হারুন ইসলাম: জামালপুরের বকশীগঞ্জে তীব্র লোডশেডিং এবং প্রচণ্ড গরমে জনজীবন কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। প্রতিদিনের ঘন ঘন লোডশেডিং এর ফলে স্থানীয় বাসিন্দাদের স্বাভাবিক কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। গ্রাহকরা অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছেন, কবে নাগাদ এই বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান হবে তা নিয়ে তাদের মনে গভীর দুশ্চিন্তা বিরাজ করছে। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) এবং পল্লী বিদ্যুতের মধ্যে লোড বৈষম্য দূর হলে এই সংকট কমবে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বকশীগঞ্জে বিদ্যুতের চরম সংকট: জনজীবনে অচলাবস্থা
তথ্য অনুযায়ী, বকশীগঞ্জে পল্লী বিদ্যুৎ গ্রাহকরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। ঘন ঘন লোডশেডিং আর তীব্র গরমে সাধারণ মানুষের মধ্যে হাঁসফাঁস অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। বকশীগঞ্জে প্রতিদিন গড়ে ১৭ থেকে ২০ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না। এতে সব ধরনের কার্যক্রম, ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে শুরু করে দৈনন্দিন জীবনযাত্রা চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। পরিস্থিতি যদি দ্রুত না বদলায়, তবে আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।
প্রচণ্ড বিদ্যুৎ সংকটে ৭০ হাজার গ্রাহক: প্রয়োজনের অর্ধেকেরও কম বিদ্যুৎ সরবরাহ
বকশীগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আওতায় প্রায় ৭০ হাজার গ্রাহক রয়েছেন। এদের মধ্যে ৯টি ফিডার থেকে সেবা প্রদান করা হচ্ছে। বিদ্যুৎ চাহিদা প্রতিদিন ১৮ থেকে ২০ মেগাওয়াট হলেও সরবরাহ করা হচ্ছে মাত্র ৬ থেকে ৭ মেগাওয়াট, যা চাহিদার অর্ধেকেরও কম। ফলে গ্রাহকদের মধ্যে অসন্তোষ বেড়ে চলেছে।
গ্রাম ও শহরের মধ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহে বৈষম্য: ভুক্তভোগীদের অভিযোগ
ভুক্তভোগীদের মতে, পৌর শহরে গড়ে ১২ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ হলেও, গ্রামাঞ্চলে দিনে ১৭ থেকে ২০ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না। অনেক গ্রামের মানুষ জানে না কখন বিদ্যুৎ আসবে এবং কখন চলে যাবে। এর ফলে কৃষকদের জন্য সেচ কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে, যা রোপা আমন চাষের উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। সেচের জন্য বৈদ্যুতিক মোটর চালাতে না পারায় অনেক কৃষক ইঞ্জিনচালিত শ্যালো মেশিন ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছেন, যা তাদের উৎপাদন খরচ বাড়িয়ে দিচ্ছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের রোগীদের দুর্ভোগ
লোডশেডিংয়ের কারণে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের রোগীরাও চরম ভোগান্তিতে রয়েছেন। বিশেষ করে শ্বাসকষ্ট ও হাঁপানি রোগীদের নেবুলাইজার করা সম্ভব হচ্ছে না। তীব্র গরমের মধ্যে বিদ্যুৎ না থাকায় রোগী ও তাদের স্বজনরা বিরূপ পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছেন। জনসাধারণের মধ্যে এই বিদ্যুৎ সংকট নিয়ে ক্ষোভ ক্রমশ বাড়ছে।
অর্থনৈতিক ক্ষতির শঙ্কা: ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প বিপর্যস্ত
বিদ্যুৎ সংকটে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পও চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। বিশেষ করে ব্যাটারি চালিত অটো রিকশা ও অটো ভ্যান চালকরা পর্যাপ্ত চার্জ না করতে পারায় তারা গাড়ি নিয়ে রাস্তায় নামতে পারছেন না। এতে তাদের জীবিকা চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
পিডিবি ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির লোড বৈষম্য দূরীকরণের দাবি
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বকশীগঞ্জ জোনাল অফিসের ডিজিএম জয় প্রকাশ নন্দী জানান, বিদ্যুতের উৎপাদন ঘাটতির কারণে চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী হলে এবং উৎপাদন বাড়ানো গেলে লোডশেডিং পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে আশা করা যায়।
তবে গ্রাহকরা দ্রুত এই বৈষম্য দূর করে বিদ্যুৎ সরবরাহের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার জন্য কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ দাবি করছেন।
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।