শফিকুল ইসলাম: তীব্র ¯্রােতের কারনে আবারো ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। এতে শতশত একর ফসলি জমি ও বসতবাড়ি নদের গর্ভে বিলিন হচ্ছে।
গত এক মাসে চরশৌলমারী ও বন্দবেড় ইউনিয়নের নদেও ভাঙ্গনের শিকার হয়ে প্রায় শতাধিক পরিবার নিঃস্ব হয়েছে। বর্তমানে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলো নিকটতম আত্মীয়, চুক্তিভিত্তিক অন্যের জমি বন্দক ও বিভিন্ন রাস্তার পাশে আশ্রয় নিয়ে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন। জরুরি ভিত্তিতে তাদের পূণর্বাসনের ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন সচেতন মহল।
মঙ্গলবার (১৭ জুন) কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী উপলোর বন্ধবেড় ও চরশৗলমারী ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে ১৩ টি গ্রামের ৩৯টি বসতবাড়ি, মসজিদ, রাস্তাঘাটসহ শতাধিক একর ফসলি জমি ব্রহ্মপুত্র নদে বিলিন হয়েছে এবং হুমকির মুখে পড়েছে নদীপাড়ের প্রায় শতাধিক ঘড়বাড়ি, মসজিদ, রাস্তাঘাটসহ কয়েকশ একর ফসলি জমি। এদিকে ব্রহ্মপুত্র নদের অস্বাভাবিক ভাঙ্গনে দিশেহারা হয়ে পড়েছে নদের তীরবর্তী এলাকার মানুষ। তবে কুড়িগ্রাম পানিউন্নয়ন বোর্ড বলছে, বরাদ্দ না থাকায় ভাঙ্গন কবলিত এলাকাগুলোতে কাজ করতে পারছি না।
ব্রহ্মপুত্র নদের গর্ভে বিলিন হচ্ছে সুখের বাতি, ইটালুকান্দা, সাহেবের আলগা, চর গেন্দারআগলা, চরঘুঘুমারী, ঘুঘুমারী, খেরুয়ারচর, সোনাপুর, চর সোনাপুর, পূর্ব খেরুয়ারচর, পূর্ব খেদাইমারী, বাইসপাড়া, ফলুয়ারচর, পারের চর ও গোয়ালের চর সহ প্রায় ১৩ টি গ্রাম।
আরও পড়ুন:
নদী ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্থ ইউনুস আলী কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, বাপ-দাদার যেটুকু জায়গা ছিল তা নদীতে ভেঙ্গে গেছে। আমার আর কিছুই নাই। এখন পর্যন্ত কোন সাহায্য পাই নাই।
আবু বক্কর সিদ্দিক জানান,জমি-জমা ও বসতবাড়ি নদীতে ভাঙ্গি গেছে। বউ বাচ্চা নিয়ে রাস্তায় অনেক কষ্টে আছি। আমরা একটু থাকার জায়গা চাই সরকারের কাছে।
বৃদ্ধা মোছা. লালভানু বলেন, আমগোরে রিলিভ লাগবো না, আমাগোরে থাহার জায়গা দেও। ।
চর শৌলমারী ইউনিয়নের সাবেক মেম্বার আবু সাঈদ বলেন, আবারো ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। এতে অনেক জমি, রাস্তা ঘাট ভেঙ্গে নদীতে গেছে। দ্রæত নদীভাঙ্গনরোধের কাজ না করলে ভয়াবহ পরিস্থির সৃষ্টি হবে। সরকারের কাছে আমাদের জোরদাবী ব্রহ্মপুত্র নদীটির ভাঙ্গনরোধে জরুরী ভাবে ব্যবস্থা নিবেন।
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ব্রহ্মপুত্র নদীর ভাঙ্গনরোধে স্থানীয় প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডে অনেক আবেদন দেওয়া ছিল। অনেক কর্মকর্তা ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শণ করে গেছেন। কিন্ত এখন পর্যন্ত কোন কাজ হয় নাই। নদী ভাঙ্গনরোধের দাবী জানাচ্ছি।
চরশৌলমারী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান একেএইচএম সাইদুর রহমান দুলাল বলেন, ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙ্গন দিনে দিনে তীব্র হচ্ছে। গত একমাসে চরশৌলমারী ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম, মসজিদ, রাস্তাঘাটসহ শতশত একর ফসলি জমি ব্রহ্মপুত্র নদে বিলিন হয়ে গেছে। এতে করে চরশৌলমারী ইউনিয়নটি রৌমারী উপজেলার মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে দ্রæত কার্যকরি ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী করছি
উপজেলা নির্বাহী অফিসার উজ্জল কুমার হালদার বলেন, ব্রহ্মপুত্র নদে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। অনেক বাড়ি ব্রহ্মপুত্র নদে বিলিন হয়েছে এবং হুমকির মুখে পড়েছে ঘড়বাড়ি, রাস্তাঘাট, ফসলী জমি। তবে ভাঙ্গনের বিষয়ে উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা করে পুণর্বাসন করা হবে।
কুড়িগ্রাম জেলা পানিউন্নায়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো.রাকিবুল হাসান বলেন, ব্রহ্মপুত্র নদের বামতীর ব্যাপক হারে ভাঙ্গছে । বরাদ্দ না থাকায় ভাঙ্গন এলাকাগুলোতে কিছুই করতে পারছি না। তবে এ নদী শাসনের জন্য প্রকল্প প্রস্তাবনা দেওয়া আছে বরাদ্দ আসলেই কাজ করা হবে।
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।