আবদুল জলিল: বন্যা ও খরাপীড়িত উত্তরাঞ্চলের তিনকোটি মানুষের স্বপ্নের একটি প্রকল্পের নাম যমুনা সেতু থেকে কুড়িগ্রাম পর্যন্ত ১৪৬ কিমিঃ বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাধের উপর দিয়ে চারলেন রাস্তা ও নদী শাসন।
এই প্রকল্পটি বিগত ২০১৪ সালে চূড়ান্ত সমীক্ষা শেষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) সভায় উঠানো হয়েছিলো। কিন্তু সে সময়ের প্রধানমস্ত্রীর নারাজির কারণে এই প্রস্তাব আর আলোর মুখ দেখেনি। ফলে বহুল প্রত্যাশার এই প্রকল্পের কার্যক্রম পিছিয়ে গেছে। একইসোথে এই প্রকল্পকে ঘিরে সংশ্লিষ্ট এলাকায় আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও পরিবর্তনের সম্ভাবনা যে তৈরী হয়েছিল, তা থমকে গিয়েছিলো বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।
আরও পড়ুন:
সেসময়ে প্রকল্পের অর্থ যোগান দাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, একনেক সভায় প্রকল্পটি অনুমোদন পেলে কাজ শুরু হতো। কয়েক ধাপে এই প্রকল্পের জন্য ১৬ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে বলে জানা য়ায়। পাকিস্তান আমলে ১৯৬৫ থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত নির্মিত ওয়াপদা বাঁধের উপর দিয়ে এই রাস্তার নির্মাণ কাজ শুরুর চেষ্টার অংশ হিসেবে বিশ্ব ব্যাংকের উচ্চ পর্যায়ের একাধিক প্রতিনিধি দল ২০১৩ সালে পৃথকভাবে কয়েকবার কাজিপুর এবং সারিয়াকান্দির নদীশিকস্তি মানুষের সাথে মতবিনিময় করেছেন। সূত্রে আরো জানা যায়, যমুনা নদীর তীর সংরক্ষণ ও উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় কয়েক ধাপে ১৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের এই প্রকল্পটিতে যেসব কর্মকান্ড বাস্তবায়ন করা হবে তা হচ্ছে –
যমুনা সেতু থেকে তিস্তা নদী পর্যন্ত বাঁধ ও পাশে ১৪৬ কিমিঃ রাস্তা নির্মাণ,
কুড়িগ্রাম জেলায়-যমুনার পাড়ে ৩৬ কিমিঃ বাঁধ পুনরাকৃতিকরণ,
যমুনার পাড়ে ৫০ কিমিঃ রিভেটমেন্ট নির্মাণ,
নির্মিত নদী-সংরক্ষণ কাজের ৩৩.৫ কিমিঃ মজবুতিকরণ,
৪৪টি রেগুলেটর নির্মাণ এবং ১টি তিস্তা সেতু নির্মাণ।
সরকারের একাধিক উচ্চ পর্যায়ের সূত্র এই প্রকল্প সম্পর্কে জানিয়েছে, বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত নদী শাসনের লক্ষ্যে যত প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে এই প্রকল্প সেগুলোর চেয়ে অনেক বেশি টেকসই হবে। প্রকল্পের দু’পাশে গড়ে উঠবে নানা পর্যটন কেন্দ্র, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। নদীপথে পণ্য পরিবহনের জন্য বন্দরের মতো করে ঘাটি তৈরি করা হবে। এতে করে পরিবহন ব্যয় অনেক কমে আসবে। যমুনা পাড়ের মানুষেরা সারাবছর এই প্রকল্পের মাধ্যমে নানাভাবে উপকৃত হবে। প্রকল্পের জন্য জমি হুকুম দখলের সময় যাতে জমির মালিকেরা ন্যায্যমূল্য পায় এবং হয়রানির শিকার না হয় সে লক্ষ্যে একটি মতবিনিময় সভায় স্থানীয় জনগণ তাদেও