্ট ইত্যাদি সংরক্ষণসহ আরও কিছু আনুষ্ঠানিকতা রয়েছে। 

ডিমপির অপারেশনস্ বিভাগের যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, ‘ফিঙ্গার প্রিন্ট নিয়ে আমরা পরিচয়টা শনাক্ত করার চেষ্টা করি। যতভাবে সম্ভব আমরা পরিচয় বের করার চেষ্টা করি।’

মিল্টনের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন ভিডিওতে ভুল ও অতিরঞ্জিত তথ্য দিতে বাধ্য করতেন সহকর্মীদের। এ ছাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্রে রোগীদের বিষয়ে তথ্যেও ছিল গরমিল।

এ নিয়ে চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ারের সাবেক কর্মী সৈয়দ মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘রিপোর্টে আমি বলেছি যে, এখানে দুই শতাধিক মানুষ আছে। উনার তথ্যে একটু গ্যাপ তো ছিলই।’ 

পুনর্বাসন কেন্দ্রের নামে ডলার এনে মিল্টন নিজের ফেসবুক পেজের রিচ বাড়াতে ব্যয় করতেন। পুনর্বাসন কেন্দ্রে নিয়োগ দিয়ে নিজের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানে কাজে বাধ্য করতেন অনেক কর্মীকে।  

মিল্টন সমাদ্দারের প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগের তদন্ত শুরু করেছে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়।
 

Post a Comment

0Comments

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

Post a Comment (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top