জামালপুর প্রতিনিধি: জামালপুরে তিন বছরের জন্য জমি ভাড়া নিয়ে তা অবৈধভাবে বেদখল করার অভিযোগ উঠেছে। জমির মালিকপক্ষ জায়গা বুঝে নিতে চাইলে উল্টো হামলা, মারধর ও মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
জামালপুর পৌর শহরের খুপিবাড়ী এলাকায় এই ঘটনা ঘটেছে।
জামালপুর পৌর শহরের পাথালিয়া এলাকার মৃত অ্যাডভোকেট মতিউর রহমানের ছেলে জামির অন্যতম মালিক ডা. মো: আব্দুল মোত্তালিব (৬৫) অভিযোগ করে জানান, আমরা সাত ভাই ও চার বোন উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত পৌর শহরের খুপিবাড়ী এলাকার ফুলবাড়িয়া মৌজার অন্তর্গত ৫ একর ৩৬ শতাংশ জায়গার মালিক। ওই জমিতে ৫টি পুকুর ও আবাদী জমি রয়েছে। আমরা জমিটি ভাড়া প্রদানের সিদ্ধান্ত নেই এবং সকল ভাই বোনের পক্ষে আমিসহ আমার চার ভাই মো: মুস্তাফিজুর রহমান (৬২), মো: মঞ্জুরুল আজিজ (৬০), ডা. মো: আশরাফ ফারুক (৪০) ও মো: জাহিদ সারোয়ার (৩৫) জামালপুর পৌর শহরের সিংহজানী হাই স্কুল রোডের মৃত শহিদুল্লাহর ছেলে নূর-এ-আলম সিদ্দিক নুন্নু (৫০) ও দেওয়ানপাড়া এলাকার মৃত মোরাদুজ্জামানের ছেলে আপেল মাহমুদের (৩৫) কাছে গত ২০১৮ সালের ২১ আগষ্ট তিন বছর মেয়াদে জমিটি ভাড়া দেই। ৪ লক্ষ ৫০ হাজার টাকায় জমিটি ভাড়ার চুক্তি হলেও তারা ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা পরিশোধ করে এবং বাকি টাকা আর পরিশোধ করেনি। চুক্তির মেয়াদ গত ২০২১ সালের ৩১ আগষ্ট শেষ হলেও তারা ভাড়ার টাকা পরিশোধ ও জমি বুঝিয়ে দিতে তালবাহানা শুরু করে এবং তারা ভূয়া দলিল তৈরি করে জমির মালিকানা দাবী করে। ভূয়া দলিল তৈরি করায় নূর-এ-আলম সিদ্দিক নুন্নু ও আপেল মাহমুদের বিরুদ্ধে মো: মঞ্জুরুল আজিজ ২০২২ সালের ২৯ মে ময়মনসিংহ অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জালিয়াতি মামলা দায়ের করেন। মামলায় সিআইডি’র তদন্তে ভূয়া দলিলের বিষয়টি আদালতের কাছে প্রমাণিত হয় এবং তাদের জেলহাজতে পাঠানো হয়, বর্তমানে তারা অস্থায়ী জামিনে রয়েছে। এরপর নূর-এ-আলম সিদ্দিক নুন্নু ও আপেল মাহমুদ জমি ভাড়া নিয়ে অবৈধভাবে দখলে রাখা ৫টি পুকুরে নিজেরাই বিষ প্রয়োগ করে পুকুরের মাছ মেরে আমাদের নামে হয়রানিমূলক মামলা দায়ের করে। এই ঘটনার পরে আমরা জমি দখলে নিতে গেলে তারা আমাদের মারধর করে এবং উল্টো আমাদের নামে মারধরের মামলা দায়ের করে। তাদের আত্মীয়-স্বজন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত থাকায় এতদিন তারা রাজনৈতিক প্রভাবে আমাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মামলা দায়ের করে হয়রানি ও জমিতে প্রবেশে ভয়-ভীতি প্রদর্শণ করে আসছিলো। সরকার পরিবর্তনের পর গত ১৪ আগষ্ট পুলিশ সুপার ও জেলা প্রশাসক বরাবর ন্যায় বিচারের স্বার্থে ও আমাদের জান-মালের নিরাপত্তার জন্য আবেদন করি। এরপর আমরা গত ৮ সেপ্টেম্বর খুপিবাড়ীতে জমিতে প্রবেশ করে সাইনবোর্ড স্থাপন করতে গেলে নূর-এ-আলম সিদ্দিক নুন্নু ও আপেল মাহমুদসহ তাদের সন্ত্রাসীরা জমিতে থাকা খামার ভাঙচুর, আমাদের উপর হামলা ও মারধর করে। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনীর একটি টহল দল ঘটনাস্থলে আসে এবং মো: মঞ্জুরুল আজিজ (৬০), দুলাল সরকার (৩১), মঞ্জুরুল হক মঞ্জু (৩৮), ফারহান ইবনে রশিদ (২০), বিপ্লব (২০), হাফিজুর রহমান (৩০), মোস্তাফিজুর রহমান কাওসার (৬০) কে উদ্ধার করে জামালপুর সদর থানায় নিয়ে আসে ও অন্য আরও চারজনকে গুরুত্বর আহত অবস্থায় জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। তাদের মধ্যে মোস্তাফিজুর রহমান কাওসার যুক্তরাজ্যের স্থায়ী বাসিন্দা এবং তিনি সেদেশের একজন ব্যারিষ্টার। ঘটনার পরের দিন ৯ সেপ্টেম্বর উদ্ধারকৃত ওই সাতজনসহ মোট দশ জনের বিরুদ্ধে নূর-এ-আলম সিদ্দিক নুন্নু জামালপুর থানায় মামলা দায়ের করে এবং আদালতের মাধ্যমে সাতজনকে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়। ঘটনার দিন রাসেল (৪০) লন্ডনে ও নোবেল (৩৫) ময়মনসিয়হে অবস্থান করলেও তাদের উদ্দেশ্যমূলকভাবে আসামী করা হয়েছে, রাসেল গত ১২ আগষ্ট বাংলাদেশ ত্যাগ করে লন্ডনে চলে গিয়েছেন আর নোবেল ময়মনসিংহে ছিলেন। এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে নূর-এ-আলম সিদ্দিক নুন্নুর সাথে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।
জামালপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ মহব্বত কবীর বলেন, মারধর, খামার ভাঙচুর, গরু-ছাগল, মোটরসাইকেল চুরি ও খড়ের গাদায় অগ্নিসংযোগের ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। মামলায় বাদীপক্ষ আসামীদের নাম দিয়েছে, তদন্তে যাদের ঘটনার সাথে সম্পৃক্ততা পাওয়া যাবে না তাদের নাম বাদ দেয়া হবে।
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।