বাড়ি বা জমির পরিবর্তে যমুনা পাড়েই নতুন করে বসবাসের উপযোগী ঘরবাড়ি নির্মাণ করে দেবার দাবী জানালে তৎকালিন স্বাস্থ্যমন্ত্রী এই প্রকল্পের জন্য আয়োজিত মতবিনিময় সভায় বলেন, বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত নদীশাসনের লক্ষ্যে যত প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে এই প্রকল্প তার চেয়ে অনেক বেশি টেকসই হবে। এই প্রকল্প নদী তীরবর্তি মানুষের মনে আশার সঞ্চার করবে। ইতোপূর্বে যারা শুধু একের পর এক নদীভাঙনের কবলে পড়ে নিঃস্ব হয়েছে, তারা এই নদীকে শাসন করে এবং তাকে কাজে লাগিয়েই পরিবার পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকবে। আর দুপাশে গড়ে উঠবে নানা পর্যটন কেন্দ্র, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। নদীপথে পণ্য পরিবহণের জন্য বন্দরের মতো করে ঘাট তৈরি করা হবে। এতে করে পরিবহণ ব্যয় অনেক কমে আসবে। যমুনা পাড়ের মানুষেরা সারাবছর এই প্রকল্পের মাধ্যমে নানাভাবে উপকৃত হবে। এই প্রকল্পের জন্য জমি হুকুম দখল করা হয়েছে। এতে করে জমির মালিকেরা যাতে ন্যায্যমূল্য পায় এবং হয়রানির শিকার না হয় সে বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া হবে বলে তিনি জানান। মতবিনিময় সভায় সাধারণ জনগণ তাদের বাড়ির জমির পরিবর্তে যমুনা পাড়েই নতুন করে বসবাসের উপযোগি ঘরবাড়ি নির্মান করে দেবার দাবী জানালে সেই দাবীও বাস্তবায়নের আশ্বাস দেয়া হয়। এই কাজে তিনি সহযোগিতা করার জন্য নদী তীরবর্তী মানুষদের আহবান জানান।
এই সভার পরে প্রকল্পকে ঘিরে সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, কুড়িগ্রাম জেলার তিস্তা, ব্রক্ষপুত্র ও যমুনা নদীর পশ্চিম তীর এলাকায় বসবাসকারী লক্ষ লক্ষ মানুষ যেভাবে উন্নয়নের স্বপ্নে বিভোর হয়ে পড়েছিল, একনেকে প্রকল্পটি চুড়ান্ত অনুমোদন না পাওয়ায় তাদের সেই স্বপ্নটি এখন ফিকে হয়ে গেছে। পাশ না হবার কিছু কারণ সেসময়ে চিহ্নিত করা হয়েছিলো।যেমন, প্রকল্পে
মাত্রাতিরিক্ত কনসালটেন্সি ফি,
নদী ড্রেজিং এবং নদী তীর সংরক্ষণের যথোপযুক্ত ব্যবস্থা না থাকার কারণেই সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের আপত্তির মুখে প্রকল্পটি তখন পাস হয়নি।
তবে নিকট ভবিষ্যতেই এটি পাস হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
এখন সময় পরিবর্তন হয়েছে। সরকার বদলেছে। আর সময়ের এই পরিবর্তনের সাথে সাথে এই প্রকল্পটিকে ঘিরে যমুনা পাড়ের কয়েক জেলার মানুষ আবারো নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে এই প্রকল্পের আলোচনা একেবারে গ্রামের চা স্টল থেকে শুরু করে উচ্চ পর্যায় পর্যন্ত আলোচনা চলছে বলে সূত্রে জানা গেছে।দলমত নির্বিশেষে সবারই এক দাবী এই প্রকল্পের বাস্তবায়নে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অর্থ বরাদ্দ ও ছাড়ের ব্যবস্থা করতে হবে।
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।